সকল মেনু

চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজার

This Image Gains First Prizeএম শাহজাহান আহমদ,মৌলভীবাজার:যতোদূর চোখ যায় মসৃণ সবুজে ছাওয়া উচুঁ-নিচু টিলা, উপরে বি¯তৃত নীলাভ আকাশ। এদিক ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনাণী আর বর্ণিল সব পাখি। পাঠক, আসুন না ঈদে ঘুরে আসা যাক চমৎকার এই নিসর্গ থেকে। ভাবছেন বেড়াবেন কোথায়? ভাবনার কোন কারণ নেই। বেছে নিন দেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ আপনার পরিচিত একটি নাম। কি পেয়েছেন – হ্যাঁ, মৌলভীবাজার সঠিক নির্বাচনই হয়েছে। কেন সঠিক নির্বাচন হয়েছে জানতে চান, কারন চা বাগান, লেক, হাওর, উঁচু নিচু পাহার, ঘন জঙ্গল, খনিজ গ্যাসকূপ আর আনারস, লেবু, পান, আগর ও রাবার বাগান দিয়ে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম মৌলভীবাজার। শুধু তাই নয় বাংলাশের সবচেয়ে বেশি শীত প্রধান অঞ্চল, সবচেয়ে বৃষ্টি প্রধান অঞ্চল হিসেবেও এ জেলা পরিচিত। বৃষ্টিতে ভিজতে কিংবা কন কনে শীত অনুভব করতে আপনি দুটি মৌসুমেই বেড়াতে আসতে পারেন মৌলভীবাজারে। পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত হয়েছে। পর্যটকদের জন্য রয়েছে অত্যাধনিক সুযোগ সুবিধাসহ প্রায় ৫০টি রিসোর্ট। এছাড়াও জেলা সদও ও শ্রীমঙ্গলে রয়েছে আধুনিক মানের ১০টি আবাসিক হোটেলসহ প্রায় ১৫টি হোটেল। ইতোমধ্যে অধিকাংশ হোটেল মোটেল এবং চা বাগানের রেষ্ট হাউজে অগ্রিম বুকিং শেষ হয়ে গেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুরা যান্ত্রিক শহরের একটু ক্লান্তি দুর করতে চারদিকে সবুজ বনাণী পাহাড়-লেক, জলধারা ও চা বাগান ঘেরা মনোরম প্রকৃতির লীলাভূমি মৌলভীবাজারে ছুটে আসবেন।

এখানে চা বাগান, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, হামহাম জালপ্রপাত, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, জেলা প্রশাসক শিশু পার্ক, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রমেশ রাম গৌঢ় এর ৭ কালারের চা, শ্যামলী পর্যটন, শ্যামলীর ডিপ ফিজাপ এরিয়া, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, রাবার,আনারস, লেবু বাগান, লেক, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, পান পুঞ্জি, ওফিং হিল, বার্নিস টিলার আকাশ ছোয়া সবুজ মেলা, এক মাত্র ঝর্ণা “যজ্ঞ কুন্ডের ধারা”, নির্মাই শিববাড়ী, কমলগঞ্জ মাধবপুর লেক, সিতেশ দেবের বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও দেশের একমাত্র সাদা বাঘ, লাউয়ছড়ায় ভেষজ উদ্ভিদের বাগান, শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত ডিনস্টন সিমেট্রি, ‘চা-কন্যা’র ভাস্কর্য, আদিবাসী পল্লী, হাইল হাওর, বাইক্কা বিলে পর্যটন টাওয়ারসহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

চা বাগানের প্রবেশ করা মাত্রই মনে হবে সত্যি এ যেন এক ভিন্ন পরিবেশ । চারপাশে কেবল সবুজের মেলা মাইলের পর মাইল কেবল সবুজ আর সবুজ , কাটিং করা চা গাছগুলো এতো শৃঙ্খলভাবে বসে আছে কখনো মনে হয় , সাগারের ঢেউ আর কখনো মনে হয় বিশাল কোনো সবুজ মাঠ । মনে হবে কোনো দক্ষ শিল্প যেন মনের মাধুরী মিশিয়ে স্তওে স্তরে সবুজকে সাজিয়ে রেখেছে । চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটি বিশেষ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার ছায়া তরু, যার ডালপালা, শাখা-প্রশাখায় শুনতে পাবেন রঙবেরঙের পাখির কল-কাকলি , শহরের কল- কারখানা, গাড়ির শব্দ ব্যস্ততায় কোলাহল অভ্যন্তদের কাছে এটিকে বর্ণাতীত শ্রুতিমধুর লাগবে । একবারো আপনার মনে আসবে না আপনি ব্যস্ত সভ্যতার মানুষ । কানাডিয়ান ফ্রিল্যান্স লেখক এন্টনি আর ডেল্টন জেলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মৌলভীবাজারকেএ কে এক খন্ড স্বর্গ বলে (স্বর্গের কাছাকাছি ) আখ্যায়িত করেছেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, টি রিসোর্ট, ইকো-কটেজ, বিটিআরআই রেস্ট হাউজ, লাউয়াছড়া বাঙলোসহ অন্যান্য রেস্টহাউজগুলো ঈদের পূর্বেই আগামী ২০ আগষ্ট পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং হয়ে যায়।

