সকল মেনু

বাংলাদেশ ব্যাংক অবৈধ পথের রেমিটেন্স নিয়ে উদ্বিগ্ন

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে অবৈধ চ্যানেল বেছে নিচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে একদিকে অব্যাহতভাবে কমছে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স, অন্যদিকে বাড়ছে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা। রেমিটেন্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি নির্ধারকরা। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ সংক্রান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষ কর্মকর্তা  বলেন, রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন। তারা শিগগিরই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ মাসেই দুটি প্রতিনিধিদল ওই চারটি দেশ সফরে যাবে। দেশে ফিরে রেমিটেন্স কমার কারণ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে তারা।
এর আগে হুন্ডি প্রতিরোধে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো আয় প্রতি মাসে সব সময় ১০০ কোটি ডলারের বেশি থাকলেও গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তা নেমে আসে ৯৫ কোটিতে।
এ বছরের জানুয়ারিতে রেমিটেন্স আবার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে তা কমেছে ১২ শতাংশেরও বেশি। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাব অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দিয়েছিল ২০১৩ সালে। আগের বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও ওই বছর রেমিটেন্স কমে যায়। ২০১৩ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, প্রবাসী আয় কমার কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ আগে থেকেই তৎপর। তবে বাস্তবতা হলো, রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয় কমছে। মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য মাধ্যমে হুন্ডিতে রেমিটেন্স আসছে। অনেকে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে প্রকাশ্যে হুন্ডি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব বন্ধের উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত জুলাইয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া সহ অন্যান্য কারণে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স আসার পরিমাণ ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ হুন্ডি বা মানি লন্ডারিং কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসার্চ গ্রুপ কাজ করছিল বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে দুই-তিন মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হওয়ার আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি কার্যক্রম রেমিটেন্স কমার অন্যতম কারণ। হুন্ডির অপব্যবহার রোধে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের সীমা কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৭১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এ সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৮৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। সেই হিসাবে রেমিটেন্স আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। আগের বছরের চেয়ে গত বছর রেমিটেন্স কমেছিল ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৩ সালেও প্রবাসীরা তার আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন।
আগে যে ১০টি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসতো, তার মধ্যে ৮টি দেশ থেকেই কম এসেছে। রেমিটেন্স আসা শীর্ষ ১০ দেশ হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান, কাতার, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও সিঙ্গাপুর। এদের মধ্যে শুধু ইতালি ও কাতার থেকে আসা রেমিটেন্স কমে যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top