সকল মেনু

সিটিসেল কি প্রাণ ফিরে পেল ?

রাকিবুল ইসলাম রাকিব,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: সিটিসেলতরঙ্গ (স্পেকট্রাম) ফিরে পেলেও কি প্রাণ ফিরেছে সিটিসেলের? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাগজে-কলমে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সিটিসেল। কিন্তু সংযোগ বন্ধ, গ্রাহক নেই, কর্মী নেই, অফিসও নেই। তাই ফিরে পাওয়া তরঙ্গ আর জীবিত লাইসেন্সই এখন সিটিসেলের সম্বল।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিটিসেল চালু করতে নির্দেশ দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে। একইসঙ্গে সিটিসেলের লাইসেন্স পুনর্বহালের নির্দেশও দেন আদালত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই নির্দেশের পর বিটিআরসি মঙ্গলবারই সিটিসেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন তরঙ্গ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সুফি মোহাম্মদ মঈনউদ্দিনের সই করা চিঠি পাঠানো হয় সিটিসেল কর্তৃপক্ষকে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সিটিসেলকে স্পেকট্রাম ও রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি লাইসেন্স ব্যবহারে পুনরায় অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সিটিসেলের এক কর্মী  জানান, ‘বুধবার (২৬ জুলাই) দুপুরের ঠিক আগে আগে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা সিটিসেল অফিসে গিয়ে স্পেকট্রাম খুলে দিয়ে যান।’ যদিও তিনি জানান, এতে করে কোনও লাভ নেই অপারেটরটির। তার ভাষ্য, ‘কোনও গ্রাহক নেই, চালু নেই কোনও বিটিএস (নেটওয়ার্ক টাওয়ার)। ফলে সিটিসেলের লাইসেন্সটাই কেবল জীবিত রয়েছে।’

ওই কর্মী আরও বলেন, ‘সিটিসেলের পক্ষে সংযোগ চালু করাও এখন কঠিন কাজ। নিজেদের মধ্যে (সিটিসেল টু সিটিসেল) সংযোগ চালু করতে হলেও তাদের বিটিএসগুলো চালু করতে হবে। অন্য অপারেটরের সঙ্গে সংযোগ চালু করতে হলে সেই অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিতে যেতে হবে, চুক্তি করতে হবে আইসিএক্সের (ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ) সঙ্গেও। এগুলো ব্যয়সাধ্যও বটে।’ এত কিছু সিটিসেল নতুন করে করবে কিনা— তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।

সিটিসেলের সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল করিম  বলেন, ‘সিটিসেলে এখন আর কোনও কর্মী নেই। যে দুই-তিনজন আছেন, তারা মালিক পক্ষের আশীর্বাদপুষ্ট। তারাই মূলত এখন দেখভাল করেন।’ তিনি মনে করেন, সিটিসেলের লাইসেন্স বাঁচিয়ে রাখার একটাই উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আর তা হলো— লাইসেন্স কোনও পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেওয়া।

আশরাফুল করিম বলেন, ‘লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলে তো তা কেউ আর কিনবে না। যেনতেনভাবে লাইসেন্স বাঁচিয়ে রাখাও একটা উদ্দেশ্য হতে পারে অপারেটরটির’ অপারেটর হিসেবে সিটিসেলের ফিরে আসার সম্ভানা একেবারে ক্ষীণ বলেও তিনি মনে করেন। তিনি জানান, এর আগে একবার তরঙ্গ ফিরে পেলেও মোবাইল সংযোগ চালু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সেসময় সিটিসেল কার্যালয়, অপারেটরটির চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছেরটিসহ তিনটি বিটিএস চালু হলেও অপারেশনে ফিরতে পারেনি অপারেটরটি। পরে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সিটিসেলের সব কার্যক্রমই বন্ধ রয়েছে।

বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ জুলাই সিটিসেল বন্ধের সময় অপারেটরটির গ্রাহক ছিল সাত লাখের মতো। তবে সক্রিয় গ্রাহক ছিল দুই থেকে তিন লাখ। জানা গেছে, সক্রিয় গ্রাহকদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ডাটা (ইন্টারনেট) ব্যবহারকারী। অপারেটরটি এখন একেবারেই গ্রাহকশূন্য হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে আপাতত নতুন কোনও মোবাইল ফোন অপারেটরের আসার সম্ভাবনা নেই। তবে ফোরজি গাইডলাইনে নতুন একটি অপারেটরের আসার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই একটি সম্ভাবনাই রয়েছে সিটিসেলের। ফোরজি নিলামের আগেই যদি অন্য কোনও পক্ষ সিটিসেলের লাইসেন্স কিনে নেয়, তাহলেও অপারেটরটি নতুন করে কার্যক্রমে ফিরতে পারে। সিটিসেল কর্তৃপক্ষ সে কারণেও লাইসেন্স ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে থাকতে পারে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top