সকল মেনু

এখন বাংলার পাট, বিশ্বমাত

হটনিউজ ডেস্ক: এখন  ‘বাংলার পাট, বিশ্বমাত’ এই শ্লোগান নিয়ে পাটের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাটের গুরুত্ব তুলে ধরতে এই প্রথমবার ৬ মার্চ সোমবার সারা দেশে পালিত হবে জাতীয় পাট দিবস। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিবছর ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস’ পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।

দেশে উদযাপিত প্রথম পাট দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’। এ উপলক্ষে ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর হাতিরঝিলে  পাট বোঝাই নৌ র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৫ মার্চ রবিবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে ৫০০ ফুট লম্বা পাটের তৈরি ক্যানভাসে ছবি এঁকেছেন দেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা।

পাশাপাশি, আজ সোমবার (৬ মার্চ) পাট দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬-৮ মার্চ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া সফরে থাকায় আগামী ৯ মার্চ রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করা হছে। এছাড়া দিবস উপলক্ষে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোয় ১২ মার্চ পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হবে।

পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে পাটের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে- এ খাতে গবেষণা বাড়ানো, নতুন পাটনীতি প্রণয়ন, সংস্কারের আওতায় জুটমিল করপোরেশনকে আনা এবং পণ্যের ব্যবহার পলিথিনের ওপর ইকো ট্যাক্স আরোপ। একদিকে দেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং অন্যদিকে রফতানি বাড়ানো। সব মিলে এ খাতের বিশাল বাজার সৃষ্টি করে কর্মসংস্থান বাড়াতে চায় সরকার।

জাতীয় পাট দিবস- ২০১৭ উপলক্ষে আট দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সোনালি আঁশ পাটের সম্ভাবনাগুলো বিকশিত করতে চায়। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য পাট সংশ্লিষ্ট সব উদ্যোগকে সমন্বিত করা এবং সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ে সরকার পাট দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে।’

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৯ দশমিক ৬২ লাখ বেল পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি করে ৭ হাজার ২৯৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা আয় করেছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮৭৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি। দেশে মোট কাঁচাপাটের উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বেল। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হচ্ছে ৬৩ লাখ বেল। যা মোট উৎপাদনের ৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি বছরে ১২ লাখ বেল বিদেশে কাঁচাপাট রফতানি হচ্ছে। অবশিষ্ট ৭ থেকে ১০ লাখ বেল পাট ব্যবহার হচ্ছে গৃহস্থালি কাজে।

জানা গেছে, পাটজাত পণ্যকে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের তালিকাভূক্ত করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত সানুগ্রহ ঘোষণাকে জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে পাটশিল্পের ব্লক ঋণ ফেরত দেওয়ার সময় ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে। ইডিএফ ফান্ডের ন্যায় পাটশিল্পের জন্য ২ ভাগ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল তৈরি করার বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।

এর আগে, চলতি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, বিজেএমসি’র পাটকলগুলো গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদন করেছে। এই অর্থবছরে বিজেএমসি’র মোট আয় একহাজার ১৫৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা এবং ব্যয় ১ হাজার ৮৫০ কোটি ৯ লাখ টাকা। তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে বিজেএমসি’র পাটকলের মোট লোকসান ৬৯৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

বিজেএমসি’র লোকসান প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, “এবছর বিজেএমসির লোকসান ২০০ কোটিতে নামিয়ে আনা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে বিজেএমসি রাষ্ট্রের ‘ডিজেবল’ সন্তান। রাষ্ট্র বিজেএমসির প্রতি বিশেষ নজর রাখছে।”

জানা গেছে, পাটের হারানো দিন ফিরিয়ে আনতেই সরকারের এই উদ্যোগ। বর্তমানে দেশে ২০৬টি পাটকল চালু আছে। এর মধ্যে সরকারি ২২টি এবং বেসরকারি ১৮৪টি। বর্তমানে সরকারি কোনও পাটকল বন্ধ না থাকলেও বিজেএমসির আওতাধীন পাটকলগুলো বেশ পুরনো। এ কারণে এই মিলগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩টি পাটকলের আধুনিকায়নে চীনের সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৭ মে সরকার বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় একীভূত করে প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়। পরে পাট শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত পূর্বের সব আদেশ বাতিল করে গত বছরের ১০ এপ্রিল ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট পাট বিষয়ক একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top