সকল মেনু

যেমন খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের তল্লাশি চৌকি এলাকা

হটনিউজ ডেস্ক: পাকা সড়ক। দুইপাশেই আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের হাউজিংয়ের উন্নয়নের কাজ চলছে। সড়কের আশেপাশে আধা কিলোমিটারে জনবসতি নেই। শনিবার ভোরে শেখের জায়গা নামক খিলগাঁওয়ের এমনই একটি স্থানে নির্দেশনা অমান্য করে তল্লাশি চৌকি অতিক্রম করার সময় র‌্যাবের গুলিতে অজ্ঞাত যুবক নিহত হন। পরে যুবকের শরীর ও ব্যাগ থেকে শক্তিশালী বিস্ফোরণ বোমা উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট।

শনিবার সকালে র‌্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ জানান, তল্লাশি চৌকিতে কর্তব্যরত র‌্যাব সদস্যদের ওই যুবককে সন্দেহ হয়। তাকে মোটরসাইকেল থামানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা অমান্য করে মোটর সাইকেল নিয়ে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন র‌্যাব সদস্যরা তাকে গুলি করে। এসময় সে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সে কোথা থেকে আসছিল বা কোথায় যাচ্ছিল সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। নিহত যুবক জঙ্গি কিনা এটা তারা এখনও নিশ্চিত নয়।’

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রামপুরা-ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের মেরাদিয়া থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে মোস্তাম মাঝি মোড়। মোড় থেকে ডানদিকে নন্দীপাড়া একটি সড়ক গেছে। মোস্তাম মাঝি মোড় ও নন্দীপাড়া সড়কের মাঝামাঝি শেখের জায়গা। সেখানেই র‌্যাবের তল্লাশি চৌকি ছিল। সড়কের দুই পাশেই ফাঁকা জায়গা। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ সেখানে বালু ফেলে জায়গা ভরাট করছে। আশেপাশে কোনও বাড়িঘর নেই। দুই থেকে আড়াইশ’ গজ সামনে এগুলেই দেখা যাবে বাম পাশে টিনের একচালা ঘর। সেই ঘরটির সামনেই একটি টিভিএস মোটর সাইকেলের পাশে পরে আছে অজ্ঞাত যুবকের লাশ। তার মাথার পাশে পড়েছিল একটি ব্যাগ। ঘটনাস্থলের একটু সামনে গেলেই ডানপাশে ‘হাজী এ্যান্ড সন্স’ নামের  রড, সিমেন্ট ও বালু বিক্রয়ের দোকান। তবে দোকানটি বন্ধ। সেটির সামনে র‌্যাব সদস্যরা বসে আছেন। দোকানের সাইনবোর্ডে একটা ফোন নম্বর দেওয়া। সেই নম্বরে ফোন করলে ফোন ধরেন রুবেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

তিনি  ফোনে জানান, ‘আমরা রাতে কেউ দোকানে থাকি না। আমাদের দোকানের সামনেই ফজরের পর এই ঘটনা ঘটেছে। তাই র‌্যাব আজকে সকালে দোকান খুলতে নিষেধ করেছে। আমরা দোকান খুলিনি।’

এর আরও পাঁচশ গজ দূরে গিয়ে দেখা যায় ‘কামাল পোল্ট্রি ফার্ম’।  ফার্মের মালিক কামাল হোসেন। তবে তিনি সেখানে নেই। টিনের তৈরি ফটক বন্ধ করে ফার্মের তত্ত্বাবধায়ক মো. ইউনুস ভেতরে আছেন।’

ভোরে কোনও শব্দ পেয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনুস বলেন, ‘না, আমি কোনও শব্দ পাইনি।’ র‌্যাব কখন ওই এলাকায় আসছে তাও তিনি বলতে পারেননি। এরপর আরও প্রায় তিনশ’ গজ পশ্চিমে এগুলে নন্দীপাড়া। মোস্তম মাঝি মোড় ও নন্দিপাড়া সড়কে লেগুনা চলাচল করে। ওই রাস্তায় পায়ে হেঁটে তেমন কাউকে চলাচল করতে দেখা যায়নি।এই সড়ক দিয়ে নন্দীপাড়া থেকে মোস্তম মাঝি মোড় হয়ে বামে মোড় নিয়ে বনশ্রী, রামপুরা আসা যায়। অপরদিকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ডেমরা স্টাফকোয়ার্টার যাওয়া যায়। সড়কের দুইপাশেই দুই কিলোমিটার বা তারও বেশি এলাকা ফাঁকা, তেমন জনবসতি নেই। কোথাও কোথাও কিছু নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে। তবে ঘটনাস্থলের পাশে কোনও মানুষের বসতি নেই।

ঘটনা ভোর পৌনে ৫ টার দিকে হলেও লাশের সুরাতহাল ও বোমা নিষ্ক্রিয় করতে প্রায় আট ঘণ্টা সময় লাগে। খিলগাঁও থানা পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে বেলা ১২ টা ২৯ মিনিটের দিকে নিহত যুবকের দেহের ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে এর আগে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের সিনিয়র এএসপি আব্দুস সালামের নেতৃত্বে লাশের ও বোমার আলামত সংগ্রহ করেন সিআইডি সদস্যরা।
সিনিয়র এএসপি আব্দুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা লাশের ডিএনএ-এর  নমুনা সংগ্রহ করেছি। লাশের গায়ে ৬/৭টি গুলির চিহ্ন পেয়েছি। বোমা নিষ্ক্রিয়স্থল থেকেও আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি।’
এর আগে সকালে র‌্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ জানান, ভোর পৌনে ৫টার দিকে ২০-২৫ বছর বয়সী মোটরসাইকেল আরোহী ওই যুবককে সন্দেহ হলে চেকপোস্টে থাকা র‌্যাব সদস্যরা তাকে থামার সিগন্যাল দেয়। সে না থামায় তাকে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সে কোথা থেকে আসছিল বা কোথায় যাচ্ছিল সে বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।

শনিবার (১৮ মার্চ) বিকাল সোয়া চারটার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ‘৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সে মারা গেছে।’গুলির আঘাতেই তার মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘নিহত যুবকের শরীরে আমরা চারটি গুলির চিহ্ন পেয়েছি। এর মধ্যে তিনটি গুলি তার বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়েছে। আরেকটি ডান পায়ের সামনে দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top