সকল মেনু

এবার চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ‘কড়া নজরদারি’র সিদ্ধান্ত

হটনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য মোটা চালের দাম এখন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য পণ্য চালের লাগামহীন দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে চালের দাম। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের খাদ্য মোটা চালসহ সব ধরনের চাল স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল রয়েছে মাত্র ১ লাখ ৯১ হাজার টন। ২০১১-১২ অর্থবছরের একই সময়ে চালের মজুদ ছিল ৯ লাখ ৯৮ হাজার টন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সময়ে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। এবারই প্রথম চালের মজুদ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে থেকে নজরদারি না থাকায় চালের মজুদ পর্যাপ্ত রাখতে পারেনি সরকার। এ কারণে গত দুই মাস চালের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকারের সংস্থাগুলো। ফলে চাল কিনতে চড়া দাম দিতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর দেশে মোটা চাল সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। আর চিকন চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৬ টাকা কেজি দামে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে সেনা শাসন আমলে চালের এ দর আরো বাড়ে। তবে এবার বর্তমান সরকার চালের দাম নিয়ন্ত্রণে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে।

আজ রবিবার রাজধানীর রামপুরা ও মেরাদিয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের প্রধান খাদ্য মোটা চাল স্বর্ণা প্রতিকেজি ৫০ টাকা, পাইজাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা, চায়না ইরি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পারিজা ৫০ টাকা, বিআর২৮ ৫০ টাকা, মিনিকেটে একটু ভাল মানের ৫৮-৬২ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৪-৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, বাসমতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, কাটারিভোগ ৭৮ টাকা, হাস্কি নাজির চাল ৫৪ টাকা এবং পোলাও চাল খোলা ৯০-১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

চালের এই দাম বিগত বছরের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় কষ্টের মধ্যে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষসহ স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো। বাজারে চালের এই দাম বৃদ্ধিকে বলা হচ্ছে ‘অস্বাভাবিক’।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে চালের দাম একটানা বাড়িয়ে অতি মুনাফা করছেন। এ জন্য চালের বাজার কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে দশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হাওরাঞ্চলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারাদেশে প্রত্যাশিত পরিমাণ বোরো ফসল উৎপাদিত হয়েছে। নতুন ধানও বাজারে এসেছে।

এসব কারণে সরকার মনে করছে, চালের সংকট এমন পর্যায়ে যায়নি যে এভাবে লাগামহীনভাবে দাম বাড়বে। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, চালের দাম এত বাড়ার কথা নয়। তাই স্বভাবতই চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরকারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। এ জন্য ধান ছাঁটাই, চালের মজুদ, বাজারে চাল সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি ‘কঠোরভাবে নজরদারি’র নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, মজুদের সংকট কাটাতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্যে মূলত দায়ী করছেন চালের ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে পরোক্ষভাবে তিনি বলেছেন, দুঃসময়ে যারা পাশে থাকে না সরকার তাদের ক্ষেত্রে কোনো অনুকম্পা দেখাবে না। শর্ত না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আর কিছু অসাধু মিল মালিক যোগসাজশ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। মন্ত্রী কামরুল ইসলাম চাল নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিতে গণমাধ্যমকেও দুষেছেন। এ ব্যাপারে তার বক্তব্য হলো, সঠিক সংবাদ পরিবেশন করা ভালো, তবে অতিরঞ্জন অনেক সময় আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যা শুভ নয়। খাদ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের পক্ষ থেকে চালকলের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং দাম কমাতে তাদের চাপও দেয়া হয়েছে। তবে সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে মূলত নির্ভর করছে আমদানির ওপর।

খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিক তার ভিয়েতনাম সফরের সময় তিনি সেখান থেকে চার লাখ টন চাল আমদানির বিষয় চূড়ান্ত করেছেন। এছাড়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকেও চাল আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার চাইছে সব মিলিয়ে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করতে। এ জন্য ধান ছাঁটাই, চালের মজুদ, বাজারে চাল সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি কঠোরভাবে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তালিকাভুক্ত চালকল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তির পর চাল সরবরাহ করছে কি-না তা তদারকি করতে বলা হয়েছে। গুদামে চাল মজুদের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়ে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের গুদাম পরিদর্শন করে তারা সরকারি বিধান যথাযথভাবে পালন করছেন কি-না তা যাচাই করা প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে চালের সরবরাহ অবাধ ও নিরুপদ্রব কি-না তা পরিবীক্ষণ করা দরকার। লাইসেন্সের শর্ত মোতাবেক খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের নিয়মিতভাবে মজুদের হিসাব দাখিল নিশ্চিত করতে হবে। হিসাবের সঠিকতা যাচাই করার জন্য তাদের সংরক্ষণাগার পরিবীক্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, দি কন্ট্রোল অব এসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট ১৯৫৬ ক্ষমতা বলে লাইসেন্সের মাধ্যমে সরকার আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ও চালকল মালিককে ধান-চাল মজুদের সর্বোচ্চ পরিমাণ ও মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এরপরও এ নির্দেশ তারা সঠিকভাবে অনুসরণ করছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে চালকল মালিকদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চাল নিয়ে কারসাজি করছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কি-না তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা চাল না দিলে জরিমানা গুনতে হবে। প্রয়োজনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তবে একটি সূত্র জানায়, এমন খবরে চালকল মালিকরা সরকারকে চাল সরবরাহে অনেকটা আনাগ্রহ দেখাচ্ছে। আর এতেই খাদ্যশস্য অভিযান সংগ্রহে ভাটা পড়েছে।
জানা গেছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে ২২ হাজার ৪৬৩ চালকল মালিকের সঙ্গে বোরো চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা সরকারি গুদামে ৮ লাখ টন চাল সরবরাহ করবে। কিন্তু ঘোষণার একমাস সময় পেরিয়ে গেলেও গুদামে ঢুকেছে মাত্র ৭ হাজার ২৭৮ টন চাল। চাল সংগ্রহের জন্য খাদ্যমন্ত্রী নিজে উত্তরাঞ্চলে মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরও খাদ্যশস্য সংগ্রহে কাঙ্ক্ষিত গতি আসেনি।

 

খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন, আমদানি করা চাল ৩০ জুনের মধ্যে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।

চালের দাম দাম বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বর্তমানে যে সরকারি পর্যায়ে চালের মজুদ এটা অনেক কমে গেছে। একই সাথে সাম্প্রতিক যে বোরো সময়টাতে ফসলের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একটা ব্যহত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি হাওরে একটা বড় ক্ষতি হয়েছে আর ব্লাস্টের কারণে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। সার্বিকভাবে এটা ১০ থেকে ১১ শতাংশের একটা ক্ষতির আশঙ্কা আছে। সেই ক্ষতির প্রেক্ষিতে এখন বাজারে যেটা আছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।’

গবেষকরা দেখছেন ১০ টাকায় চাল বিক্রিসহ সরকারি নানা খাদ্য কর্মসূচী নিলেও পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা হয়নি। সরকারি চালের মজুদ গত বছর এ সময় ছিল প্রায় ছয় লক্ষ টন, এবার সেটি দুই লাখ টনেরও নিচে।

আর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ থাকায় চাল ব্যবসায়ীরাও বেশি পরিমাণে চাল আমদানি করছেন না।

মিল মালিকদের বক্তব্য :
বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ সমকালকে বলেন, সরকারের গুদামে মজুদের সঙ্গে বাজার দামের কোনো সম্পর্ক নেই। ১৫ টাকা কেজি দরে সামান্য চাল বিক্রি করে বাজার দামে তেমন হেরফের হয় না। কিন্তু এবার ধান উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে মিল মালিকদের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

তিনি বলেন, সরকার বা মিল মালিক ইচ্ছা করলে বাজার দাম হেরফের করতে পারে না। মিল মালিকরা বলেন, এখন মোটা চালের বস্তা ১৯৫০ টাকা। এতে প্রতি কেজি ৩৯ টাকা পড়ে। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে এই দাম বেড়েছে। এখন প্রতি মণ ধান ৯৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় ৮০ টাকা। প্রতি মণ ধানে ২৫ কেজি চাল পাওয়া যায়। এতে অবশ্য খুদ আর কুঁড়া থেকে উৎপাদন খরচের একটি বড় অংশ উঠে আসে।

বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাওসার আলম খান বলেন, ‘এক কেজি চাল ইমপোর্ট করলে আমার ট্যাক্স আসে কেজিতে নয় টাকা। আমি যদি এক হাজার টন ইমপোর্ট করি তাইলে আমারতো ৯০ লাখ টাকা শুল্ক দিতে হয়!’

অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও আপৎকালীন পরিস্থিতি সামল দিতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহেও খাদ্য মন্ত্রণালয় আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। চলতি বছর প্রতিকেজি চাল ৩৪ টাকা করে সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু চালকলের মালিকরা তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে চালকল মালিকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও মিল মালিক সমিতি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা প্রতিকেজি চালে আরও ৪ টাকা বেশি চান। বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, উৎপাদন খরচ দিলেই আমরা সরকারি গুদামে চাল দিতে রাজি আছি। এক কেজি ধান কিনে তা মিলে ভাঙিয়ে চালে পরিণত করতে হলে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা খরচ হয়। তাই লোকসান দিয়ে ৩৪ টাকা কেজিতে চাল দেওয়া সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে চাল বিক্রির লাইসেন্স পেয়েছেন। লাইসেন্স দেওয়ার সময় অনেকের ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়নি। রংপুরের তারাগঞ্জ এলাকায় চালকল নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই অথচ চাতাল দেখেই অনেককে চাল সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

শুধু রংপুর নয়, দেশের শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরবঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়া অনেকেই লাইসেন্স পেয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী চালকল মালিক হিসেবে লাইসেন্স নিতে হলে ব্যবসায়ীদের ধান-চাল শুকানোর চাতাল, চালকল, বিদ্যুৎ সংযোগ, গুদাম ব্যবসার অনুমতিপত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র ও আয়করের কাগজপত্র থাকতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব শর্ত পূরণ হয়নি। এখন এসব চাতাল মালিকরা খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অথচ অতীতে বাজারমূল্য থেকে বেশি দামে তারাই চাল বিক্রির সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার বাজার পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে।

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাত। বলা হয় বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এমনকি চাল রফতানিও করা হয়েছে। কাজেই চালের দাম বৃদ্বির তথ্য কেবল কষ্টই বাড়ায় না, দাম বাড়ার কারণে যারা কম ভাত খান সেসব খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষের দুঃখভরা মুখটিও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হাওরে বন্যা হয়েছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। ধানের উৎপাদন ভালো হয়নি। তাই বলে চালের দাম এতটা বাড়তে পারে না। তাছাড়া ধান উৎপাদনে হাওরের অবদান ১০ থেকে ১২ শতাংশ। কৃষকের হাতেও এখন বেশি চাল নেই। সব চাল এখন মজুদদার, চালকল মালিকদের গুদামে। এমনটাই সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়। সরকারের গুদামে চালের মজুদ কম। এর সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ধাপে ধাপে চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চাল আমদানি যতক্ষণ না হচ্ছে, সে সময় অবধি এই অসাধু ব্যবসা চলবে।

চাল আমদানিতে বর্তমানে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ৩ শতাংশ কর দিতে হয়। ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য চাল আমদানি সহজ করার কথা বলা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে কৃষকরা ন্যায্য দাম পাননি। তাদের জন্য সরকার চাল আমদানির শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। এটা ছিল ভালো একটা সিদ্বান্ত। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া ১০ টাকা কেজি কর্মসূচিতে সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ এবং চালকল মালিকদের মজুদদারির কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বন্যা, হাওরের ক্ষতি তো আছেই।

ঢাকার বাবুবাজার আড়তে চালের বস্তা টেনে জীবিকা চালান রাসেল মিয়া। রাসেল বাজারের সবচেয়ে কমদামি মোটা চাল কিনে খান যার দাম এখন কেজি প্রতি ৪৮ টাকা – যা সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চালেন দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে রাসেল বলছিলেন, ‘আমাদের মনে করেন প্রতিদিনের তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি চাউল লাগে। বর্তমানে আমরা রুজি করি ধরেন তিন থেকে চাইরশ ট্যাকা। চাউলেই যদি আমাদের ধরেন দুইশ টাকা যায় গা তাইলে বাজারের ট্যাকা থাকে কইথ্থিকা?’

বাজারের দিনমজুর রাসেলের মতো সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষেরা এখন সংকটে পড়েছেন চালের দাম নিয়ে। সংকটে পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্তরাও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top