সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: ঢাকা চায় গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে সময়ভিত্তিক প্রতিশ্রুতি

আফিফা জামান: বাংলাদেশ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন দিল্লি সফরের সময়ে এ বিষয়ে কাজ শুরু করার একটি সময়সীমা চায় ঢাকা। এছাড়া অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা দ্বিপাক্ষিকভাবে করার ওপর জোর দেওয়াসহ তিস্তা চুক্তি নিয়েও পুনরায় দিল্লিকে চাপ দেবে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের শেষে ভারতের একটি কারিগরী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে।এরপর ঠিক হয় দুদেশের একটি যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি গঙ্গা ব্যারাজের প্রভাব পর্যালোচনা করবে।

গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে এই সমীক্ষা শুরু হয়নি। বাংলাদেশ তাই প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে যৌথ সমীক্ষা এবং প্রকল্প বিষয়ে সময়সীমাভিত্তিক প্রতিশ্রুতি চাইবে।

২০২৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তি শেষ হবার আগে বাংলাদেশ গঙ্গা ব্যারাজ বাস্তবায়ন করতে চায়। ১৯৯৬ সালে গঙ্গা পানি চুক্তি করার সময়ে বাংলাদেশ এ প্রকল্পের বিষয়ে ভারতকে জানিয়েছিল এবং ২০১৪ সালে প্রকল্পের সার সংক্ষেপ হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ ৪০০ কোটি ডলার ব্যয় করে ব্যারাজ নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগী হয়, কারণ ভারত ১৯৭৫ সাল থেকে ফারাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে ৪০ হাজার কিউসেক পানি অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছে।

অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা

গঙ্গা, ব্রক্ষ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকা দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ পানি প্রবাহিত হয় এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত একমত হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন,প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। আমরা সেখানে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতির জন্য ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, এটি দুদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হলে দুদেশের কোনও লাভ হবে না। বর্ষার পানি ধরে রাখার জন্য ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও জানান তিনি।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের  ২০১১ সালে ঢাকা সফরের সময় একটি কাঠামো চুক্তি হয় এবং সেখানে প্রথমবারের মতো অববাহিকাভিত্তিক সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয় ভারত।

অববাহিকাভিত্তিক সহযোগিতার মধ্যে আছে- নদী সংরক্ষণ, মৎস্য, কৃষি, সেচ, পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়াদি এবং এর সবগুলো বিষয়ে দুদেশ একত্রে কাজ করবে। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়েও বিষয়টি জোরালোভাবে আসে।

অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় চীন যুক্ত হবে,সাম্প্রতিক সময়ে এমন এক মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন উপদেষ্টা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ভারত হলো বাংলাদেশের প্রতিবেশী।ঢাকা দ্বিপাক্ষিকভাবে ভারতের সঙ্গে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে এধরনের মন্তব্য অস্বস্থিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিস্তা চুক্তি

২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চরম বিরোধিতার কারণে এটি করা সম্ভব হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন,ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক ভালো না থাকায়, এ চুক্তি সই হবার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি চাইলে এ চুক্তি হতে পারে। কিন্তু ট্র্যাডিশন অনুযায়ী পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার সবসময় একসঙ্গে কাজ করে থাকে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সেদেশে সফর উপলক্ষে একটি নৈশভোজের আয়োজন করেছেন এবং সেখানে মমতা ব্যানার্জিকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।মমতা ব্যানার্জি যদি নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন, তবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন,চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য দুদেশই সমীক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়াদি সম্পন্ন করেছে। সেকারণে ভারত রাজি হলে, এ সফরের সময়েই এ চুক্তি করা সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top