সকল মেনু

বিজিএমইএ ভবন অপসারণে কালক্ষেপণের কৌশলে

হটনিউজ ডেস্ক: চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পরও ভবন ভাঙতে আরও তিনবছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। যদিও হাই কোর্টের অ্যামিকাস কিউরি মনজিল মোরসেদ নতুন করে সময়ের হিসাব দেওয়াকে কৌশল হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ণাঙ্গ রায়ে জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামের ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এতদিন রিভিউ আদেশ হয়নি বলা থেকে শুরু করে নানা রকম যুক্তি দিয়ে কেবল কালক্ষেপণই করেছে বিজিএমইএ।’’  এদিকে, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এখনও জমি চূড়ান্ত করতে পারিনি। তাই কিছু সময় লাগবেই। এছাড়া নতুন ভবন নির্মাণের জন্য উত্তরা বা পূর্বাচলে জমি খোঁজা এখনও চলছে।’

রবিবার সকালে ভবন ভাঙার নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেওয়ার ফলে ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা নেই। বিষয়টি জেনেই বিজিএমইএ আদালতে মৌখিক তিনবছরের সময় চেয়ে আবেদন জানায়। আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন আদালত।

এ পর্যায়ে এসে তারা সময় চাইতে পারেন কিনা—এমন প্রশ্নে  সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের পক্ষ থেকে ভবন সরিয়ে নিতে তিন বছর সময় লাগবে, সেটাই আমাদের আবেদন। এরপর আদালত যে সিদ্ধান্ত দেন, সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ জন্য সময় চাই।’ কিন্তু বেশ কয়েকবছর থেকেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা ভেবে রেখেছিলেন কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেন কিছু ভাবব?’

এদিকে তারা আগে থেকেই তিনবছরের একটা সময়ের উল্লেখ করে আসছিল জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  বলেন, ‘বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে তিন বছরের সময় আবেদন করা হয়েছিল। মানে তাদের একটা প্রস্তুতি তো হচ্ছিলই বেশ কিছুদিন থেকে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই বিশাল স্ট্যাবলিশমেন্ট সরিয়ে নিয়ে যাওয়া মুখের কথা নয়, তারা সময় চান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরাও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এক বছরের সময় চেয়েছিলাম। এখন বৃহস্পতিবার আদালত কী আদেশ দেন, সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এদিকে রায়ে বলা হয়, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণ করা ওই জমি ১৯৯৮ সালে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো যেভাবে বিজিএমইএকে দিয়েছে, তা ছিল বেআইনি। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় তৈরি পোশাক ব‌্যবসায়ীদের এ সংগঠনকে।’

২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা তাদের দাবি এক বছরের মধ্যে ফেরত দিতেও বলেন আদালত। তবে হাইকোর্ট এও বলেছিলেন, ক্রেতারা যেহেতু নিজেরাও জানত বা তাদের জানা উচিত ছিল যে, এ জমির ওপর বিজিএমইএ-এর কোনও মালিকানা নেই এবং ভবনটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেহেতু তারা কোনও ইন্টারেস্ট পাওয়ার দাবিদার নন।

এদিকে, এ মামলায় হাই কোর্টের অ্যামিকাস কিউরির দায়িত্ব পালন করা অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিজিএমইএ-এর এই সময় আবেদনকে কালক্ষেপণেরই একমাত্র কৌশল বলে উল্লেখ করে  বলেন, নানামুখী তদবির করে ভবনটি টিকে আছে। এতদিন রিভিউ আদেশ হয়নি বলা থেকে শুরু করে নানাবিধ যুক্তি দিয়ে কেবল কালক্ষেপণই করেছে সংগঠনটি। এখনও সেই প্রচেষ্টা বহাল আছে। যদিও তারা বুঝতে পেরেছেন এখন আর পেছনে আসার তাদের কোনও সুযোগ নেই।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যদিও ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top