সকল মেনু

দিল্লির কাছে নয়ডায় কিছু ঘটলেই দোষ ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের !

হটনিউজ ডেস্ক: একসময় মুম্বাইতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনা যেমন এককালে শহরের সব অপরাধের জন্যই বাংলাদেশিদের দায়ী করতো। দিল্লিতেও প্রায়ই যমুনাতীরের বস্তি থেকে বাংলাদেশি উচ্ছেদের ডাক দেওয়া হতো। বহুদিন পর তারই প্রতিধ্বনি করে এখন অভিজাত নয়ডার ফ্ল্যাট মালিকরাও বলছেন, বাংলাদেশিরাই ওই এলাকায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে ! এই ঘটনার সূত্রপাত গত মঙ্গলবার রাতে। দিল্লির উপকণ্ঠে আধুনিক স্যাটেলাইট সিটি নয়ডায় গত কয়েক বছরে যে সব আধুনিক চকচকে বহুতল আবাসন তৈরি হয়েছে, সেখানকার একটি ফ্ল্যাটে বাঙালি মুসলিম গৃহপরিচারিকাকে চুরির অপবাদ দেওয়ার পর তাকে সারারাত মালিকরা ফ্ল্যাটে আটকে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরদিন জোহরা বিবি নামে ওই নারীর স্বামী ও তাদের বস্তির লোকজন গিয়ে ওই ভবনে হামলা করে ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়, ব্যাপক লাঠিচার্জ করে।

গোটা ঘটনায় ‘বাংলাদেশি অ্যাঙ্গেল’ আনা হয় এর পরেই। নয়ডার বিভিন্ন বহুতল সোসাইটির ফ্ল্যাট মালিকদের যে যৌথ সংগঠন আছে, সেই ‘নেফোমা’ (নয়ডা এক্সটেনশন ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যান্ড মেম্বার্স অ্যাসোসিয়েশন) একটি বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘অবৈধ বাংলাদেশিরা’ই তাদের এলাকায় এই ভাঙচুর ও হামলার নামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। অবৈধ বাংলাদেশিদের যেন কোনও ফ্ল্যাটে রান্নাবান্না বা ঘর ধোওয়ামোছার মতো বাড়ির কাজে নিযুক্ত না-করা হয়, সে ব্যাপারেও সদস্যদের সতর্ক করে দেন তারা।

নেফোমা-র সচিব দেবেন্দর তেওয়ারি  জানান, ‘নয়ডা এলাকায় প্রচুর বাংলাদেশি মুসলিম অবৈধভাবে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছেন। ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও জোগাড় করে নিয়েছেন তারা অনেকেই। এখন তারাই ফ্ল্যাটবাড়িতে কাজের নামে ঢুকে চুরি-ডাকাতির পরিকল্পনা করছেন—এমন বহু প্রমাণ পেয়েছি আমরা।’

অবশ্যই নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কোনও প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। তবে তিওয়ারি বলছেন, নয়ডার আবাসনগুলোয় গত কয়েকমাসে অনেক চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেখানে বাংলাদেশি গৃহপরিচারিকারাই জড়িত ছিলেন। কিভাবে তিনি বুঝলেন ওরা বাংলাদেশি, সে প্রশ্নেরও অবশ্য সদুত্তর মেলেনি তার কাছে।

নয়ডা-র পুলিশ প্রধান লভ সিং-ও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, হামলাকারীরা বাংলাদেশি, এমন কোনও প্রমাণ তারা পাননি। বরং তাদের সবার কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণপত্র, যেমন রেশন কার্ড, আধার ইত্যাদি পাওয়া গেছে আর সেগুলো জালও নয়। ফলে পুলিশ অন্তত তাদের ভারতীয় বলেই মনে করছে।

জোহরা বিবি-র পরিবার ও তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনরা সবাই অবশ্য নিজেদের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা এলাকার বাসিন্দা বলেই দাবি করেছেন। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই এলাকা থেকেই রুটিরুজির সন্ধানে তারা বছরদশেক আগে নয়ডায় এসেছিলেন বলে জানাচ্ছেন।

কিন্তু নিজেদের ভারতীয় প্রমাণে তারা যা-ই যুক্তি দিন, নয়ডায় বাংলাদেশিরা ঢুকে পড়ে ফ্ল্যাটবাড়িতে হামলার ছক কষছেন। ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে ঝড়ের বেগে। অনেকেই জেনে বা না-জেনে সে বার্তা ফরোয়ার্ড বা শেয়ার করছেন আর এদিন বিকেলের মধ্যেই ভারতের রাজধানীময় রাষ্ট্র হয়ে গেছে যে, নয়ডার গণ্ডগোলের মূলে অবৈধ বাংলাদেশিরাই!

এই বিষয়ে আক্ষেপের সুরে নয়ড়ার মহাগুন মডার্নের বহুতল সোসাইটির বাসিন্দা অঞ্জন কুমার রায় বলেন, ‘আসলে যখনই দেখা যায় ভারতে বাঙালি মুসলিমদের নিয়ে কোনও গণ্ডগোল হয়, তখনই তাদের বাংলাদেশি বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কারণ এতে জনমত তাদের বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে দেওয়াটা সহজ হয়। কেউ ভেবে দেখে না তারা আসলে পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মুসলিম কি না। মুম্বাই-পাটনা-ব্যাঙ্গালোরে আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, এখন নয়ডাতেও সেটাই করা হচ্ছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top