সকল মেনু

শিল্পী শাহাবুদ্দিন ভারতের রাষ্ট্রপতির আতিথ্যে

হটনিউজ ডেস্ক: প্যারিস-প্রবাসী বিখ্যাত বাংলাদেশি শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে এক অনন্য সম্মান দিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আজ শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তার একটি অসামান্য চিত্র-প্রদর্শনী।

আগামী পাঁচদিন ধরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘আর্টিস্ট ইন-রেসিডেন্স’ হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অতিথি থাকছেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন। ভারতের রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে কোনও বিদেশি নাগরিককে এ ধরনের সম্মান এই প্রথম।

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন হল চালু করেছেন এই ‘ইন রেসিডেন্স’ প্রোগ্রাম – যার আওতায় বরেণ্য শিল্পী সাহিত্যিকরা তার আতিথ্য গ্রহণ করে কিছুদিন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এসে থাকেন, এবং সেখানে নিজের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে চর্চা করেন।

শাহাবুদ্দিন আহমেদের আগে যোগেন চৌধুরী, পরেশ মাইতি, জয়শ্রী বর্মণের মতো চিত্রশিল্পী কিংবা অমিতাভ ঘোষের মতো সাহিত্যিকরা এই ইন-রেসিডেন্স প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছেন এবং রাষ্ট্রপতি প্রণব এই অভিনব উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসাও হয়েছে।

তবে শাহাবুদ্দিন আহমেদের আগে অন্য কোনও বিদেশি শিল্পীকে এই সম্মান অর্পণ করা হয়নি, সে দিক থেকে দিল্লির রাইসিনা হিলসে তার এই আতিথ্য গ্রহণ এবং প্রদর্শনীর আয়োজন এক বিরল স্বীকৃতিই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে আত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনকে নিবিড় করে তুলতে ব্যক্তিগতভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি যে কতটা আগ্রহী, এই আমন্ত্রণ তারও প্রমাণ।

দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে ৬৭ বছর বয়সী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী হিসেবে, যার ছবি রাখতে পেরে ফ্রান্স থেকে বুলগেরিয়া, সুইজারল্যান্ড থেকে দক্ষিণ কোরিয়া বা বাংলাদেশ – বিশ্বের বহু মিউজিয়াম আর আর্ট গ্যালারিই গর্বিত বোধ করে!

শুধু তাই নয়, শাহাবুদ্দিন আহমেদ মাত্র ২১ বছর বয়সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন ছিলেন তিনি–এবং ১৯৭১র ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান রেডিও’র দফতরে প্রথম তিনিই তুলেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। প্রদর্শনীর প্রাক্কালে তার সম্পর্কে এ সব তথ্য জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনই।

আজ থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের সংগ্রহশালায় সাহাবুদ্দিন আহমেদের যে প্রদর্শনীটি শুরু হল তার নাম ‘শান্তি’। মোট বারোটি বৃহদাকার পেইন্টিং থাকছে তার এই একক প্রদর্শনীতে, যার মধ্যে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাংলাদেশে জাতির পিতা শেখ মুজিবের পোর্ট্রেটও রয়েছে।

শিল্পীজীবনে বারেবারেই গান্ধীজি ও বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছেন শাহাবুদ্দিন – তার প্রতিফলন থাকছে এই প্রদর্শনীতেও। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও মাদার তেরেসা যে তার জীবনের দুই মহতী অনুপ্রেরণা, সে কথাও শিল্পী জানিয়েছেন একাধিকবার।

“যুদ্ধের অভিজ্ঞতা হয়তো আমার জীবনের গতিপথকে বদলে দিয়েছে, কিন্তু অনেকেই যেমনটা মনে করেন আমি যুদ্ধের ছবি আঁকি–তা কিন্তু ঠিক নয়। আমি আঁকি মানুষের যন্ত্রণার ছবি এবং তার বিরুদ্ধে তাদের রুখে দাঁড়ানোর ছবি”, এই প্রদর্শনী শুরুর আগে দিল্লিতে বলেছেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।

হয়তো বা সে কারণেই, তার এই প্রদর্শনীর নামও যুদ্ধের বিপরীতে – শান্তি।

দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন মিউজিয়াম আর্ট গ্যালারিতে সাহাবুদ্দিন আহমেদের এই প্রদর্শনী চলবে আগামী ২২শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর এর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতির বন্ধন যে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, তা তো বলাই বাহুল্য!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top