সকল মেনু

এখন ছোটদের বড় সঞ্চয়

হটনিউজ ডেস্ক: স্কুলের ছেলে-মেয়েরাও এখন বড় অংকের সঞ্চয় করা শুরু করেছে। স্কুল পড়ুয়া ছোট ছোট শিশুরা প্রায় এক হাজার ২১ কোটি টাকা জমিয়েছে। এখন ব্যাংকে লেনদেন করছে সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭০ জন শিক্ষার্থী এখন ব্যাংক হিসাবধারী।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা  বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকমুখী হয়েছে। বড়দের মতোই সঞ্চয়ের মনোভাব জাগ্রত হয়েছে স্কুলের ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু করে। অবশ্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭০ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী ব্যাংক হিসাব খুলেছিল। এর মধ্যে গ্রামে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬ জন এবং শহরে খুলেছিল ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৪ জন শিশু।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান  এ বিষয়ে বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাংকে আসার প্রবণতা ও সঞ্চয়ী মনোভাব অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। আমরা স্কুল ব্যাংকিং প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম মূলত স্কুলের শিশুদের আর্থিক জ্ঞান বাড়ানোর জন্য। অবশ্য আরও দুটো কারণ ছিল। কারণ ‍দুটো হলো-ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে সঞ্চয়ী অভ্যাস এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি আগ্রহী করে তোলা। এই তিনটি কারণে স্কুল ব্যাংকিংয়ের প্রতি শিশুদের আগ্রহ বাড়ছে, এর ফলে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনও হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জমা করেছে ৮৬১ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকে শিশুরা জমা করেছে ১২৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংকে তারা জমা করেছে ২০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকে (সিটি ব্যাংক এন এ ছাড়া) স্কুলের শিক্ষার্থীরা জমা করেছে সাড়ে ৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ৩৪৩ কোটি টাকা জমা রেখেছে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংকে তারা জমা করেছে ১০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংকে স্কুলের শিশুরা জমিয়েছে ৯১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ইউসিবিএলে ৫৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকে তারা জমা রেখেছে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

অবশ্য সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে। এই ব্যাংকটিতে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬২৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী ব্যাংক হিসাব খুলেছে। এর পরে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০৩ জন স্কুল শিক্ষার্থী হিসাব খুলেছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৭২ জন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৯৯ হাজার ৪২ জন এবং উত্তরা ব্যাংকে ৭৮ হাজার ৯৮১ জন শিশু ব্যাংক হিসাব খুলেছে।

এ প্রসঙ্গে মতিঝিলের এক স্কুল শিক্ষার্থীর অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে আমরা মাটির ব্যাংকে টাকা জমাতাম। এখন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাণিজ্যিক ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছে। এটা অনেক বড় বিষয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ী অভ্যাস প্রত্যেকের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।  এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সাধুবাদ জানান সাইফুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, শুরুতে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও পরে হিসাব খুলতে ১০০ টাকা জমা রাখতে বলা হয়। এসব হিসাব সাধারণ চলতি হিসাবে রূপান্তরের সুযোগও আছে। কোনও কোনও ব্যাংক আলাদা কাউন্টার বা ডেস্ক খুলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top