সকল মেনু

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে ১৬ প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকার এমওইউ!

হটনিউজ ডেস্ক,ঢাকা: তৃতীয় দফা ঋণ সহায়তার আওতায় বাংলাদেশকে আরও দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে যাচ্ছে ভারত সরকার। নমনীয় শর্তের এই ঋণে  (এলওসি) বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল সূত্র।

আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপ্রিলে দিল্লি সফরকালেই সেই অর্থ সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ঋণে বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আগেই তাদের প্রকল্প জমা দেয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এ। পরে তা যাচাই-বাছাই করে একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠায় ইআরডি।

সেই সারসংক্ষেপ মতে ১৬টি প্রকল্প এখন অনেকাংশে চূড়ান্ত যার বাস্তবায়নে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। নমনীয় ঋণ (এলওসি) হিসেবে ভারত সরকার থেকে পাওয়া অর্থেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা (এক ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে আগামী ৭ এপ্রিল ভারত গেলে তখন এ সব প্রকল্পে সহায়তার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলেই জানাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা।

তারা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা আনতে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম সমঝোতা স্মারকগুলোতে সই করবেন এমনটাও অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে আছে বলে জানায় সূত্র।

ইআরডি সূত্র জানায়, প্রকল্পগুলোর সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রণালয়ে রয়েছে।  অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সারসংক্ষেপ পড়ে দেখবেন। কোথাও কোনো অসঙ্গতি থাকলে তিনি পরিবর্তন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে সামনে রেখেই এই সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে বলে জানায় ইআরডি সূত্র।

প্রকল্পগুলোর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এর প্রায় সবগুলোই আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট। বিশেষ করে- রেল, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, সড়ক পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নৌ-পরিবহন, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ নানা খাতের উন্নয়ন বিষয়ে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে।

অারেকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায় ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টির বিষয়ে এরইমধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ডলার।

প্রকল্পগুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে- বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম। যার আওতায় নতুন ধলেশ্বরী-পুংলি-বনসাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গাও খনন করা হবে।

এছাড়া রয়েছে- আশুগঞ্জ নৌরুট খনন, পায়রা বন্দরের বহুমুখি টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ডুয়ালগেজ রেলপথ নির্মাণ, স্থল বন্দরের শুল্ক স্টেশনের আধুনিকায়ন, ঈশ্বরদীতে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন।

এর বাইরে তালিকায় রয়েছে আরও ১১টি প্রকল্প। যার মধ্যে থেকে  আরও আটটি চূড়ান্ত করার সম্ভাবনা আছে বলে জানায় ইআরডি সূত্র।

এসব প্রকল্পের মধ্যে অগ্রাধিকারে রয়েছে- মোল্লার হাটে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ,  ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী শহরের সড়কজুড়ে এক লাখ করে এলইডি সড়ক বাতি স্থাপন, শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত তেল সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প।

চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণে ড্রাই ডক নির্মাণ, ফেনী-বেলুলিয়া রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা ও চট্টগ্রামে যানজট কমাতে ফ্লাইওভার নির্মাণ, বেনাপোল থেকে যশোর হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের রামগড় থেকে বারুয়ারহাট পর্যন্ত চার লেন নির্মাণ এবং কুমিল্লা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়ক চার লেন প্রকল্প অগ্রাধিকারে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে কানেকটিভিটি যে গুরুত্ব পাবে তা ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকের পর সাংবাদিকদেরও জানিয়েছেন।

এর আগে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নয়ন এই সফরে গুরুত্ব পাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ভারত  ১০০ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা দেয়। যার মধ্যে অনুদান ছিল ২০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ৮০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ৭০ কোটি ডলারই রেলখাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। এ ঋণে বাংলাদেশে মোট ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, এর মধ্যে ১৪টি প্রকল্পই রেল সংক্রান্ত।

এর পর ২০১৫ সালে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক ঢাকা সফরে এসে ১৪টি প্রকল্পের আওতায় দুই বিলিয়ন ডলার (২০০ কোটি ডলার) নমনীয় ঋণ (এলওসি) দেয়।

এবার হতে যাচ্ছে তৃতীয় এলওসির সমঝোতা।

তৃতীয় এলওসি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান  বলেন, ‘ভারত যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে ছিলো এখনও নানাভাবে আমাদের সহযোগিতা করে আসছে। ভারত সরকার বাংলাদেশেকে এলওসি’র আওতায় মোট পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেবে। এরই মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসি’র আওতায় মোট তিন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এবার বাকি দুই বিলিয়ন ডলারের প্রত্যাশা করছি।’

ভারতের দেয়া এই সহজ শর্তের ঋণ ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হবে। এতে ১ শতাংশ হারে সুদ ধরা হয়েছে। আর প্রথম পাঁচ বছরকে গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ধরা হয়েছে। যে সময়ের মধ্যে কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top