সকল মেনু

বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের উল্লাস

হটনিউজ ডেস্ক: ২০১৫ বিশ্বকাপের ঠিক আগে এক ব্রিটিশ সাংবাদিক কোয়ার্টার ফাইনালের ‘লাইনআপ’ করেছিলেন। কন্ডিশন ও দলের পারফরম্যান্সের বিবেচনায় যে লাইনআপ করেছিলেন, সেখানে তিনি বাংলাদেশকে  রাখেননি। না রাখার ব্যাখ্যা ছিল এমন, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে উপমহাদেশের দলগুলো খুব ভুগবে, যে তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে সবার উপরে!’

সাংবাদিক ভদ্রলোকটি কিন্তু শেষ আটে রেখেছিলেন ইংল্যান্ডকে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ইংলিশদের ভালো করার ভবিষ্যদ্বাণীও ছিল তার ওই লেখায়। কিন্তু তিনি লিখলে কী হবে, ক্রিকেট-দেবতার লেখা ভাগ্যের কাগজে যে ছিল অন্য কিছুই। তাই কন্ডিশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে, আর বিদায় করে দেয় ইংলিশদের।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের কথা বললে গত বিশ্বকাপকে সবার আগে রাখতে হবে। তবে ক্রিকেট বিশ্ব ‘বাঘের গর্জন’ শুনেছে আরও অনেক আগে। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় দিয়ে। কুয়ালালামপুরে নাটকীয় ফাইনাল জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভিতও যেন গাঁথা হয়ে যায়। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। সাফল্যের পথে কাঁটা বিছানো থাকবে, স্বাভাবিক। বড় কিছু অর্জনের পথ কখনোই সহজ হয় না। দুর্গম গিরি পাড়ি দিয়ে তবেই পাওয়া যায় অমূল্য রতন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকেও পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক কঠিন পথ। যে পথে বাঁক বদল হয়েছে অনেক। যে পথে আলো-আঁধার চলেছে হাত ধরাধরি করে।

১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি যদি হয় ভিত, তাহলে সে ভিতের শক্ত গাঁথুনি দুই বছর পরের বিশ্বকাপ। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্ব মঞ্চে সুযোগ পেয়েই হৈচৈ ফেলে দেয় বাংলাদেশ। বাঘের গর্জনে কেঁপে ওঠে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। স্কটল্যান্ডকে হারানো না হয় ঠিক ছিল, বাংলাদেশের মতো তারাও বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছিল আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে। তাই বলে পাকিস্তানও হেরে যাবে টাইগারদের বিপক্ষে! ক্রিকেট বিশ্বের চোখে উড়েছিল বিস্ময়ের রেণু। তা তো হবেই, যে পাকিস্তানকে ’৯৯ বিশ্বকাপ জয়ে ফেভারিট ধরা হচ্ছিল, তাদেরকে কিনা হারিয়ে দিয়েছে মাত্র ক্রিকেটে আলো ছড়ানো বাংলাদেশ!

আকরাম খান-আমিনুল ইসলামদের ছড়ানো সেই আলোতেই পরের বছর আলোকিত হয় গোটা বাংলাদেশ। পেয়ে যায় টেস্ট স্ট্যাটাস। এরপর শুধুই এগিয়ে চলার গল্প। যে গল্পে সাফল্য আছে, ব্যর্থতা আছে, হতাশা আছে, আছে অনেক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। সময়ের পালাবদলে এমন অসংখ্য গল্পের ডালি সাজিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাত করে রেখেছে টাইগাররা।

প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবের খাতা উল্টিয়ে টেস্ট অঙ্গনে বাংলাদেশ কাটিয়ে দিয়েছে ১৬টি বছর। ২০০০ সালে চলা শুরু করা গাড়ি এসে পৌঁছেছে ১০০তম টেস্টের স্টেশনে। স্মরণীয় এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজিত ছিল সবাই। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ক্রিকেটভক্ত-সবাই তাকিয়ে ছিলেন এই মাইলফলকের ম্যাচের দিকে। আর ‍বুকে ধরে রেখেছিলেন জয়ের আকাঙ্ক্ষা। মুহূর্তটাকে বৃথা যেতে দেননি মুশফিকরা। ক্রিকেট বিশ্বের মাত্র চতুর্থ দেশ হিসেবে শততম টেস্ট জিতে তারা লিখেছেন নতুন ইতিহাস।

বাংলাদেশ শুধু ঘরের মাঠে ভালো, বিদেশে এখনও সেই আঁতুর ঘরেই পড়ে আছে তাদের ক্রিকেটে-ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগেও এমন গুঞ্জন উঠেছিল। ২০১৫  বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে টানা সাফল্য দেখে কেউ কেউ একটু বাঁকা চোখে তাকাতেই পারেন। ভারত হেরেছে, পাকিস্তান হেরেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা হেরেছে, ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে টেস্টে-ঘরের মাঠে সত্যিই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আর বাইরে? হ্যাঁ সেখানে সত্যিই ইতিহাসটা খুব বেশি সুবিধার নয়। টেস্ট ধরলে তো আরও করুণ অবস্থা। ‘দুর্বল’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও রং হারানো জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কোনও দেশের বিপক্ষে জেতা হয়নি ‘অ্যাওয়ে’ টেস্ট। সে কারণেই নিন্দুকরা পায় কথা বলার প্ল্যাটফর্ম।

জবাবটা কিভাবে দিতে হয়, সেটা খুব ভালো করেই জানা ছিল মুশফিকদের। যে মঞ্চে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব দল লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে, ঠিক সেখানেই কাজের কাজটা করে দেখালেন তারা। শততম টেস্ট ম্যাচের চাপ হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে রঙে রঙে ভরিয়ে দিলেন বাংলাদেশের আকাশ। তাও আবার কোন দলের বিপক্ষে? যাদের বিপক্ষে আগের ১৭ টেস্টের ১৫টিতেই হারের লজ্জার রেকর্ড ছিল, সেই শ্রীলঙ্কাকে তাদের মাটিতেই হারিয়ে স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশের মানুষকে আরেকটি বিজয়োল্লাসে ভাসিয়ে দিলেন মুশফিক-সাকিব-তামিমরা।

সিরিজের নাম ‘জয় বাংলা কাপ’, স্বাধীনতার মাসে সেই কাপের অংশীদার হয়ে নিজেদের ক্ষমতার জানান দিল টাইগাররা। বাঘের সেই গর্জন এখন শ্রীলঙ্কা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top