সকল মেনু

মূল্য বৃদ্ধি জ্বালানি গ্যাসের : বেকায়দায় সাধারণ মানুষ

হটনিউজ ডেস্ক: রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর শেখপাড়ায় একটি টিনশেড ঘরে সপরিবারে বসবাস করেন রাজমিস্ত্রি আবদুল কাদের। এ জন্য প্রতি মাসে ভাড়া গোনেন তিন হাজার টাকা। জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়িওয়ালা ঘরভাড়া পাঁচ শ টাকা বাড়াবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন আবদুল কাদির। বললেন, এবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলে ঘর ভাড়া বাড়ানো হলো। এরপর একই কারণ দেখিয়ে বাড়বে বিদ্যুৎ, পানি ও গাড়ি ভাড়াসহ সব জিনিসের দাম। আমরা ভাল থাকব কিভাবে?

জ্বালানি গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শুধু আবদুল কাদেরই নন, তার মত অন্যরাও বেকায়দায় পড়েছেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই। বৃহস্পতিবার আলাপকালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা খালিদ জানান, তিনি বাসাবোর কদমতলা হাইস্কুলের কাছে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়বে—এমন সম্ভাবনার কথাসহ  কিছু কারণ দেখিয়ে এ বছর জানুয়ারি মাসের বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। খালিদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ায় অন্যান্য জিনিসেরও দাম বেড়ে যাবে।

আবাসিক চুলার পাশাপাশি দাম বেড়েছে যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজিরও। তবে দু’দিন পেরিয়ে গেলেও গাড়ি ভাড়া বাড়েনি। রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনের ভাড়া আগে যেহারে নেওয়া হত, সেভাবেই নেওয়া হচ্ছে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী একটি বাস কোম্পানির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিআরটিএ এখনও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাই আমরা পুরনো ভাড়াতেই যাত্রী পরিবহন করছি।’

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম আবাসিক ও সিএনজিসহ আটটি শ্রেণিতে ব্যবহৃত জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।

বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত বছর জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিইআরসিতে গণশুনানি হয়েছে। এতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসের দাম ৯৪.৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। আমরা সবদিক পর্যালোচনা করে গ্যাসের দাম দুই ধাপে ২২.৭ শতাংশ বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ গ্যাসের এই মূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের খুব একটা অসুবিধা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।

বিইআরসি জানিয়েছে, দুই ধাপে জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ১ মার্চ থেকে এক বার্নারে (প্রতি মাসে নির্দিষ্ট) গ্যাসের দাম হবে ৭৫০ টাকা এবং দ্বিতীয় ধাপে ১দ জুন থেকে ৯০০ টাকা, ডাবল বার্নারে (প্রতি মাসে নির্দিষ্ট) গ্যাসের দাম হবে ১ মার্চ থেকে ৮০০ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৯৫০ টাকা। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটারে মূল্য হবে ১ মার্চ থেকে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা।

জ্বালানি গ্যাসের সর্বশেষ মূল্য বৃদ্ধির আগের দিন পর্যন্ত (২৮ ফেব্রুয়ারি) গ্যাসের দাম ছিল এক বার্নার ৬০০ টাকা, ডাবল বার্নার ৬৫০ টাকা এবং সিএনজি প্রতি ঘনমিটার ৩৫ টাকা। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আবাসিকসহ কয়েকটি খাতে জ্বালানি গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

প্রসঙ্গত, জ্বালানি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিইআরসি। এতে দুই ধাপে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দ্বিতীয় ধাপে মূল্য বৃদ্ধির কার্যকারিতার ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেন। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের পক্ষে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর ড. শামসুল আলম  বলেন, ‘সরকারের শাসন বিভাগের কাছে আমরা প্রতিকার পাইনি। তাই আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি বা এ সংক্রান্ত প্রস্তাব কোনও বিবেচনাতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। ২০০৯ সালে সরকারের আদর্শিক অবস্থান ছিল-ভোক্তারা যেন সহজে জ্বালানি গ্যাস পায়, বিদ্যুৎ পায়। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সরকার ব্যবসাবান্ধব, তারা রাজস্ব আয়মুখী, গণমুখী নয়। জনগণের মাঝে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি গ্যাস সরবরাহ করা তাদের লক্ষ্য নয়।

ক্যাবের ভোক্তা অভিযোগ নিষ্পত্তি উপকমিটির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা জরিপ চালিয়ে দেখেছি, শতভাগ মানুষই জ্বালানি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিপক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top