সকল মেনু

রানা আল-কায়েদা থেকে আইএসের অনুসারী হয়েছিল

রাকিবুল ইসলাম রাকিব: শুরুতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী ছিল রেজোয়ানুল আজাদ রানা। আল-কায়েদার আদলে দেশে গড়ে ওঠা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশনাল কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতো সে। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে একের পর এক ব্লগার হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছে রানা। পরে আল-কায়েদার মতাদর্শ ছেড়ে আরেক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট তথা আইএসের অনুসারী হয় সে।

মালয়েশিয়া থেকে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করেছিল রানা। কিন্তু সিরিয়ায় ঢুকতে না পেরে ফিলিপাইনে ঢুকতে চেয়েছিল সে। তবে তার আগেই মালয়েশিয়ার গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে এই জঙ্গি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরত পাঠানোর পর সে এখন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কাছে রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য নিজেই জানিয়েছে সে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে যেসব তথ্য পাচ্ছি তা যাচাই করে দেখছি আমরা।’

সিটি সূত্র জানায়, রেজোয়ানুল আজাদ রানা প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকান্ডের পর। তার নির্দেশনায় রাজীবসহ অন্যান্য ব্লগারদের হত্যা করা ও হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট বানিয়ে ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় চলে যায় সে। এরপর সেখান থেকেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের স্লিপার সেল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, রানা জঙ্গিবাদে দীক্ষা পায় জুন্নুন শিকদার নামে একজনের কাছ থেকে। জুন্নুন শিকদার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে একবার গ্রেফতার হয়েছিল। আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে। এই জুন্নুন শিকদারের মাধ্যমে রানা আবার আইএসের মতাদর্শে দীক্ষা নেয়। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে যে চারটি পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়েছে, তাতে অন্তত ২০০ আইএসের যুদ্ধের ভিডিও এবং আইএসপন্থীদের নানারকম লিটেরেচার রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে রানা আরও জানিয়েছে, সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সে ফিলিপাইনে আইএসের অনুসারী জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দেশে ফেরত পাঠানোর দুই সপ্তাহ আগে মালয়েশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তাকে ধরে ফেলে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ফেরত পাঠানো হয় দেশে।

জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটির কর্মকর্তাদের রানা জানায়, সে ঢাকায় ব্লগার রাজীব হত্যার ঘটনায় অংশ নেওয়া সবাইকে চিনত। পরিকল্পনার সঙ্গেও যুক্ত ছিল। কিন্তু নিজের হাতে রাজীব হত্যায় অংশ নেয়নি। অন্য ব্লগারদের হত্যাকান্ডের কথাও অস্বীকার করছে সে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান  বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রানা কিছু বিষয় স্বীকার করেছে। কিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

নাফিসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই রানার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি তরুণ নাফিসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রানার। জিজ্ঞাসাবাদে রানা জানিয়েছে, তারা একসঙ্গে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়তো। সেখানেই তাদের পরিচয় হয়েছিল। নর্থসাউথে পড়ার সময়ই তারা উগ্রপন্থী জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নাফিস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পরও তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। এমনকি নাফিস যুক্তরাষ্ট্রে কিছু একটা ‘অঘটন’ ঘটাবে বলেও রানাকে জানিয়েছিল। পরে নাফিস গ্রেফতার হলে বিষয়টি সে জানতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর নাফিসকে গ্রেফতার করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই। প্রায় দশ মাস বিচার চলার পর ২০১৩ সালের ৯ আগস্ট নিউইয়র্কের একটি আদালত তাকে ৩০ বছরের কারাদন্ড দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top