সকল মেনু

আমি ছাড়া সব বিচারকই স্বাধীন: প্রধান বিচারপতি

হটনিউজ ডেস্ক : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, তিনি ছাড়া সব বিচারকই স্বাধীন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর আপিলে দশম দিনের শুনানির একপর্যায়ে আজ মঙ্গলবার এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।

এসময় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা বলেছেন, ‘এখানে যারা আছেন, বিচারকরা সবাই স্বাধীন, আমি ছাড়া। প্রধান বিচারপতি কতটা পরাধীন?’

জবাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপনি পরাধীন নন, প্রতিদিন কাগজ খুললে আপনার অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমিতো প্রেস কনফারেন্স করে কথা বলি না, আমি আমার প্রসিডিংসের মধ্যে থেকে কথা বলি।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে ১০ দিনের মতো শুনানি চলছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন।

ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারনের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এবং সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো এ সংশোধনী প্রত্যাখান করে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।

আবেদনে বলা হয়, এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। কারন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। কিন্তু এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। পরে এই রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হককে এই বিশেষ বেঞ্চে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ মামলার রুল শুনানিতে দেশের শীর্ষ ৫ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে অভিমত নেন আদালত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top