সকল মেনু

সচিবালয় আগুন ঝুঁকিতে !

মেহেদি হাসান: বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কার্যালয় । সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা নিয়মিত অফিস করেন এখানে। প্রতি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও হয় সচিবালয়ে। অথচ রাজধানীর রমনা এলাকার আবদুল গনি রোডে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্রটি রয়েছে আগুনের ঝুঁকিতে।

গত  কয়েক বছরে কয়েকটি ছোটখাট অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সচিবালয়ে। যে কোনও সময় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কয়েকবার বিদ্যুতের সংযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। অথচ এখনও সচিবালয়ের ভবনগুলোর বিদ্যুতের অনেক লাইন  অগোছালো। বোর্ড ও বক্স দিয়ে লাইনগুলো ঢেকে রাখা হলেও ভেতরে রয়েছে পুরোনো ক্যাবল। তাই শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগার শঙ্কা রয়ে গেছে শতভাগ।

সম্প্রতি অগ্নিনিরোধক সরঞ্জামের সংখ্যা  বাড়ানো হলেও সচিবালয়ে তা ব্যবহারের মতো দক্ষ কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত বছর সচিবালয়ের  বড় ভবনগুলোয় আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহারের জন্য পৃথক পানির লাইন স্থাপন করা  হয়েছিল। কিন্তু পানি সরবরাহের জন্য পৃথক পানির ট্যাংক বসানো  হয়নি।  তাই পানির পৃথক পাইপ বসিয়েও আগুনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সচিবালয়ের অনেক দেয়ালেই টাঙানো রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ফায়ার এক্সটিংগুইশারের সিলিন্ডার। কিন্তু এখানেও সমস্যা। জানা  গেছে,  প্রতি বছর বদলানোর কথা থাকলেও সিলিন্ডারগুলো নিয়মিত বদল করা হয় না। শুধু বদলানো হয় মেয়াদ উল্লেখ করা কাগজের স্লিপ। পুরনো স্লিপের ওপর নতুন তারিখ ও মেয়াদ লেখা স্লিপ আঠা দিয়ে সেঁটে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট  কোম্পানির লোকেরা এসে এই স্লিপ লাগিয়ে চলে যান। এসব সিলিন্ডারের মধ্যে গ্যাস আছে কি নেই, তা  পরিষ্কার করে বলতে পারেন না কেউ। অতীতে আগুন নেভানোর কাজে এসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা, তাও সচিবালয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি গণপূর্ত বিভাগের কেউ বলতে পারেননি। তাই অনেকের প্রশ্ন-এসব সিলিন্ডার ব্যবহার করা না গেলে এগুলো রেখে কী লাভ?

এ প্রসঙ্গে সচিবালয়ের অভ্যন্তরে গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট  বিভাগের একজন সহকারী প্রকৌশলী বলেন,  সচিবালয় এখন আগের চেয়ে অনেক নিরাপদ। অতীতে বেশ কয়েকবার আগুন লাগলেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি, ভবিষ্যতেও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটবে না। তবে দুর্ঘটনার কথা তো বলা যায় না। তাই সচিবালয়ের প্রতিটি ভবনের ভেতরে বসানো হয়েছে পানির নতুন পাইপ। নতুন লাইনে সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত পানি সচিবালয়ের ভেতরের ট্যাংকে রয়েছে। নতুন লাইনও করা হয়েছে। এছাড়া সচিবালয়ের ভেতরে গভীর নলকূপের  সংযোগও রয়েছে। তাই পানির সংকট হবে না।

আগুন লাগলে পানির নতুন লাইন ব্যবহারের মতো দক্ষ কর্মী রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন,  মোটামুটি রয়েছে। অবশ্য সচিবালয়ের খুব কাছেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর। খবর দিলে  ফায়ার সার্ভিস দ্রুত এখানে চলে আসে। তারা পানির নতুন লাইন ব্যবহারে পারদর্শী। তাই এনিয়ে  চিন্তার কোনও কারণ নেই।

এ বিষয়ে সচিবালয়ে কর্মরত একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে  বলেন,  সচিবালয়কে আগুনের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।  প্রতিটি ভবনেই রয়েছে অগ্নিনির্বাপক ফায়ার এক্সটিংগুইশার। সেগুলো নিয়মিত চেকও করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক  (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ  বলেন, ‘সচিবালয় সরকারের  গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এর নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগই সচেষ্ট। আমরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে সচিবালয়ে যে কোনও  ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সচেষ্ট থাকি। প্রতি বছরই দুর্যোগ প্রশমন দিবসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মহড়া দেওয়া হয়। এসব মহড়া অনুষ্ঠানে মাননীয় মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালক উপস্থিত থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। সচিবালয়ে অতীতে বেশিরভাগ অগ্নিকাণ্ডই ঘটেছে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে। এছাড়া পরিত্যক্ত কাগজের স্তুপে সিগারেটের টুকরো ফেলার কারণেও আগুন লেগেছে। তবে  বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যথাসময়ে ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ কর্মী বাহিনী উপস্থিত হয়ে আগুন নিভিয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া  বলেন, ‘শুধু সচিবালয় কিংবা অগ্নিকাণ্ড নয়,  সমগ্র বাংলাদেশে যে কোনও ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি আগের যে  কোনও সময়ের তুলনায় ভালো। সম্প্রতি অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে, আরও  কেনা হচ্ছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায়  প্রস্তুত।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top