সকল মেনু

নতুন ভ্যাট আইন এখনই কার্যকর হচ্ছে না

হটনিউজ ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব, ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ, জনগণের ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপের আশঙ্কাসহ নানা কারণে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শেষ মুহূর্তে এবারও নতুন মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে যেতে পারে সরকার। দু’বছরের জন্য আইনটি স্থগিত করা হতে পারে। এতে ১৯৯১ সালের আইনটিই আপাতত অব্যাহত থাকবে। তবে এ আইনের মধ্য থেকেই বাড়ানো হবে ভ্যাটের আওতা ও পরিধি। জোর দেয়া হবে অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা) পদ্ধতির ওপর। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ২৮ জুন জাতীয় সংসদে আলোচনার পর ঘোষণা করা হবে। ’

তিনি বলেছেন, ‘নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হবে। আমরা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করব য়খন বাজেট পাশ হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদে বাজেট অধিবেশন চলাকালে বাজেট সংক্রান্ত বিষয় বাইরে বলার কোন সুযোগ নেই।

ব্যাংক হিসাবে প্রস্তাবিত আবগারী শুল্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন,এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে যখন জাতীয় সংসদে বাজেট পাস হবে। অর্থমন্ত্রী মুহিত ১ জুন তার বাজেট বক্তৃতায় প্রস্তাবিত নতুন ভ্যাট ও সম্পুরক কর আইন ২০১২বাস্তবায়নের কথা বলেন যা শতকরা ১৫ শতাংশ হারে প্রয়োগ করা হবে।

অর্থমন্ত্রী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ কিন্তু ১০ লাখ টাকার বেশি নয়, এমন জমার (ব্যালেন্স) ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রদেয় আবগারী শুল্ক ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা ধার্যের প্রস্তাব করেছেন।
একইভাবে, ব্যালেন্স ১০ লাখ টাকা কিন্তু এক কোটি টাকার বেশি নয় এমন ক্ষেত্রে দেড় হাজার টাকার পরিবর্তে আবগারী শুল্ক আড়াই হাজার টাকা, ব্যালেন্স এক কোটি টাকা কিন্তু পাঁচ কোটি টাকার বেশি নয় এমন ক্ষেত্রে সাড়ে সাত হাজার টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার এবং পাঁচ কোটি টাকার বেশি ব্যালেন্সের জন্য ১৫ হাজারের স্থলে ২৫ হাজার টাকা আবগারী শুল্ক ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পক্ষে থাকলেও ভোক্তা, ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনা করে বেশ কিছু সংশোধনের প্রস্তাব দেন। এমনকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি ঠিক করতে বলেছিলেন। কিন্তু দু’বছর পরও যখন দেখেন নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অসন্তোষ রয়ে গেছে, তখন স্বাভাবিকভাবে তিনি বেশ কিছুটা বিরক্ত, অসন্তুষ্ট।

গত সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নতুন ভ্যাট আইনটি আরও পর্যালোচনার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এর বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশ দেন বলেও জানা গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে একটি সংস্থার ডিভিডেন্ট দেয়ার অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী বৈঠকের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন স্থগিতের ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, আসছে ২৮ জুন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অর্ধেক বলবেন আর বাকিটা তিনি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন।
নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বারবার বলা হচ্ছে, নতুন ভ্যাট আইনে কোনো নিত্যপণ্য বৃদ্ধি পাবে না। তবে সম্প্রতি সিপিডি এক সেমিনারে উল্লেখ করেছে, নতুন ভ্যাট আইনে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে। ফলে এর প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয়ে। ভ্যাটের হার কমানোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী নিজেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এমনকি বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন, ভ্যাটের হার কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু বাজেট ঘোষণায় এর কোনো প্রতিফলন দেখা গেল না। যে কারণে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বেশ কিছুটা সংক্ষুব্ধ। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী সমাজের প্রতিটি স্তর এই নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সর্বশেষ আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব ১৫ শতাংশ ভ্যাটকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চার লাখ ২২৬ কোটি টাকার এ বাজেটে ঘাটতি রয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ ঘাটতি বৈদেশিক ঋণ-সহায়তা ও অভ্যন্তরীণ খাতে ব্যাংকঋণ ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মেটানোর পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে জানানো হয়. ট্যারিফ লাইনের প্রায় ৭৫ শতাংশ পণ্যের আমদানি কিংবা উৎপাদন, সরবরাহ, বিক্রিসহ সকল পর্যায়ে একক হার হিসাবে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপিত হবে। ফলে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বহু জিনিসপত্র ও সেবার ভোক্তা পর্যায়ের ব্যয় বেড়ে যাবে। দেশি ব্র্যান্ডের কাপড়, ভোজ্যতেল, চিনি, সুপারশপ, রড, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল, সোনার গয়না ইত্যাদির দাম বেড়ে যাবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদান গ্যাস-বিদ্যুতের ওপর বর্তমানে ৫ শতাংশ মূসক আছে। নতুন আইনে তা ১৫ শতাংশ হলে ভোক্তা ও উৎপাদক পর্যায়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে সীমিত আয়ের, বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার খরচ বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top