সকল মেনু

সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ইলিশ থেকে জিডিপিতে আসে

  হটনিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এদেশের মোট মাছের ১২ শতাংশই ইলিশ। এর অর্থমূল্য আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। আর ইলিশ রফতানির মাধ্যমে আসে ১৫০-৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।

ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘জাটকা ইলিশ ধরবো না, দেশের ক্ষতি করবো না’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১১ মার্চ থেকে উদযাপিত হচ্ছে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ। চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক।

আশার কথা হলো, প্রতি বছরই বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২ লাখ টনের ঘর। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮৬-৮৭ সালে দেশে ইলিশ উৎপাদন হতো ১ লাখ ৯৫ হাজার টন। ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৯১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার টন।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা তথ্যমতে, ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখানদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওরেও এ বছর ইলিশ পাওয়া গেছে।

তবে জাটকা নিধনের কারণে ইলিশ মাছের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট ইলিশকে জাটকা বলা হয়। ২০১২ সালে দেশে ১০ হাজার ৯০০ টন, ২০১৩ সালে সাড়ে ১১ হাজার টন, ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৮০০ টন জাটকা ধরা হয়। এগুলোর আকার ১৪-২০ সেন্টিমিটারের মধ্যে। আর ওজন গড়ে ৩০ গ্রাম। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ৩৮ কোটি জাটকা ইলিশ ধরা পড়ছে দেশে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বছরে যে পরিমাণ জাটকা ধরা হয় তার অর্ধেকও রক্ষা করে সেগুলোর গড় ওজন ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত নেওয়া গেলে দেশে ইলিশের উৎপাদন আরও ৫০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় দুই লাখ টন বাড়ানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন সরকারি নজরদারি। তাদের আশা, প্রজনন মৌসুমে সর্বোচ্চসংখ্যক ইলিশ যেন ডিম ছাড়তে পারে ও ছোট ইলিশ যেন বড় হতে পারে, সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলেই দেশের ছোট-বড় নদী আবার ভরে উঠবে ইলিশে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি ইলিশ একসঙ্গে কমপক্ষে ৩ লাখ ও সর্বোচ্চ ২১ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০-৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে এবং ইলিশে রূপান্তরিত হয়।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী জানান, জাটকা আহরণের নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের কথা ভেবে সরকার ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে। এ পর্যন্ত মোট ৪২ হাজার ৬১৫টি জেলে পরিবারকে তাদের চাহিদানুযায়ী নানা উপকরণ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬টি জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি হারে ৩৭ হাজার ৭৮৮ টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

মোহাম্মদ ছায়েদুল হক আরও জানান, উপকূলীয় মৎসজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় ৫ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি সম্পৃক্ত। আরও ২০-২৫ লাখ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ইলিশ। তারা পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রফতানি ইত্যাদি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে রোলমডেল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই মাছ। ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। এছাড়া ভারতে ২০ শতাংশ, মিয়ানমারে ১৫ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ৫ শতাংশ ইলিশ ধরা পড়ে।

এদিক দিয়ে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পর রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। এসব দেশের উপকূলেও ইলিশ ধরা পড়ে। তবে এ ১০টি দেশেই ইলিশ উৎপাদন কমেছে। একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি বছর ৯-১০ শতাংশ হারে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে।

কারণ ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য বেছে নেয় বাংলাদেশকে। এজন্য বর্ষায় এ দেশের নদীগুলো ‘মা’ ইলিশে ভরে ওঠে। মোহনা থেকে নদীর ১২০০-১৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত সমুদ্রে ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে ইলিশ। সাগর থেকে ইলিশ যত ভেতরের দিকে আসে, ততই শরীর থেকে লবণ কমে যায়। এতে স্বাদ বেড়ে যায় মাছের।

গবেষণা থেকে জানা যায়, ইলিশে ওমগো থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা মানুষের দেহের রক্তের কোলস্টেরল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমায়, হৃদরোগ উপশম করে। ইলিশে আছে প্রচুর পরিমাণের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। এ মাছের তেলে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত সময়কে ইলিশ ধরার মৌসুম বলা হয়। তবে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে বিবেচিত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top