সকল মেনু

ঝুঁকিতে দেশের অধিকাংশ এটিএম বুথ!

হটনিউজ ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে হ্যাকাররা যখন সাইবার আক্রমণ করছে, ঠিক এমন সময়ও ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের অধিকাংশ অটোমেটেড টেলার মেশিন বা এটিএম বুথ। বাংলাদেশ ব্যাংক এক বছর আগে এসব এটিএম বুথ ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেও দেশের ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরের মধ্যে এটিএম বুথগুলোর মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে বসেছে অ্যান্টি স্ক্যামিং ডিভাইস।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘এটা সত্য যে নির্দেশনার এক বছর পরও শতভাগ এটিএম বুথ ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশকিছু এটিএম বুথে তদন্ত করা হচ্ছে। অ্যান্টি স্ক্যামিং ডিভাইস বসেনি, এমন বুথগুলোতে জরুরিভিত্তিতে ডিভাইস স্থাপনের জন্য বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই নির্বাহী পরিচালক জানান, ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানো হয়েছে যে তাদের প্রায় ৮০ ভাগ বুথেই অ্যান্টি স্ক্যামিং ডিভাইস লাগানো হয়েছে। এটিএম বুথ নিয়ে খুব শিগগিরই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠক করবে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেসব ব্যাংকের এটিএম বুথে এখনও পুরোপুরি অ্যান্টি স্ক্যামিং ডিভাইস লাগানো সম্ভব হয়নি তাদের দ্রুত এই ডিভাইস লাগাতে হবে। গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে যেমন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে, তেমনই এসব সেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের ঝুঁকিমুক্তও রাখতে হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হ্যাকাররা বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথ হ্যাক করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটিএম বুথে স্ক্যামিং ডিভাইস ইস্টার্ন, সিটি, ইউসিবি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪০ গ্রাহকের এটিএম কার্ড নকল করে প্রায় ২১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এর আগে সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নকল করে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা চুরি করা হয়। এছাড়া, ১৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের চারটি বুথ ব্যবহার করে দেড়শটি নকল ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা।

এসব ঘটনার পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসেই এটিএম বুথ ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ওই বছরের ৮ মার্চ আরেকটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে সব এটিএম বুথ ও সাইবার সিস্টেম নিরাপদ করতে বলা হয়। ওই দুই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, নতুনভাবে স্থাপিত এটিএম বুথগুলোয় বাধ্যতামূলকভাবে অ্যান্টি স্ক্যামিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস থাকতে হবে। আগে স্থাপিত বুথগুলোতেও এক মাসের মধ্যে অ্যান্টি স্ক্যামিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস স্থাপনের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা গেছে, সারাদেশে ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৮ হাজার এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি ব্যাংকের ৬ হাজার ৩৩৪টি এটিএম বুথে অ্যান্টি স্ক্যামিং ডিভাইস বসানো হয়েছে। ১৭টি ব্যাংক তাদের বুথে এই ডিভাইস বসাতে পারেনি। তাদের বুথ সংখ্যা ২ হাজার ১১২টি, যা মোট বুথের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।

এদিকে বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোর ৫২ শতাংশই তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক বেশি, আরও ১৬ শতাংশ তথ্যের ঝুঁকি আরও বেশি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top