সকল মেনু

আমদানিকারদের নিয়ন্ত্রণে ক্ষতির মুখে চা শিল্প

হটনিউজ ডেস্ক: দেশের এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল চা। নব্বইয়ের দশকে চা রফতানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। এখনও বিদেশে চা রফতানি হচ্ছে। তবে চা রফতানি হলেও এই পণ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে আমদানিকারকদের হাতে। ফলে দেশে উৎপাদিত চায়ের বাজার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে, বলে অভিযোগ চা বাগান মালিকদের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভালো মানের চায়ের উৎপাদন বাড়লেও একটি গোষ্ঠী কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে নিম্নমানের চা এনে বাজার সয়লাব করছে। এ অবস্থায় চা আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড। অবশ্য ইতিমধ্যে এই পণ্যটিকে আমদানি পণ্য হিসেবে পরিচিত করায় দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চা মার খাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চা বাগান মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশীয় চা সংসদ’ এর এক নেতা বলেন, ‘নিম্নমানের চা আমদানি হওয়ার ফলে দেশের বাগানগুলোতে উৎপাদিত চা পাতার দাম কমে যাচ্ছে। ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে নিম্নমানের চা আমদানি করা হচ্ছে। নিম্নমানের চা আমদানির কারণে উৎপাদন খরচের চেয়ে এখন অর্ধেক দামে দেশি চা বিক্রি করতে হচ্ছে।’ নিম্নমানের চা যারা আমদানি করেন তারা অনেক প্রভাবশালী, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, গত ৪ মাসে (২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) দেশে মোট চা আমদানি হয়েছে ৩৬ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ কেজি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা আমদানি করছে মেসার্স এমএম ইস্পাহানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গত ৪ মাসে ২৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৮০ কেজি চা আমদানি করেছে।

এছাড়া, ডেনিশ ফুডস লিমিটেড গেল ৪ মাসে (২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) আমদানি করেছে ৬ লাখ কেজি চা। একই সময়ে শাওন চা কোম্পানি আমদানি করেছে ২ লাখ কেজি চা পাতা। সুপার রিফাইনারি বিদেশ থেকে চা আমদানি করেছে ৩২ হাজার কেজি। কে এ অটো ট্রেডার্স ১ হাজার ৬০০ কেজি। শারমিন হারবাল আমদানি করেছে ১ হাজার কেজি চা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেসার্স আবুল খায়ের কনজিউমার প্রোডাক্ট লিমিটেড মোট ১ কোটি ২৯ লাখ ২৫ হাজার ১০৮ কেজি চা আমদানি করেছে। একই সময়ে মেসার্স এমএম ইস্পাহানি লিমিটেড ৬০ লাখ ৪৮ হাজার ২৪৫ কেজি ব্লাং চা ও ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৩২০ কেজি ব্লেন্ডিং চা আমদানি করেছে। একই সময়ে এসএ কনজিউমার প্রোডাক্টস লিমিটেড ২ লাখ ১১ হাজার ৪০০ কেজি চা আমদানি করেছে। এছাড়া, বেনাপোলের ভাই ভাই ফল ভাণ্ডার নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৫৬ হাজার ৩০০ কেজি ও কপোতাক্ষ টি হাউজ আমদানি করেছে ৪৯ হাজার ৮৬৪ কেজি চা।

আর বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২৮ কোটি ২২ লাখ টাকার চা আমদানি হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ চা বোর্ড মনে করে চা আমদানি বন্ধ হওয়া জরুরি। ইতিমধ্যে চা আমদানি বন্ধ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে আমদানি একেবারে বন্ধ করার সুযোগ কম। অবশ্য শুল্ক হার বাড়ানো ও ট্যারিফ বসানোর মাধ্যমে চা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।’

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চা আমদানি বাড়ছে। ২০১১ সালে চা আমদানি হয়েছিল ৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১২ সালে চা আমদানি সামান্য কমলেও ২০১৩ সালে এই পণ্যটি আমদানি হয় ১০ দশমিক ৬২ মিলিয়ন কেজি। ২০১৪ সালে চা আমদানি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন কেজি। ২০১৫ সালে আমদানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন বেড়ে ১১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি চা আমদানি হয়। ২০১৬ সালে চা আমদানি হয়েছে ৭ দশমিক ৭০ মিলিয়ন কেজি আর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চা আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ১৪ মিলিয়ন কেজি। তবে চা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেশে চা আমদানি করতে হয়নি। এসব বছরগুলোতে প্রচুর চা রফতানি করা হয়েছিলো।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ১৬২টি বাগানে চা উৎপাদন হয়েছে সাড়ে আট কোটি কেজি। প্রতি কাপ চা তৈরিতে দুই গ্রাম চা-পাতা দরকার হয়। এ হিসাবে গত বছরের উৎপাদন হিসাব করা হলে ৪ হাজার ২৫২ কোটি কাপ চা তৈরির সমান চা উৎপাদিত হয়েছে দেশে। তবে এ সময়ে চায়ের চাহিদা ছিল ৮ কোটি ১৬ লাখ কেজি। এই হিসাবে চাহিদার চেয়ে চা উৎপাদন বেশি হয়েছে ৩৪ লাখ কেজি। যদিও এই সময়ে একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি হয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে মোট চা বাগান রয়েছে ১৬২টি। এর সিংহভাগ চা বাগানই সিলেটে অবস্থিত। ২২টি চা বাগান রয়েছে চট্টগ্রামে। দেশে ক্লোন চাসহ উন্নতমানের চা পাতা উৎপাদনে ব্যাপক সক্ষমতা বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top