সকল মেনু

আবুল কাশেম দিনাজপুর পুলিশের নজরদারিতে ছিল

হটনিউজ ডেস্ক: রাজধানীর কল্যাণপুরে ছয়তলা ‘জাহাজ বাড়ি’তে নয় জঙ্গি নিহতের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় নব্য জেএমবির আধ্যাত্মিক নেতা ও জেএমবির (মূলধারার) একাংশের আমির মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এক বছর আগেই তাকে ধরতে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে দিনাজপুর পুলিশ।
জানা গেছে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীর বন্দর এলাকার অকড়াবাড়ি হামিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় চাকরি করতো আবুল কাশেম। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে প্রায় ৮-৯ মাস চাকরি করেছে সে। এলাকায় তার পরিচিতি ছিল ভালো মানুষ হিসেবে। কিন্তু শিক্ষকতার আড়ালে সে যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা জানতে পেরেছিল পুলিশ। কিন্তু তারা অভিযান চালিয়ে ধরার আগেই সটকে পড়ে সে। স্থানীয়রা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে অকড়াবাড়ি হামিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আব্দুল মালেক। আবুল কাশেম নিখোঁজ থাকায় তাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি নেতা আবুল কাশেম কতদিন এখানে কর্মরত ছিল তা জানাতে পারেননি তিনি। শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকালে ওই মাদ্রাসায় সরেজমিনে গেলে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানান আব্দুল মালেক।
মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ শাহ  জানান, আবুল কাশেমকে অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন দেওয়া হতো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। গত বছরের জানুয়ারির বেতন নিয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে কুড়িগ্রামে যাচ্ছে বলে জানায় সে। এরপর আর ফেরেনি। সে মাদ্রাসার আগের কোনও হিসাব-নিকাশও রাখেনি। শুধু শিক্ষার্থীদের রেজিস্টার খাতা রেখে গেছে।
মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আরও জানান, আবুল কাশেম চলে যাওয়ার পর মাদ্রাসায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালায় পুলিশ। তারাই নিশ্চিত করে, আবুল কাশেম জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত।
স্থানীয় সাইতাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন  বলেন, ‘আবুল কাশেম যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তা কখনও অনুমান করা যায়নি। বেশ কয়েকবার আমার সঙ্গেও কথা হয়েছে কাশেমের। কিন্তু বিষয়টি আঁচ করতে পারিনি। যদি আঁচ করা যেতো তাহলে আমি নিজেই তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতাম।’

তবে আবুল কাশেম যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, তা ঠিকই জানতে পেরেছিল পুলিশ। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, জঙ্গি সন্দেহে আগে থেকেই পুলিশ তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিল।কিন্তু অভিযানের আগেই মাদ্রাসা থেকে সে সটকে পড়ে । পরে তার কুড়িগ্রামের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
অকড়াবাড়ি হামিদিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসায় আবুল কাশেমের তিন ছেলেও পড়াশোনা করতো। পুলিশ অভিযান চালানোর পর মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সেজন্য তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়।
চিরিরবন্দরের এই মাদ্রাসায় চাকরি করতো আবুল কাশেম
ইতোপূর্বে গ্রেফতার হওয়া অনেক জঙ্গির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছিল পুলিশ। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাতে রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা এলাকার একটি দোকানের বিকাশ নম্বরে এক ভক্তের পাঠানো টাকা নিতে এলে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা।
এদিকে আবুল কাশেমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকালে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সে নব্য জেএমবিতে ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত ছিল। নব্য জেএমবির বিভিন্ন কার্যক্রমে মনগড়া ধর্মীয় মতবাদ তথা জিহাদ, ইসলাম, কোরান ও হাদিসের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে দলটির সদস্যদের হিংস্র করে তোলে সে। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলাসহ বেশ কয়েকটি নাশকতা চালানোর অনুমোদন দিয়েছিল বলে পুলিশের প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে আবুল কাশেম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top