সকল মেনু

প্রশ্নপত্র ফাঁসে দুই ধাপ পেরোলেই গ্রেফতার সম্ভব মূল হোতাদের!

হটনিউজ ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস অনেক বড় এক সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে শিক্ষাজগতে। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এর সঙ্গে বিরাট এক চক্র জড়িত। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত অন্তত আটটি ধাপে অপরাধীরা জড়িত। এর মধ্যে ছয়টি ধাপ পর্যন্ত পৌঁছানো গেলেও ‘উচ্চ পর্যায়ে’র দুই ধাপ এখনও অধরা। গোয়েন্দাদের দাবি, এই দুই ধাপ পার হতে পারলেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।

চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে‍। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বোর্ডের গণিত পরীক্ষার প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে গোয়েন্দারা বলছেন, পরদিন অনুষ্ঠিত গণিত পরীক্ষার ‘মাত্র’ ৩০-৪০ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে।

প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করছেন না ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে ঠিকই, তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অরিজিনাল প্রশ্নের বদলে ভুয়া প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ বা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট গ্রুপ তৈরি করে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রুপের অ্যাডমিনের সঙ্গে আগ্রহী ব্যক্তি প্রথমে যোগাযোগ করে। তারপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার আগে ওই ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় প্রশ্ন।

প্রশ্ন ফাঁস এড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা  বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার আগে শিক্ষাবোর্ড, মন্ত্রণালয়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সহ সাধারণ মানুষকে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে বলা হয়।  এবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর পর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব জেনেছি। একে একে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

এই অপরাধের সঙ্গে অনেক বড় একটা চক্র জড়িত বলে জানিয়েছেন আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে যার কাছে প্রশ্ন পাই তাকে ধরি। সে জানায় কার কাছ থেকে প্রশ্ন পেয়েছে। আমরা তখন তাকে ধরি। এভাবে পুরো লিংকটা ধরার চেষ্টা করা হয়। সেজন্য অনেকগুলো স্টেজ পার করতে হয়। কিন্তু অনেক সময় পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পুরো চক্রটি ধরা সম্ভব হয় না। তাই মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।’

মূল হোতারা ‘উচ্চ পর্যায়ে’ অবস্থান করছে জানিয়ে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘মূল হোতাদের গ্রেফতারে অনেকগুলো লেয়ার পার করতে হয়। আমরা এখন ৬ নম্বর লেয়ারে আছি। আর দুইটা লেয়ার পার করতে পারলে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতাদের ধরা সম্ভব হবে।’

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অনেক দিন ধরেই অভিযান চলছিল। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মো. ফয়সালুর রহমান ওরফে আকাশ নামে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতাও ছিল। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, সিপিইউ, রাউটার, মোবাইল সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

এই চক্রটি বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে থাকে। তাদের কাছ থেকে শতভাগ প্রশ্ন ‘কমন’ পড়ার নিশ্চয়তা পেয়ে ৫শ’ থেকে ৩ হাজার, কখনও তারও বেশি টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনে নেয় আগ্রহীরা।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে সন্দিহান। তিনি  বলেন, গুজব ছড়ানো হলেও পরবর্তীতে দেখা যায়  ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে নয়, অন্য সেটে প্রশ্ন হচ্ছে। যারা প্রশ্ন তৈরি করেন, তারা কিছু স্কুল বা কলেজের প্রশ্ন অনুসরণ করেন। তাদের প্রশ্নের সঙ্গে ঐ সব প্রতিষ্ঠানের সাজেশন অনেক সময় মিলে যায়। এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে বোর্ডের কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষাবোর্ড, মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দারা কাজ করলেও তাদের ওপরে  আস্থা রাখতে পারছেন না অনেক অভিভাবক। এ প্রসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়ান আহসানের বাবা ফিরোজ আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রতিটি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। তাহলে গোয়েন্দারা কী নজরদারি করছেন? নজরদারি করলে প্রশ্ন ফাঁস হয় কী করে?

আরেক অভিভাবক পারভীন আক্তারও এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, যে কোনও ভাবে এটা বন্ধ করা উচিত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top