সকল মেনু

বাড়বে না দ্রব্যমূল্য: শ্রেষ্ঠতম বাজেট দিয়েছি, অর্থমন্ত্রী

হটনিউজ ডেস্ক : প্রস্তাবিত বাজেট পুরোটাই উজ্জ্বল দাবি করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘মনে হয়েছে, এবার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট দিয়েছি। এ জন্য অনেক কষ্টও করেছি। প্রশাসনের অন্যরাও আমার মতোই কষ্ট করেছেন।’

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব হেতায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সহায়তা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের কোথাও কোনো দুর্বলতা নেই, পুরো বাজেটই উজ্জ্বল। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হলফ করে বলতে পারি। এই বেস্ট বাজেটের জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার আমি করেছি। বাজেট তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারাও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। বাজেটের কোথাও দুর্বলতা আছে বলে আমার মনে হয় না। আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তেলের দাম কমানো হয়নি এ কথা সঠিক না। তেলের দাম কমানো হয়েছে। তবে যে পরিমাণ কমানোর দরকার ছিল, হয়তো সে পরিমাণ কমেনি। এ বিষয়ে আমি আর কোন মন্তব্য করব না। কারণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ এবং টার্নওভার করের সীমা ৮০ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে দেড় কোটি করা হয়েছে। এতে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি টার্নওভার করের সীমা বৃদ্ধি করার ফলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ পাবে। এর ফলে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না বলে আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘এ বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে। আমি বক্তৃতাতেই বলেছি যে প্রত্যেকটা বাজেটই উচ্চাভিলাষী। আগেরবারের চেয়ে পরেরবার কম হয়েছে, এমন একটি বাজেটও নেই। এ কাজটা আমরা সার্থকভাবে করেছি। এভাবেই দেশটাকে উন্নততর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি।’

অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সাথে সংযোজন করে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে বিদ্যমান ৫৩৬টি পন্যের পরিবর্তে ১০৪৩টি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ভ্যাটের বাইরে থাকছে। আশা করি আগামী অর্থবছরে পণ্য মূল্য বাড়বে না বরং অনেক পণ্যের মূল্য কমে যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজেটে দারিদ্র বিমোচনের জন্য ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জেন্ডার সমতায় ২৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে একটি কথা সামনে এসেছে বৈদেশিক সহায়তার আকার একটু বেশি ধরা হয়েছে। মুহিত বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বিপুলভাবে আমরা বৈদেশিক সহায়তা আদায় করছি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আশা করছি সামনে আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়বে। এ বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু এবার একটু রিভিউ বেশিই বাড়াতে হবে।’

ভ্যাটের বিষয়ে মুহিত বলেন, বাজেটে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না। নতুন ভ্যাট আইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্পর্শ করবে না। তিনি দাবি করেন, আগে ৩০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার হলে ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে এই টার্নওভারের পরিমাণ ৩৬ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। এর মানে টার্নওভারের পরিসীমা বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও মধ্যম শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। বড় ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে, যা আগে আরও বেশি দিতে হতো। এখন কম দিতে হবে, তাই দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না।

ব্যাংকে এক লাখ টাকার ওপরে আমানতকারীদের সম্পদশালী দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ব্যাংক হিসাবে নতুন ধার্য করা আবগারি শুল্কের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়বে না। কারণ যারা ব্যাংকে এক লাখ টাকার বেশি রাখবেন, তাদের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে। বড় লোকের ডেফিনেশন (সংজ্ঞা) দেয়া মুশকিল। আমার মনে হয় এক লাখ টাকা পর্যন্ত যার ডিপোজিট আছে, তাকে সম্পূর্ণ ভারমুক্ত রাখা সেটাই যথেষ্ট। তার বেশি যারা আছেন তারা মনে হয় যথেষ্ট সম্পদশালী আমাদের দেশের তুলনায়। সুতরাং তাদের জন্য এটা কোনো সমস্যা হবে না।

ব্যাংক জালিয়াতির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে। আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতে হতো, এখন বেসরকারি ব্যাংকে হচ্ছে’ এই অ্যাজামশন (ধারণা) আমাদের মানতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, চুরিচামারি হয়ই। সবসময় হয়, সব দেশেই হয়। জালিয়াতি হয়তো বা কোথাও একটু বেশি হয়। আমাদের দেশে আগে একটু বেশিই হয়েছিল। এখন আমরা সেটা একটু কমাতে পেরেছি। ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তবে দুই-একটি ব্যাংকে সমস্যা আছে। সমস্যাগুলো সমাধানেরও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

কর্মসংস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যদি এক শতাংশ বাড়ে, তাহলে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এই হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে আমাদের কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকবে না।

বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ সম্প্রসারণে বাজেটারী উদ্যোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, ‘এবারের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ-সরকারের উপলদ্ধি হলো দেশের মোট অর্থনীতির ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগবান্ধব স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের অভাব ছিল। এরপর থেকে এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এর সুফল হিসেবে এ বছর দেশে বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’

তিনি বলেন, এই ৩০ শতাংশ বিনিয়োগের মধ্যে ২৩ শতাংশ বেসরকারি খাতের। এই অবস্থা ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ১১ বার বাজেট উপস্থাপনকারী এই অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাসের দাম কিন্তু আমরা এখন বাড়ায়নি। গ্যাসের দামের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। গ্যাসের দাম ২০১৮ সালে বাড়ানো হবে-যখন আন্তর্জাকিভাবে গ্যাস আমদানি শুরু হবে।’

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে অব্যশই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন-আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। তবে যেকোন বাজেটের উদ্দেশ্য থাকে জনকল্যাণ করা এবং সেই জনকল্যাণ যেন সবার জন্য নিশ্চিত হয়। আমি বাজেটে দেশের সব নাগরিকের জন্য জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলেছি।’

তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোতে প্রণোদনা কখনও দেয়া হবে না। তবে রেমিট্যান্স পাঠানোতে যেসব খরচ হয় তা আর দিতে হবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। মুহিত আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাবে চালের দাম বাড়েনি। হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে চালের দাম খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা হবে। আগে অনেক দিন পরপর এ সুদের হার সমন্বয় করা হতো। এখন এটি প্রতিবছর অন্তত একবার সমন্বয় করা হবে। কারণ বাজারে সুদ হারের থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বৈষম্য হওয়াটা যৌক্তিক নয়। তবে অল্প ব্যবধান থাকবে। বাজারে ৭ শতাংশ আর সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ হবে এটা ঠিক না।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, উচ্চাভিলাষ বা আকাঙ্খা না থাকলে কোন কিছু অর্জন করা যায় না। এজন্য আমাদের সরকার প্রতিবছর উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ শতাংশ এবং মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ শতাংশ। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top