সকল মেনু

নড়াইলে সেতুর অভাবে পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষের দূর্ভোগ

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: একটি সেতুর অভাবে নড়াইলের পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামবাসীর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। জেলা শহরের সাথে উত্তর লোহাগড়াবাসীর সরাসরি যোগাযোগের প্রধান অন্তরায় এখন ব্রাহ্মণডাঙ্গা পয়েন্টে নবগঙ্গা নদী। দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজ নির্মাণের দাবিতে ভুক্তভোগীরা নদীর তীরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু তারপরও ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ না নেওয়ায় জীবনের ঝুকি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পারাপার হয়ে থাকে। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্য,ছবির ভিত্তিতে জানা যায় নড়াইল-লাহুড়িয়া ভায়া চালিতাতলা-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নবগঙ্গা নদী। ব্রাহ্মণডাঙ্গা পয়েন্টে স্বাধীনতার পর থেকে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে রূপলাভ করেনি। উত্তর লোহাগড়ার লাহুড়িয়া, শালনগর, নোয়াগ্রাম, জয়পুর ও নলদী ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামবাসীর জেলা শহরে সংক্ষিপ্ত সময়ে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির একমাত্র প্রতিবন্ধকতা শুধুমাত্র একটি সেতু। নড়াইল সদর উপজেলার সাথে লোহাগড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলবাসীর দুরত্ব শুধুমাত্র এই সেতুটির কারনে। কৃষিপণ্য সহ অন্যান্য জিনিসপত্র পারাপার এবং মানুষের পারাপারে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয় এখানে। রবিবার (১৫ জানুয়ারী) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারের কোল ঘেসে বয়ে  চলছে এই নদীটি। নদীর দুপাড়ে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় শতাধিক মানুষ। ঘাটে অপেক্ষা করা দুজনের মাথায় রয়েছে চাউলের বস্তা, কয়েক জনের হাতে রয়েছে বাজারের থলে, স্কুল পড়–য়া কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুল ব্যাগ ঘাড়ে করে দাড়িয়ে আছে, ৬টি মটরসাইকেলর উপর বসে আছে চালকরা, আর অনেকেই আছে খালি হাতে।  নৌকা তীরে ভিড়তে দেরি দেখে দাড়িয়ে না থেকে অনেকে ঘাটে বসে একটু বিশ্রামও নিয়ে নিচ্ছে এই ফাকে। সবার চোখ নৌকার দিকে। নদীর দুপাড়ে রয়েছে ২টি ও মাঝখানে  একটি নৌকা। তিনটি নৌকাই ছোট। একটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জনের বেশি মানুষ পার হতে পারবেনা। মোট মিলে তিনটি ছোট নৌকায় প্রতিদিন পার হয় হাজার হাজার মানুষ। ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারের ব্যাবসায়ী মুক্ত শেখ বলেন, নদীর পানি থেকে পাড় প্রায় ৪০ ফুট উচু । বছরের বার মাস ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ থাকে, নৌকা থেকে বিভিন্ন মালামাল উঠানামা করাতে খুব ঝামেলা হয়। বৃষ্টির সময় ঘাট খুব পিচ্ছিল হওয়ায় ৩ মাস এই ঘাট দিয়ে কোন মটসসাইকেল পার করা যায়না। এখনও প্রতিনিয়ত এই ঘাটে মটরসাইকেল নৌকায় উঠানো নামানোর সময় পড়ে যাওয়ার ঝুকি থাকে। অনেক সময় মটরসাইকেল পড়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সকরারী কর্মচারী বলেন, তিনি প্রতিদিন এই ঘাট পার হয়ে নড়াইল  শহরে অফিস করতে যান।  আর সেই জন্য তাকে প্রতিদিন বাড়ি থেকে কম পক্ষে এক ঘন্টা আগে বের হতে হয়। তিনি আরও বলেন অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে মাঝে মধ্যে রাত হয়ে যায়। তখন নদীতে নৌকা পাওয়া যায়না। মাঝে মধ্যে তিনি নৌকার মাঝিকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে নদী পার হন। ভুক্তভোগীরা জানান,  নদীর  এক পাড়ে (পশ্চিম পাড়ে) নড়াইল সদর উপজেলা অপর পাড়ে (পূর্ব পাড়ে) লোহাগড়া উপজেলার সীমানা। একটি নদীই যেন দুটি উপজেলার বাসিন্দাদের আলাদা করে রেখেছে।  ঘাটটি পার হলেই ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজার। এই বাজারকে কেন্দ্র করে এলাকার  শত শত মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ব্রীজ না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্য সময় মত বাজারে আনতে পারছেনা, সঠিক দাম থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। ঘাট থেকে এক কিঃ মিঃ দুরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগর  সেখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর,  বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ। দুর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীরা নূর মোহাম্মদ নগরে আসে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরসহ নুর  মোহাম্মদের  স্মৃতি বিজড়িত  বিভিন্ন জিনিস দেখার জন্য। এসকল দর্শনার্থীদের এখানে আসার এক মাত্র প্রতিবন্ধকতা এই নদী পারাপার হওয়া। এই নদী পার হয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়সহ জেলা শহরে কলেজে যাতায়াত করে। অনেক সময় ঝড়-বাদলে খেয়াডুবি, কচুড়িপানায় পারাপারে প্রতিবন্ধকা সৃষ্টিসহ নানা কারনে ঝুকিপূর্ণভাবে পারাপার হতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। পারাপারে দেরি হওয়ায় শিক্ষকদেরও বকুনি খেতে হয় শিক্ষার্থীদের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি’র) নির্বাহী প্রকৌশলী জানালেন, গুরুত্বপুর্ণ এই সড়কের নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা জরুরী। ইতিপূর্বে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এটি নির্মাণ হয়নি। আগামীতে যাতে ব্রীজটি নির্মাণ করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে বলে জানালেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোতালেব বিশ্বাস। জনগুরুত্বপূর্ণ নবগঙ্গা নদীর ব্রাহ্মণডাঙ্গা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে শতাধিক গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে এমন প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top