সকল মেনু

ভারত বানিয়েছে, আমরা ভোগ করবো: প্রধানমন্ত্রী

হটনিউজ ডেস্ক : সাউথ এশিয়ান স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। দেশটির আমন্ত্রণে এই স্যাটেলাইটে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশও। আর এতে বিনা পয়সায় স্যাটেলাইটের সুবিধা পাওয়ার আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি এই আশার কথা বলেন।

ভারত এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্যোগ নেয়ার পর ২০১৪ সালের সার্ক সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে এ উপগ্রহের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এতে সার্কভুক্ত আট দেশের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়া বাকি সবাই এতে অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই স্যাটেলাইটকে দেখছেন সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের জনগণের কল্যাণে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জনগণের উন্নতি সহযোগিতার নানাক্ষেত্রে দেশগুলোর সফলভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর নির্ভর করছে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সন্ধ্যায় গণভবন থেকে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত যৌথ ভিডিও কনফারেন্সের বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও ভারতের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এই ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।

 

আরো বক্তৃতা করেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আশরাফ গণি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী থেসারিং তোবগে, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুম, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা শ্রীসেনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে একটি শান্তিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যেখানে আমরা সুপ্রতিবেশীর মতই বসবাস করে আমাদের জনগণের জন্য গঠনমূলক নীতির বাস্তবায়ন করতে পারি, যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে অনেক সাফল্য অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণ দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর দৃশ্যপট বদলে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশীয় উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারত তাদের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে স্থল, জল এবং আকাশপথ ছাড়িয়ে মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত করলো।

তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত মহাশূন্যে এই সহযোগিতা আমাদের এই অঞ্চলের স্বার্থে আমাদেরকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উচ্চাকাক্সিক্ষ পথে নিয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
তারা বানিয়েছে, আমরা ভোগ করবো: প্রধানমন্ত্রী

ভিডিও কনফারেন্সে ব্ক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত সফরে আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। ওই সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দুই দেশের সম্পর্কে নতুন দিক উন্মোচন করেছে। আজ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবারও যুক্ত হয়ে কথা বলতে পেরে আমি আনন্দিত। এছাড়া, ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেওয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের বন্ধুপ্রতীম সরকারপ্রধানদেরও আমি শুভেচ্ছা জানাই।’

সফলভাবে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করায় আপনাকে এবং আপনার দেশের জনগণকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন আগেই আমরা দুই দেশের মধ্যে মহাকাশ বিষয়ক চুক্তি সই করেছি। আমরা ভূমি ও পানির পাশাপাশি মহাকাশেও এখন সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করেছি। ভবিষ্যতে এই স্যাটেলাইট সহযোগিতার মাত্রা আরও বাড়াবে বলেও আশা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের স্বার্থ এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি নিশ্চিত করতে আমরা এই অঞ্চলের সব দেশের মধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাই।’

এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরও গণভবন থেকে সরাসরি সম্প্রচার চলছিল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভিতে। এ সময় স্যাটেলাইটটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার পাশে থাকা কয়েকজনের কথোপকথন প্রচার হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে এ সময় বলেন, ‘ভালোই হলো, তারা বানিয়েছে, আমরা ভোগ করবো।’

এই স্যাটেলাইটের ফলে টেলি মেডিসিন, টেলি শিক্ষা, আন্তঃসরকার নেটওয়ার্ক, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে জরুরি যোগাযোগ, টেলিভিশন ব্রডকাস্ট ও ডিটিএইচ টেলিভিশন সেবার সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

জিস্যাট-৯ (জিএসএটি) বা দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইটটি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য উপহার হিসেবে ২৩৫ কোটি রুপি ব্যয়ে ভারত সরকার তৈরী করেছে। জিএসএলভি-এফ০৯ শ্রেণীভুক্ত এই উপগ্রহটি ভারতীয় সময় বিকেল ৫টায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ভারতের আইএসআরও’র (ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্স অর্গানাইজেশন) তত্ত্বাবধানে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উপগ্রহটির সফল মহাকাশ যাত্রার ভিডিও ক্লিপও প্রদর্শন করা হয়।

প্রায় ৩ বছর সময় নিয়ে আইএসআরও নির্মিত উপগ্রহটির নিক্ষেপণ যন্ত্রসহ এর ওজন ২ হাজার ২৩০ কেজি।

এই উপগ্রহের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্ট দেশগুলো যোগাযোগ, দুর্যোগকালীন সহযোগিতা, দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ম্যাপিং, টেলি মেডিসিন, টেলি কমিউনিকেশ, টেলি এডুকেশন,তথ্য প্রযুক্তি সহ এক দেশের সঙ্গে অন্যদেশের জনগণের যোগাযোগ এবং দুর্যোগকালীন তথ্য সরবরাহে ব্যবহৃত হবে।

এই উপগ্রহটির মাধ্যমে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোর আরো কাছাকাছি অবস্থানে চলে আসবে বলেই আইএসআরও’র অভিমত।

এই উপগ্রহটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দারিদ্র্য ও অশিক্ষা দূরীকরণসহ পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে এবং আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়ে সহযোগিতা করবে।
এজন্য উপগ্রহের সঙ্গে সংযুক্ত দেশগুলোর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরী করতে হবে, যার মাধ্যমে উপগ্রহটি থেকে ১২ কেইউ-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে সরবরাহকৃত ডাটা গৃহীত হবে।

এ সময় গণভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, ডাক ও টেলিয়োগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ আমন্ত্রিত অতিথি এবং সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top