সকল মেনু

নারী কাউন্সিলররা ভালো নেই

 হটনিউজ ডেস্ক: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররা ভালো নেই। এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর যে উৎসাহ তাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল, দু’ বছর না যেতেই তাতে ভাটা পড়েছে। অভিযোগ, পুরুষ  কাউন্সিলরদের বাধায় এলাকার উন্নয়নে তারা কোনও ভূমিকা রাখতে পারছেন না। উন্নয়ন কাজ দেখাশোনা করতে গিয়ে কোনও কোনও নারী কাউন্সিলরকে লাঞ্ছিত পর্যন্ত হতে হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর রয়েছেন ৩১ জন। এদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নারী কাউন্সিলরের সংখ্যা ১৯ জন। সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, তাদেরও পুরুষ কাউন্সিলরদের মতো এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখার কথা।

কিন্তু নারী কাউন্সিলরদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ২৫ নম্বর আসনের (ওয়ার্ড নম্বর ২৪, ২৫ ও ২৯) কাউন্সিলর আলেয়া পারভীন রঞ্জু  বলেন, ‘ছয় মাস আগে আমার আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ দেখভাল করতে গিয়েছিলাম। এতে বাধ সাধেন এক পুরুষ কাউন্সিলর। সেখানে আমি লাঞ্ছিত হই। এ বিষয়ে মেয়র সহ অনেকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনও বিচার পাইনি।’

কাউন্সিলরের পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘তিনটি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। অথচ কোনও কাজই করতে পারছি না। উন্নয়ন কাজে কোনও ভূমিকা রাখতে পারছি না বলে কিছুটা দূরে-দূরেই থাকছি। আমার মতো অনেক নারী কাউন্সিলরই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক নারী কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে একটু তৎপর হলে পুরুষ কাউন্সিলররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা প্রচণ্ড বাধার সৃষ্টি করেন। মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। কিন্তু আমরা কিছু করতে পারি না, খুব আফসোস হয়।’

নারী কাউন্সিলররা আরও নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবুকে বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ওয়ার্ডটির দায়িত্ব সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর নাজমা বেগমকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজমা বেগমকে না দিয়ে দায়িত্বটা দেওয়া হয় পাশের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মাসুদকে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ।

পুরনো ঢাকার আরেক নারী কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উন্নয়ন কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে না পেরে আপাতত আমরা জন্ম নিবন্ধন ও ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য সুপারিশ করতে পারি। অথচ আগে নারী কাউন্সিলররা বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের তদারকি করতে পারতেন। উন্নয়ন সংক্রান্ত কাগজপত্রে তাদের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হতো। এখন সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলররাই সব করছেন।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব খান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আইনে পুরুষ ও নারী কাউন্সিলরদের কাজ সম্পর্কে বলে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উভয়েই নিজ নিজ ওয়ার্ডে সমান ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষরা তা মানতে চান না। তবে এই প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসছে।’

কাউন্সিলর আলেয়া পারভীন রঞ্জুর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলররা সিটি করপোরেশনের বোর্ডের সদস্য। আমরা তো তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না। তাছাড়া এই ঘটনার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কোনও কর্মচারী জড়িত নন। জড়িত থাকলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতো। বিষয়টা ফৌজদারি। যেহেতু তিনি থানায় জিডি করেছেন, তাই থানা পুলিশই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, বর্তমানে নারী কাউন্সিলরদের মাসিক উপার্জন ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মাসিক ভাতা ১৭ হাজার ৫০০, আপ্যায়ন ব্যয় চার হাজার এবং অফিস ভাড়া হিসেবে ৮ হাজার টাকা পান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top