সকল মেনু

জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাবে বদলাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন

আফিফা জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া, বদলে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের ধরন। দেশের কোথাও হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত, আবার কোথাও তা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ তারতম্যও ঘটছে তাপমাত্রার। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এর সবই ঘটছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। সংস্থাটির তথ্য মতে, এ বছর জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন,জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে ঘটছে বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার বৃদ্ধি, হ্রাসের হার।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গত জুন মাসে সারাদেশের সব জায়াগায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়নি। এ মাসে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৩৪৭ মিলিমিটার, কিন্তু ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৫০ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। একই অবস্থা চট্টগ্রাম বিভাগেও। জুন মাসে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। অন্যদিকে, এ মাসে ১৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ কম। এছাড়া রংপুর বিভাগে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১০ দশমিক ১ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এ বছর জুন মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ১ জুন দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু চট্টগ্রাম উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয় এবং ৩ জুনের মধ্যে তা বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এটি কার্যত স্থির থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত সারাদেশের বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ু প্রবাহের সংযোগ ঘটায় ২, ৪, ৫ ও ১১ জুন ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক স্থানে কালবৈশাখী ঝড়, বজ্রঝড়সহ বৃষ্টি হয়। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হয়। এ সময়ে ৪ জুন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা জুন মাসের সর্বোচ্চ তাপামাত্রা। গত ৯ জুন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। এটি ১০ জুন একই এলাকায় ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১১জুন রাতে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। সে সময় ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দমকা, ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়।ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমি ধস ঘটে।

 

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. আরিফ হোসেন বলেন, জুলাই মাসজুড়ে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মাসের প্রথম অংশে সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকাসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের কথা আগে থেকেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। জুলাই মাসে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে কিছু কিছু স্থানে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই দুই মাসেই বঙ্গোপসাগরে এক বা একাধিক মৌসুমী নিম্নচাপের সৃষ্টি হতে পারে।

আরিফ হোসেন জানান, জুলাই ও আগস্ট মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, এ বছর ৬ জুলায় ঢাকায় গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৭ মিলিমিটার, ৭ জুলাই ৯ মিলিমিটার, ৮ জুলাই ১ মিলিমিটার, ১০ জুলাই ৮ মিলিমিটার, ১১ জুলাই ১০৩ মিলিমিটার, ১২ জুলাই ছিলো ২৪ মিলিমিটার।

অন্যদিকে, বিগত বছরগুলো থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, ঢাকা জেলায় ২০১২ সালের জুনে বৃষ্টি হয়েছিল ১৭৫ মিলিমিটার, ২০১৩ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৫ মিলিমিটারে। ২০১৪ সালের জুনে আরেকটু বেশি ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও পরের বছরের একই মাসে তা আরও বেড়ে হয়েছিল ৩৭৫ মিলিমিটার। তবে ২০১৬ সালের জুন মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল কম, মাত্র ২১২ মিলিমিটার। তবে চলতি বছরের জুনে ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়েও ২ শতাংশ বেশি বৃষ্টির দেখা মেলে।

এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে, কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদ ও নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ২৪ ঘন্টায় সামান্য বাড়তে পারে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা এবং কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল আগামী ২৪ ঘন্টা স্থিতিশীল থাকতে পারে। ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর চিলমারী স্টেশনে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ স্টেশনে ৮৪ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দি স্টেশনে ৫৮ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জ স্টেশনে ৭৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. আব্দুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক ভাবে তাপমাত্রায় পরিবর্তন ঘটছে। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব বাংলোদেশেও দেখা যাচ্ছে। আগে মানুষ দীর্ঘ সময় রোদেও কাজ করতে পারতো, এখন অল্পতেই মানুষ ক্লান্ত হয়েছে যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের অস্বস্তি ভাড়ছে, অসুখ বাড়ছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। যে সময়ে বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার কথা, কোন সময় আগে আবার কোনও বছর তা পরে শুরু হচ্ছে।

জলবদ্ধতা প্রসঙ্গে মো. আব্দুর রহমান বলেন, শুধুমাত্রা বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন জলবদ্ধতার মূল কারণ নয়। বৃষ্টির পানি কোথায় যাবে, তার কোন ব্যবস্থা নেই। নগরায়ণের কারণে, জলাশয় ভরাটের কারণে পানি যাওয়ার জায়গা না থাকায় দ্রুত জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top