সকল মেনু

মানবতাবিরাধী অপরাধ মামলায় অনেক আসামি পলাতক, কিছু করার নেই তদন্ত সংস্থার

রাকিবুল ইসলাম রাকিব,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: মানবতাবিরাধী অপরাধ মামলায় পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ মনোযোগী নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন মামলায় তদন্ত শুরু হওয়ার পরই অভিযুক্তরা বিষয়টি বুঝতে পেরে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। আর তদন্ত সংস্থার কাছে গ্রেফতারি ক্ষমতা না থাকা ও স্থানীয় পুলিশের গাফিলতির কারণেও অনেক আসামি পালিয়ে যায়। এসব কারণে পলাতক আসামিদের ধরতে তদন্ত সংস্থার কিছু করণীয় নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।

গত জানুয়ারিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু করায় প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ঘটনায় কারও গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মৌখিক নির্দেশও দেয় ট্রাইব্যুনাল।

গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের বেরিয়ে আসে, ট্রাইব্যুনালে ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ৮ মাস আগেই তিনি মারা যান। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া মৃত্যু সনদে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৭ মে ওয়াজউদ্দিন মারা গেছেন। তার মৃত্যুর ৯ দিন পর তাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ আসে ট্রাইব্যুনাল থেকে। এর আগেও পলাতক আসামিদের নিয়ে একাধিকবার এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রসকিউশন অফিসকে।

গত ২৭ জুলাই নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ মিলেছে আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে ৭ জনই পলাতক। শেরপুরের আরও একটি মামলায় চারজন অপরাধীর মধ্যে একজন পলাতক। তদন্ত সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত দেওয়া ৫২টি প্রতিবেদনে ২৫১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে তদন্ত সংস্থা। ২৮টি মামলার রায়ে ট্রাইব্যুনালে দোষী প্রমাণিত হয়েছে ৫৭ জন।এদের মধ্যে পালাতক ২৪ জনই।

প্রসঙ্গত, রায় ঘোষিত মামলার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিলে ৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। চূড়ান্ত রায় শেষে ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়াও আপিলে আরও ১৮ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক  বলেন, ‘এরকম অপরাধে পালিয়ে থাকা আসামি ধরার ক্ষেত্রে সাফল্য নেই পুলিশের। এটা দুঃখজনক। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হওয়ার পরপরই তারা এলাকা ত্যাগ করে।আমাদের হাতে যেহেতু গ্রেফতারের ক্ষমতা নেই সেহেতু আমরা তাদের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য।’

মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন পলাতক আসামি মৃত্যুর পর জানা যায় তিনি নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন।এরকম ঘটনা আরও আছে কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাদের অস্বস্তির কিছু নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে আমরা প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দেব। তারা পলাতক অবস্থায় কোথায় আছে সেটি পুলিশের দেখার দায়িত্ব। আমাদের পক্ষ থেকে আসলে তেমন কিছু করণীয় নেই।’

তদন্ত সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের একেবারে করণীয় নেই তা নয়। তবে এখানে যদি আমাদের হাতে গ্রেফতারি ক্ষমতা থাকতো তাহলে স্থানীয় পুলিশ অবহেলা করার কথা ভাবতো না।’

আসলেই এ ধরনের পরিস্থিতিতে করণীয় কি সে বিষয়ে বলতে গিয়ে প্রসিকিউশনের পক্ষে জিয়াদ আল মালুম  বলেন, ‘যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু সমন্বয়টা সম্ভব হয়নি। যে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি আছে বিষয়গুলো তদারকি করতে তারা নিয়মিত মনিটরিং করেন কিন্তু নতুন মামলাগুলোতেও আমরা পলাতক আসামি পাচ্ছি। এগুলোর দায় তদন্ত সংস্থাও এড়াতে পারে না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top