শ্রীমঙ্গলের নিসর্গ ইকো কটেজের স্বত্বাধিকারী কাজী শামসুল হক জানান, ৯ আগস্ট থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত তার ইকো কটেজে সবগুলো ভবনই অগ্রিম বুকিং হয়েছে। এদের বেশির ভাগই বিদেশি। এর মধ্যে ব্যবসায়ী, এনজিও এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

নিসর্গ লিচুবাড়ি ইকো কটেজের মালিক মো. শহিদুল হক জানান, তার ইকো কটেজে সব কক্ষ ঈদ উপলক্ষ্যে বুকিং হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড নিয়ন্ত্রিত শ্রীমঙ্গলের টি রিসোর্টের এক্সিকিউটিভ ইনচার্জ একেএম রফিকুল হক জানান, টি রিসোর্টের ১৪টি বাঙলোসহ আইপি, ভিআইপি সবগুলো বাঙলোই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।

এছাড়াও প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীমঙ্গলে বিলাশবহুল ও বিশ্বমানের পাঁচতারা হোটেল Ñ গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ এর নির্মান কাজ শেষ পর্যায়ে। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে নির্মানাধীন এ রিসোর্টটি আগামী বছর চালু হবে বলে জানিয়েছেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার টনি খান। তাছাড়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নিতেশ্বর গ্রামে বাগান বাড়িতে এম নাসের রহমানের ব্যক্তি উদ্দ্যেগে দুসাই হোটেল এন্ড রিসোর্ট লিঃ নামের বেসরকারি উদ্যোগে নির্মানাধীন এ রিসোর্টটি আগামী বছর চালু হবে বলে জানিয়েছেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। রিসোর্টের অভ্যন্তরে টিলাগুলোতে চা বাগান, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য হেলিপ্যাড ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে। আন্তর্জাতিকমানের এই রিসোর্টে সব আধুনিক সুয়োগ-সুবিধা রাখা হবে যাতে আন্তর্জাতিক যে কোনো অনুষ্ঠানে এ রিসোর্ট ব্যবহার করা যায়।

দেশের চায়ের রাজধানী খ্যাত ও অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার জেলায় এই রিসোর্ট স্থাপনের ফলে পর্যটন খাতের বিকাশসহ পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে রাধানগর এলাকায় ১৪ একর উঁচু-নিচু টিলাভূমির ওপর এ রির্সোট গড়ে তোলা হচ্ছে। এক্সার্শন এন্ড রিসোর্টস বাংলাদেশ লিমিটেড বিলাশবহুল এ পাঁচ তারা হোটেল ও রির্সোটটি নির্মাণ করছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বমানের এই পাঁচ তারা হোটেল ও রির্সোটে ৬ তলা ও ৪ তলা বিশিষ্ট দু’টি ভবনে থাকবে ১৬৭টি ছোট-বড় অত্যাধুনিক কক্ষ। এরমধ্যে প্রেসিডেসশিয়াল স্যুট থাকবে ২টি। থাকবে রেঁস্তোরা, বল রুম, কনফারেন্স রুম, গলফ্ কোর্স, ইনডোর এবং আউট ডোর কিডস জোন ও স্পা। এ ছাড়াও ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, লং টেনিস গ্রাউন্ড, থিয়েটার হল, লাইব্রেরি ও ৩৫০ ফুট দীর্ঘ একটি কৃত্রিম লেক তৈরি করা হচ্ছে এখানে। আন্তর্জাতিক মানের ১৫০ ফুট দীর্ঘ একটি সুইমিংপুলও থাকবে এ রিসোর্টে।

রিসোর্টের অভ্যন্তরে টিলাগুলোতে চা বাগান, হেলিকপ্টার উঠা-নামার জন্য হেলিপ্যাড, ৬টি লিফট ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য বিদ্যুতের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হবে। আন্তর্জাতিকমানের এই রিসোর্টে সব আধুনিক সুয়োগ-সুবিধা রাখা হবে যাতে সার্ক সম্মেলনের মত অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক যে কোনো অনুষ্ঠানে এ রিসোর্ট ব্যবহার করা যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top