সকল মেনু

এবার নড়াইলের সুলতান স্বর্ণ পদক পাচ্ছেন গুণী চিত্রশিল্পী হাশেম খান

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:  বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের নামে প্রবর্তিত ‘সুলতান স্বর্ণ পদক ২০১৬’ পাচ্ছেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান (৭৪)। আগামি ২১ জানুয়ারি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গুণী শিল্পী হাশেম খানকে সুলতান পদক প্রদান করা হবে। সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বিষয়টি নিশ্চিত করে। উল্লেখ্য,জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান তার প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘যে কোনো প্রাপ্তি মানুষকে আনন্দ দেয়। এ আনন্দ ছাড়া আর কি বলতে পারি। সুলতান এমন একজন শিল্পী, তাকে সম্মানিত করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই সম্মানিত হচ্ছি। সুলতান অবশ্যই এ দেশের ব্যতিক্রমীধর্মী শিল্পী এবং বৈরী পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তিনি শিল্পচর্চা করে গেছেন। এটা আমাদের তরুণদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। সুলতানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্নধারা। সুলতান যেমন নিজকে আবিষ্কার করেছেন, সেই ভাবেই বাংলাদেশের চিত্রকলার জগতে সুলতানের যে বলিষ্ঠ পদচারণা; সেটাও আমাদের সম্পদ বলে মনে করি। আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্য ও ছবির ভিত্তিতে জানা যায় হাশেম খান ১৯৪২ সালের ১৬ এপ্রিল (৩ বৈশাখ) চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগে ১৯৬৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অলংকরণের প্রধান শিল্পী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে একুশে পদক এবং ২০১১ স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি দেশ এবং বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য ১৬বার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০০৭ সালে বাংলা একাডেমি তকে সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত করে। তিনবার অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। মৃৎশিল্পে বিশেষ স্কলার অর্জন করেছেন। জাপানে পুন্তক চিত্রণে স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন তিনি। হাশেম খান একজন সুলেখকও। শিল্পকলা বিষয়ক বইসহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২০টি। এদিকে, ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন মূল্যমানের ছয়টি ডাকটিকিট উদ্বোধন করেন। তার মধ্যে হাশেম খানের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভিত্তিক চারটি ডাকটিকিট রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কার্যকরী বোর্ডের সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। হাশেম খানের পুরো নাম মো: আবুল হাশেম খান।

 

তার স্ত্রী পারভীন হাশেম। মেয়ে কনক খান ও ছেলে শান্তনু খান। হাশেম খান ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পাশ করে ভর্তি হন তৎকালীন গভর্ণমেন্ট আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৬১ সালে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশ-বিদেশে তার বেশ কয়েকটি চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনের অন্যতম দিকপাল তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান এই শিল্পী রঙ-তুলিতেই ফুটিয়ে তুলেছেন বহমান সময়। রেখেছেন সৃজনশীলতার অনন্য স্বাক্ষর। এদিকে, রোববার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে সুলতান মঞ্চ চত্বরে সাতদিনব্যাপী মেলা শুরু হচ্ছে। তবে, আগামিকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বিষয়টি নিশ্চিত করে আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান সুলতান পদক’ প্রবর্তন করা হয়। মেলা শেষ ২১ জানুয়ারি হবে। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নড়াইলের ‘সুলতান মঞ্চ’ চত্বরে সপ্তাহব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় সুলতানের কর্মময় জীবনের ওপর আলোচনা ছাড়াও প্রতিদিন গ্রামীণ খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় স্টলে স্টলে বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সুলতান মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১০ আগস্ট শিল্পীর জন্মজয়ন্তী হলেও কয়েক বছর যাবত শীতকালে সুলতান মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সুলতান অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জন্মভূমি নড়াইলে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে এসএম সুলতান ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’, ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে ‘বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ লাভ করেন। এছাড়া ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন। চিত্রশিল্পে খ্যাতি তার (সুলতান) বিশ্বজোড়া। ২০০১ সালে অধ্যাপক কাইউম চৌধুরীকে পদক প্রদানের মধ্য দিয়ে ‘সুলতান আগামি ২১ জানুয়ারি মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গুণী শিল্পী হাশেম খানকে সুলতান পদক প্রদান করা হবে। সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বিষয়টি নিশ্চিত করে আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় পদক’ প্রবর্তন করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top