সকল মেনু

দিল্লি প্রস্তাব দেবে তিস্তা হোক ২০১৯ নির্বাচনের আগে

হটনিউজ ডেস্ক: শেখ হাসিনার এবারের সফরে হচ্ছে না— এটা একরকম নিশ্চিত। কিন্তু ২০১৯ সালে বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে ভারত যেভাবেই হোক তিস্তা চুক্তি সই করবে, সেই আশ্বাসই প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দেবে দিল্লি। এমনকি, তিস্তা চুক্তি এখন না করে তখন করলেই যে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক লাভ বেশি, সেটাও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।গত দু’দিনে দিল্লিতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, বেশ কয়েকজন সাবেক কূটনীতিক ও গবেষকদের। সেই সব আলোচনা থেকেই এরকম ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে যখন ভারতের পার্লামেন্টে বিনা বাধায় স্থল সীমান্ত বিল পাস হয়েছিল, তখন মসৃণভাবে সেটি পাস করানোর ক্ষেত্রে নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছিল দিল্লির প্রথম সারির স্ট্র্যাটেজিক থিংকট্যাংক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন। ওই চুক্তি নিয়ে আসাম বা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক এমপি’রই তীব্র আপত্তি ছিল। কিন্তু তাদের বুঝিয়ে রাজি করিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর অর্থায়নে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি এবারেও তিস্তা চুক্তির এই নতুন ‘টাইমফ্রেম’ নিয়ে সীমান্তের দু’পারে ঐকমত্য তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ যে তিস্তা নিয়ে ক্রমশ ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে যাচ্ছে, সেটা ভারতও উপলব্ধি করছে। আর সে কারণেই তাদেরকে এই ২০১৮’র চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিতে চাইছে দিল্লি।
এরই মধ্যে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী প্রকাশ্যেই বলেছেন, তারা চান তিস্তা চুক্তি কবে হবে, ভারত সেই নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিক। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধিতায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চুক্তি সই করতে পারছে না, এই যুক্তি শুনতে শুনতে তারা যে ক্লান্ত— হাই কমিশনারের বক্তব্যে সেই হতাশাও ধরা পড়েছে। এই পটভূমিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ২০১৮’র ডেডলাইন বেঁধে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দিল্লি। এর জন্য তাদের যুক্তিগুলো কী হবে, কূটনীতির ট্র্যাক ওয়ান আর ট্র্যাক টু’তে সেগুলোও সাজিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ১) এখন যদি তিস্তা চুক্তি সফলভাবে সম্পাদিতও হয়, দু’বছর পর বাংলাদেশের মানুষ সেই সাফল্যের কথা ভুলে যাবে। যেমন— মাত্র প্রায় দু’বছর আগে হওয়া ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তির সাফল্যের কথা অনেকটাই মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে গেছে। ২) এখন থেকে বছর দেড়েক পর যদি তিস্তা চুক্তি করা হয়, তাহলে মানুষের মনে সেই সাফল্যের রেশ থাকবে। শেখ হাসিনা যে ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানি সফলভাবে আদায় করতে পেরেছেন, সেটা নির্বাচনে নিশ্চয়ই তাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। ৩) আবার, শুকনো মৌসুমে চুক্তি করার প্রধান সমস্যা হলো— এই মৌসুমে তিস্তায় এমনিতেই পানি কম থাকে। ফলে চুক্তি হওয়ার পর পরই যদি বাংলাদেশে নদীর প্রবাহে কোনও লক্ষণীয় উন্নতি না দেখা যায়, তাহলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এর বদলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বর্ষার পরই চুক্তি সই করা সম্ভবত রাজনৈতিক বিচক্ষণতার পরিচয় হবে। ৪) এর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তি নরম করানোর জন্যও বেশ খানিকটা সময় মিলবে। উত্তর প্রদেশে বিপুল সাফল্যের পর রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও এখন দু’বছর আগের তুলনায় আরও বেশি শক্তিশালী। ফলে মমতা ব্যানার্জির সরকারের ওপর তাদের চাপ প্রয়োগ করার ক্ষমতাও বেশি। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মমতা ব্যানার্জিকে তিস্তা চুক্তিতে রাজি করিয়ে ফেলা যাবে বলেও তারা আশাবাদী। এই সব অংক আর হিসাবের ভিত্তিতেই এখন তিস্তা চুক্তি নিয়ে ক্যালেন্ডারে নতুন করে দিন তারিখ আঁকছে দিল্লি। আর শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে তাকেও সেই টাইমফ্রেমে রাজি করানোর চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top