হটনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুপ্রতীক্ষিত ভারত সফরের ঠিক আগে দিল্লিতে এসে এ দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন তার কেবিনেটের সিনিয়র সদস্যরা।
এই মুহূর্তে দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লিতে এসেছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের জন্য হোমওয়ার্কও শুরু করে দিয়েছে দিল্লি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যাদের আমন্ত্রণে দিল্লিতে একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন, সেই ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’কে বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী থিংকট্যাঙ্ক বলে গণ্য করা হয়।
বিজেপি তথা আরএসএসের সিনিয়র নেতা রাম মাধব, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু, বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বিমান পরিবহন মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা বা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের মতো বহু নীতিনির্ধারক এই থিংকট্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত। আর এর অন্যতম কর্ণধার হলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের ছেলে শৌর্য দোভাল।
এ হেন ক্ষমতাধর থিংকট্যাঙ্ক গত তিন বছর ধরে একটি সন্ত্রাসবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। আর সেই তিন দিনব্যাপী কাউন্টার-টেরোরিজম কনফারেন্সেই আজকের (বুধবার) অন্যতম বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি মঙ্গলবারই দিল্লির হায়াত রিজেন্সি হোটেলে এই কনফারেন্সের উদ্বোধন করেছেন, যাতে ভারত ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়াসহ বহু দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তারাই যোগ দেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল এদিন তার বক্তৃতায় যথারীতি জোর দিয়েছেন বাংলাদেশে তাদের সরকারের জঙ্গি দমনের অভিজ্ঞতার ওপর। সরকারের হাজারো চেষ্টা সত্ত্বেও কয়েকটি হোম-গ্রোন (বাংলাদেশেই যাদের উৎপত্তি) গোষ্ঠী যে ‘র্যাডিকালাইজড’ হচ্ছে এবং কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির মদতে তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বক্তৃতায় সে কথা খোলখুলি স্বীকারও করেছেন তিনি।
তবে দিল্লিতে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ভারতের মন্ত্রিরা একটা কথাই বুঝতে চেয়েছেন, আর তা হলো জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সহযোগিতাকে ঠিক কতদূর নিয়ে যেতে রাজি।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাহায্যের কথা তারা স্বীকার করেন অকুণ্ঠে। কিন্তু সেই সহযোগিতাকে এখন অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে বলে দিল্লিতে অনেকের অভিমত। আর শেখ হাসিনার সফরের ঠিক আগে সেই জিনিসটাই তারা ঝালিয়ে নিতে চেয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে। সেই বোঝাপড়া প্রত্যাশিত গতিতে এগোলে অদূর ভবিষ্যতে শুধু গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ই নয়, ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গি দমনে একযোগে কাজ শুরু করতে পারে। এমনকি চালাতে পারে যৌথ অভিযানও।
আসাদুজ্জামান খান কামাল যখন দিল্লিতে, ঠিক সে সময়ই মন্ত্রিসভায় তার সতীর্থ, বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও ভারতের রাজধানীতে এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে যক্ষ্মা (টিবি) দূরীকরণের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়োজিত এক সম্মেলনে যোগ দিতে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই আঞ্চলিক সম্মেলনে ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়ার আরও প্রায় ১০টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা এসেছেন। এই অঞ্চল থেকে টিবি পুরোপুরি দূর করার জন্য কী ধরনের যৌথ অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা যেতে পারে, তা নিয়ে আজ (বুধবার) দিনভর আলোচনা হয়েছে দিল্লির এই সম্মেলনে।
আর তারই অবকাশে নিজেদের মধ্যেও আজ অনেকক্ষণ একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎ প্রকাশ নাড্ডা শাসক দল বিজেপি ও তাদের আদর্শগত অভিভাবক আরএসএস – দুটোতেই অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে পরিচিত। দক্ষ রাজনৈতিক সংগঠক জগৎ প্রকাশ নাড্ডা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ’রও খুবই আস্থাভাজন এবং তার সঙ্গে মোহাম্মদ নাসিমের কথাবার্তাতেও যথারীতি ছায়া ফেলেছে শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর।
বিজেপির এক সিনিয়র কেবিনেট মন্ত্রী এদিন এই প্রতিবেদককে জানান, “শেখ হাসিনার আসন্ন সফর যাতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য সব দিক থেকে স্মরণীয় হয়ে থাকে, তার জন্য আমরা চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছি না। বলতে পারেন সেই আয়োজনের হোমওয়ার্ক হিসেবেই আমরা বাংলাদেশের সফররত দুই মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলে কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখলাম!”