সকল মেনু

আফ্রিকান প্রতারক চক্র এখন দেশে সক্রিয়

আছাদুজ্জামা,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: র‌্যাবের হাতে আটক আফ্রিকান প্রতারক চক্রনানা কায়দায় দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে আফ্রিকান প্রতারক চক্র। কখনও চাকুরি দেওয়ার নাম করে, কখনও লটারি পেয়েছেন এমন এসএমএস বা মেইল পাঠিয়ে, আবার বিদেশ থেকে দামি উপহার পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করছে চক্রটি। এই চক্রের সঙ্গে রয়েছে দেশি এক শ্রেণির প্রতারক।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায়ই বিদেশি এই চক্রের সদস্যরা আটক হলেও ছাড়া পেয়ে আবার একই কাজ করছেন। এসব অপরাধীদের মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, কঙ্গোসহ অন্যান্য দেশের নাগরিক।
র্যা বের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত মে মাস পর্যন্ত র্যা বের হাতে আটক বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১৬০ জন। এদের বেশির ভাগ প্রতারণা, মাদক ব্যবসা, জাল টাকা তৈরি ও বিক্রিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি বিদেশি নাগরিক রয়েছেন ৫৬২ জন। এদের ৪১৪ জন হাজতি (বিচারাধীন) ও ৫৩ জন সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া মুক্তি পাওয়া কয়েদি রয়েছেন ৯৫ জন। আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তারা এখনও ছাড়া পাননি। কারাগারে থাকা এসব বন্দিদের মধ্যে ৩৪৫ জন মিয়ানমারের, ভারতের ১৪৭ জন, পাকিস্তানের ৩৮ জন। এছাড়া অন্যরা বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের নাগরিক।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহররম আলী হটনিউজ২৪বিডি.কমকে বলেন, ‘আফ্রিকান এসব প্রতারকরা বায়িং হাউজের ব্যবসার নামে এবং বিভিন্ন ক্লাবে চুক্তিভিক্তিক খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশে আসেন। এরপর তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাদের অপরাধমূলক কাজে দেশের বাইরে থেকেও অন্য বিদেশিরাও সহায়তা করছেন। একইসঙ্গে দেশীয় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।’
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা নাগরিকদের বিষয়ে কোনও তদারকি না থাকায় এ ধরনের অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব প্রতারকদের গ্রেফতার করে আদালতে তোলার পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যান তারা। একবার জামিনের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন না এই অপরাধীরা।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে আফ্রিকান প্রতারক চক্র ফাঁদ পেতে বসে আছে। নিজেদের উন্নত দেশের নাগরিক পরিচয় দিয়ে তারা মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করেও প্রতারণা করছেন। নারীদের ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে ব্ল্যাক মেইলও করছেন তারা।’
মনিরুল ইসলাম অপরিচিত কারও দেওয়া উপহার বা প্রলোভনে আশ্বস্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। একইসঙ্গে এ ধরনের কোনও অফার আসলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধও করেন তিনি।
আফ্রিকার প্রতারকদের বিভিন্ন কৌশল
এই প্রতারকদের সুক্ষ্ম নানা কৌশলের কারণে অনায়াসেই লাখ লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন অতিথি পরায়ণ বাংলাদেশিরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের নারী কর্মকর্তা বড় ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে আফ্রিকার প্রতারক চক্রের সদস্য বাংলাদেশি নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। নাসির নিজের পরিচয় দেন লেবাননের একটি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে। ব্যাংক কর্মকর্তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে জানান, বাংলাদেশে ফিরে এসে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবেন তিনি। দেশে হাসপাতাল করতে দামী মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও ডলার পাঠাতে চান ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তার নামে।
এর কিছুদিন পরেই ‘শাওন এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পরিচয়ে ফোন করে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জানানো হয়, তার নামে বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে। এটি ছাড়িয়ে নিতে টাকা লাগবে। এভাবে একে একে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।
গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই নাইজেরিয়ানসহ পাঁচ প্রতারককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হলেন- নাইজেরিয়ান অ্যাননিও (২৯) ও ইসি আখ হেনরি (২৯), মাইনুল কবির (২৯ ), নাজিম উদ্দিন (৩৭) ও রুহুল আমীন ওরফে মিঠুন (২৯)।
এছাড়া গত বছরের ৫ ও ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর ও আশকোনা এলাকা থেকে সাত জন বিদেশি নাগরিকসহ আট জনকে আটক করে র্যা ব-৪। আটক ব্যক্তিরা হলেন-উগোচুকু আলফ্রেড (ছদ্মনাম উইলিয়াম), আনুকু ডোনাটুস একওয়েলর, চিদি ইবেউইক, মাইকেল ওনিয়েদিকা এননেজি, ওবুম স্যামুয়েল চুকু দুলু, হেনরি এসিয়াক, আনায়ো ওগাগবা ও আরিফুল।

এই প্রতারক চক্রটি ঝালকাঠির একজন নারীর কাছে এসএমএস পাঠায়, ‘Dear customer Congratulation.’ Your Mobile number won Five Lakh Pound and 51 Inch LED TV from Samsung Lottery, To claim send your name, sex, age, Mobile number and address to…..’ এসএমএস পাওয়ার পর কাউকে কিছু না জানিয়ে লটারির টাকা পাওয়ার পর সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন ওই নারী।
উইলিয়াম নামে এসএমএস বার্তা পাঠানো বিদেশি নাগরিক লন্ডন থেকে পাঠানো পুরস্কারের পার্সেলটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু পুরস্কার পেতে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধে দু’টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। উইলিয়ামের কথা মতো ঝালকাঠির ওই নারী ব্যাংকে টাকা জমাও দেন।
পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর পার্সেল আনতে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন, তার নামে কোনও পার্সেল আসেনি। উইলিয়ামের নাম্বারে বারবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
একইভাবে ভুয়া লটারির নামে প্রতারণার অভিযোগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বারিধারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন নাইজেরিয়ানসহ আট প্রতারককে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তিন নাইজেরিয়ান হলেন, চুকোয়া ইমানোয়েল ওরফে উবেন্না, মাইকেল বাউমনেমি ওরফে ইউজেনি ও ডেভিড ওরফে উচেনিয়া নিকোলাস। এ চক্রের মূল হোতা ডেভিড নাইজেরিয়া থেকে প্রতারণার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে তারা হোয়াটসআপ, ভাইভার, নেট ও আইটেল ডায়ালার প্লাস নামের অ্যাপসগুলো ব্যবহার করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top