সকল মেনু

হুজুররা মেধাবী এতিম শিশুটিকে পিটিয়ে আহত করলো

Thakurgaon_01হুমায়ুন কবীর, ঠাকুরগাঁও: চোর নির্নয় করতে জ্বীন হাজির করে চোর নির্নয়ের নামে এক শিশুকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। আহত শিশুটি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পুলিশ জ্বীনের বাদশা ওই লোককে খুজছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হাসিনা শিশু সদনে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসারত শিশুটির পিঠে, পেটে, কোমরে, কোমর বন্ধনীতে এবং দু-পায়ের তালুতে এমনভাবে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে যে, শিশুটি হাটতে পারছে না, লোক দেখলেই ভয়ে চিৎকার করে উঠছে আর অঝোরে কাঁদছে।

শিশুটি জানায়, ওই শিশু সদনের মসজিদের একটি ব্যাটারী হারিয়ে যায় কিছুদিন আগে। এতিমখানার শিক্ষক আলতাফুর, জয়নাল আবেদীন, মাহাবুব আলম মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে একজন মাহাত, (গনক/যাদুগর/জ্বীনের বাদশা)কে নিয়ে আসে। মাহাত মোঃ রব্বানী তার এক লোককে সাথে নিয়ে এসে শিশু সদনের মসজিদের বাহিরে জ্বীন হাজির করে। কথিত ওই জ্বীন মাহাত রব্বানীর সহযোগী আশরাফুল নামে এক যুবকের ওপর ভর করে। এ সময় এতিমখানার শিক্ষকগন এবং নৈশপ্রহরী মিলে সন্দেহভাজন শিশুদের আলাদা করতে থাকে। এ সময় কথিত জ্বীন ভর করা যুবক আশরাফুল রানা বাবু (১২) নামে এক এতিম শিশুকে। বাবু চুরি করার কথা অস্বীকার করলে এতিমখানার শিক্ষকগন, নৈশ প্রহরী এবং মাহাত সহ শিশুটিকে বেদম মারতে থাকে। শিশুটিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার দু-পায়ের তালুতেও বেদম পিটায়। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের ওই শিশুটির মা ও ভাই ছুটে আসে এবং শিশুটিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাতেই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়।

শিশুটির ভাই মোঃ আলম জানান, প্রায় ৪ বছর আগে তাদের বাবা মারা যায়। ৫ ভাই বোনের সংসারে ভাইদের পড়াশোনার খরচ চালাতে সে হিমশিম খায়। পরে গত ৩ বছর আগে ভাই রানা বাবুকে ওই এতিমখানায় রেখে পড়াশোনা করাতে থাকে। আহত শিশুটি এত কষ্টের পরও আমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেনীতে পড়ে এবং তার রোল নম্বর এক। শিশুটির মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন যারা এমন নির্দয়ভাবে আমার পিতৃহীন এতিম ছেলেকে পিটিয়েছে তাদের বিচার চাই।

হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার মোঃ কাশেম আলী জানান, শিশুটিকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।

এতিম খানার শিক্ষক মাহাবুব আলম জানান, ব্যাটারী হারিয়ে যাবার ঘটনায় সেখানে মাহাত নিয়ে এসে জ্বীন ওই ছেলেটিকে চোর বলে সনাক্ত করে। বিষয়টি ওই ছেলে শিকার না করায় তাকে সামান্য মারপিট করা হয়েছে। জ্বীন চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারে কি না এবং কোথায় চুরি যাওয়া মালামাল রাখা হয়েছে তা বলতে পারে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কোন কোন সময় জ্বীন তা পারে। ওই ছেলেটিই চুরি করেছে এর কোন প্রমান তারা পেয়েছে কি না এ ব্যাপারে মাহাবুর আলম বলেন জ্বীনই বলেছে।

শিক্ষক মাহাবুব আলমের সাথে কথা বলার সময় সেখানে উপস্থিত এতিমখানার বাসিন্দা ছোট ছোট শিশুরা শিক্ষকদের সামনেই অভিযোগ করে বলেন, কোন কোন সময় খাবার ভালো না হলে এবং শিক্ষকদের বাড়িতে তাদের নিজস্ব কাজ করার বিষয়ে রানা বাবু প্রায় প্রতিবাদ করে। সে সহ আমরা পড়াশোনার সময় কাজ করতে না চাইলে তারা রানা বাবুর ওপর ক্ষেপে যান। এতিমখানার বাসিন্দা সাহেরূল ইসলাম, আমিরূল ইসলাম, আমিনুল সহ কয়েকজন জানায়, চুরি হয়ে যাওয়া ১২ ভোল্টের ব্যাটারী সেখানে অবস্থানরত শিশুদের দ্বারা আলগানো সম্ভব নয়। যে সময় জ্বীনকে সেখানে হাজির করা হয় সে সময় রানা বাবুকে লাইন থেকে আলাদা করে এক পাশে রাখা হয় আর ওই জ্বীন তখন বলে যে, এই ছেলেটিই ব্যাটারী চুরি করেছে।

জ্বীন দেখেন নি এবং অনুমান করে জ্বীনের নির্দেশমত লাইন থেকে আলাদা করে রাখা শিশুকে চোর বলে সাব্যস্থ্য করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত এ ব্যাপারে শিক্ষক মাহাবুব জানান, এতিম খানার নাইটগার্ড এবং ,িশক্ষক জয়নাল আবেদীন ওই মাহাতকে এনেছিল।

এ ব্যাপারে কথা বলতে কথিত ওই জ্বীনের বাদশা রব্বানীর বাড়িতে গেলে রব্বানী কোন কথা বলতে অপারগতা জানান এমনকি সামনেও আসেননি।

এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তদন্থের জন্য পুলিশ পাঠিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আপাতত শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে জ্বীনের বাদশাকে খুজে পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। তিনি মন্থব্য করে বলেন, ওই শিশুটির পক্ষে চুরি হওয়া ব্যাটারী আলগানো সম্ভব নয়। তাছাড়া চুরি হওয়ার বিষয়ে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ কোন অভিযোগ করেনি। আইন নিজ হাতে তুলে নিয়ে এবং কথিত ভুয়া জ্বীনের নামে তারা বর্বরতা চালিয়েছে শিশুটির ওপর। তাদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top