সকল মেনু

হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ’র সংবাদ সম্মেলন

হটনিউজ ডেস্ক: লংগদুতে আদিবাসীদের ওপর হামলায় একজনের মৃত্যু ও বাড়িঘর-দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনায় নিন্দা জানাতে এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার দাবীতে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আজ ১৪ জুন ২০১৭, জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
ফোরামের আহবায়ক ও আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া সম্মেলনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ফোরামের সদস্য ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট এর নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এবং কাপেং ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা।
লংগদু ঘটনার তথ্যানুসন্ধানের জন্য ফোরামের সচিবালয় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) থেকে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণে যান এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সাথে কথা বলে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করেন। আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উক্ত প্রতিবেদনের প্রধান দিকগুলো লিখিত বক্তব্য আকারে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। সেই সাথে ফোরামের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবী উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এই লিখিত বক্তব্যটি উপস্থাপন করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সমন্বয়ক আবু আহমেদ ফয়জুল কবির। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পরে ফোরামের সদস্য ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
কাপেং ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, লংগদুর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ১৮৮৯ সালেও একইরকম হামলা, নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী। প্রায় ৩৫ জন মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছিল। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন। সেই ঘটনায় তাঁর ভাই নিহত হন এবং মা গুরুতরভাবে আহত হন। সে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। সেবার আব্দুর রশিদ নামে একজনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা চালানো হয়েছিল, এবার নয়নের হত্যাকান্ডের পর এমন হামলা চালানো হলো। তিনি জানান, কাপেং ফাউন্ডেশনের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শান্তি চুক্তির পর এরকম প্রায় ২০টি ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি। তিনি আরো জানান যে, নয়ন তার ছোটবেলার বন্ধু, তিনি নিজেও চান তাঁর বন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার হোক, প্রকৃত খুনিরা যাতে শাস্তি পায়। কিন্তু তিনি সংশয় প্রকাশ করেন উক্ত ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের একজন তার পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছে যে, তাদের কাছ থেকে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। তিনি আশা করেন যে, এ ঘটনায় কোনো জজ মিয়া নাটক সাজানো হবে না। তাঁর মতে, লংগদুর মতো ঘটনা প্রতিহত করার জন্য প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। পাহাড়ি বাঙালী সম্মিলিত পুলিশ বাহিনী এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা কমাতে পারে। তবে যদিও পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী শান্তি বাহিনীর সদস্যদের পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভূক্ত করার কথা ছিলো কিন্তু তা করা হয়নি। এছাড়াও প্রশাসন বরাবরই নীরব থেকেছে এবং সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছে, প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। হামলার পরবর্তী দোষীদের আইনী প্রক্রিয়ায় আনার দীর্ঘসূত্রিতা, বিচারহীনতা ও আসল দোষীদের সনাক্ত করার কার্যকর উদ্যোগের অভাব আদিবাসীদের উপর হামলা-নির্যাতনের সংস্কৃতিকে চলমান রাখছে।
স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, লংগদুর হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয় বরং বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু-আদিবাসী নিঃস্বকরনের জন্য ক্রমাগতভাবে যে প্রক্রিয়া চলছে তারই অংশ। রাষ্ট্র এসব হামলা নির্যাতন এর ব্যাপারে এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতাই করে যাচ্ছে। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে মৌলবাদী শক্তির ক্ষেত্রে সরকারের সুস্পষ্ট দ্বৈত অবস্থান। এই নিস্ক্রিয়তা, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনকে প্রশ্রয় প্রদানের চর্চা বন্ধ করা না গেলে কখনোই এসব হামলা নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না বলে তিনি অভিমত প্রদান করেন।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সমান অধিকার এর কথা আমাদের দেশে শুধু সংবিধানেই বলা হয়, এর চর্চা যে দেশে নাই তার বড় প্রমাণ লংগদুর মতো ঘটনা। রাষ্ট্র-প্রশাসন সব সময়ই বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শন করছে। পাহাড়-সমতল সব জায়গায় আদিবাসীদের জীবনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রকে মানুষের আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে হবে যাতে আর কোন একজন মানুষকেও গৃহহীন হয়ে পড়তে না হয়, এভাবে অত্যাচারিত হয়ে অসহায়বোধ করতে না হয়।
আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, রাষ্ট্র কতটা গণতান্ত্রিক, কতটা সভ্য কিংবা উন্নত তা উপলব্ধি করা যায় রাষ্ট্রের নাগিরকরা কতটা অধিকার ভোগ করতে পারছে সে চিত্র থেকে। আদিবাসীরে অধিকার খর্ব হয়েছে, তারা হামলা-নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ধরণের ঘটনা ক্রমাগত ঘটেই চলেছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ত হচ্ছে না। তবুও আমরা রাষ্ট্রের উপর আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাই পাহাড়ী-বাঙালী সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে রাষ্ট্র উদ্যোগী হবে। সেই সাথে নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, এনজিও সবাই একত্র হয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তির আশু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করবে। সেই সাথে সকল হামলা-নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করবে।
পরবর্তীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আলোচকরা। এক প্রশ্নের উত্তরে আলোচক পল্লব চাকমা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র বাস্তবায়ন ছাড়া আদিবাসী সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা, ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশের মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কাছে কোন ক্ষমতা হস্তান্তর করনা হয়নি। সেই সাথে বেশ কিছু ক্যান্টনমেন্ট সরিয়ে নেয়ার কথা থাকলে তাও নেয়া হয়নি। এতো হতাশার পরও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এক্ষেত্রে কাজ করবে এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

সংবাদ সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে শীপা হাফিজা বলেন- রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানুষের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া এবং প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের পূনর্বাসনের জন্য অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top