সকল মেনু

দেখা দিয়েছে হাওরে মানবিক বিপর্যয়, মানুষ ছুঁটছে শহরে

হটনিউজ ডেস্ক : হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাড়ে আট লাখেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বসে গেছে টিকে থাকা শেষ বাঁধটিও। হাওর এলাকায় প্রায় ১৭ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছে এবং ৩০ হাজার হাঁস, ২ হাজার টন মাছ মারা গেছে। এছাড়া প্রায় ১ হাজার টন সবজির ক্ষতি হয়েছে। যা সরকারি হিসেবের চেয়ে অনেক বেশি। এ ধরনের পরিসংখ্যান দিয়ে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা থেকে বলা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির সরকারি হিসেবে অনেক কম দেখানো হয়েছে। মানুষ এখন জীবিকার জন্যে ছুঁটছে শহরে। মানুষ সেখানে কোনো কাজ পাচ্ছে না।

এই বিপর্যয়ে নতুন আতঙ্ক তৈরি করেছে মাছ থেকে শুরু করে গরু ছাগল হাঁস-মুরগির মৃত্যু। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর ত্রাণ তৎপরতার অপর্যাপ্ততা নিয়ে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শহরের দিকে ছুঁটছে।

হাওর অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতির সম্পর্কে ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’র সভাপতি কাশমীর রেজা বলেন, ‘হাওর অঞ্চলের প্রায় ৭৫ ভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মাত্রা আরও ভয়াবহ সুনামগঞ্জে। সেখানে শতভাগ ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে হাওরাঞ্চলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকদের ওপর ঋণের বোঝা চেপে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে নিত্যদিনের খরচ যোগাবেন তা নিয়েই চিন্তিত। অন্যদিকে মাছের মড়ক হওয়ার কারণে বিকল্প উপার্জনের রাস্তাও নষ্ট হয়ে গেছে। তাই তারা হাওরাঞ্চল থেকে শহরের দিকে চলে যাচ্ছেন জীবন ধারণের জন্য।’

সরকারের পক্ষ থেকে হাওরাঞ্চলের ক্ষতির পরিমাণ এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখিত ক্ষতির পরিমাণের পার্থক্য সম্পর্কে কাশমীর রেজা বলেন, ‘সরকারিভাবে যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তার সাথে আমরা পুরোপুরি একমত হতে পারছি না। সরকারি পরিসংখ্যানে যে পরিমাণ ক্ষতির উল্লেখ করা হয়েছে হাওরাঞ্চলে তারচেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে। হাওর এলাকায় প্রায় ১৭ লাখ টন ধান নষ্ট হয়েছে এবং ৩০ হাজার হাঁস, ২ হাজার টন মাছ মারা গেছে। এছাড়া প্রায় ১ হাজার টন সবজির ক্ষতি হয়েছে। যা সরকারি হিসেবে চেয়ে অনেক বেশি।’

এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত’দের কী ধরণের সাহায্য প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন তাদের সবচেয়ে প্রয়োজন আর্থিক সহায়তা। কারণ তাদের অভাবের তাড়না রয়েছে। সরকারিভাবে যে পরিমাণ সাহায্য দেয়া হচ্ছে সেটাও অপ্রতুল। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের যদি বিকল্প কর্মসংস্থান দেয়া যায় তাহলে তারা কিছুটা পরিস্থিতি মোকবেলা করতে পারবেন। এর পাশাপাশি সরকারি সাহায্য সর্বস্তরের মানুষের জন্য বরাদ্দ করা উচিৎ। কেননা, এই সাহায্য কিছু মানুষ পাচ্ছে। যারা মধ্যবিত্ত, লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে পারছেন না তারা সংকটেই রয়ে গেছেন। অন্যদিকে সরকারি সহায়তা দেয়া হচ্ছে উপজেলা সদরে, এর ফলে অনেক দূর থেকে মানুষ এসে উপজেলা সদর থেকে ত্রাণ সহায়তা নিতে পারছে না, যারা নিচ্ছে তাতেও তাদের খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। এর জন্য অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন।’

বেসরকারি সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিতে কেনো এগিয়ে আসছে না?

প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এগিয়ে আসার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।’ হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলের মৃত্যুর ঘটনা নতুন করে বিপর্যয় বাড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না কেন?

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে গবাদি পশুর খাবার। পশুর খাবার সরবরাহ করে চিকিৎসা ব্যবস্থাও যদি নিশ্চিত করা যেতে পারে তবে এ বিপর্যয় কিছুটা মোকাবেলা করা সম্ভব হতো।’

এ অবস্থায় হাওরাঞ্চলের পরিস্থিতি তুলে ধরতে আজ শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে বেসরকারি সংস্থা ‘পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা’।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top