সকল মেনু

ছাত্রলীগের সত্তরের যাত্রা সংগ্রাম ও গৌরবের

ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগ

হটনিউজ ডেস্ক:  দীর্ঘ-সংগ্রাম ও  আন্দোলনের পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুধবার (৪ জানুয়ারি) পা রাখছে সত্তরে।  ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বাংলাদেশের স্বাধীকার আন্দোলনের সহযাত্রী এই সংগঠনটির জন্ম।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত—দীর্ঘ সাত দশকে  আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে গৌরবময় স্থান করে নিয়েছে  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণপ্রিয় এই সংগঠনটি। শুরুতে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ নামে জন্ম নিলেও পাকিস্তান আমলে সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া। দেশ স্বাধীনের পর নাম হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ সংগঠনের সুচনালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদ ছিলেন আহবায়ক। এছাড়া ১৪ সদস্যের একটি কমিটি ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দীর্ঘ এ পথ চলায় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে-পরে অধিকার আদয়ের বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্রলীগ ভূমিকা রেখেছে বার বার। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় ছাত্রলীগ। ৬৬-এর ছয় দফার পক্ষে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছে ছাত্রলীগ। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে থেকেছে অগ্রভাগে। ১৯৭১ সালেও মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে অবদান রেখেছে সংগঠনটি।

সর্বশেষ নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ। ছাত্র স্বার্থ রক্ষায়ও এ সংগঠনের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। দাবি আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সংগঠনটির অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিয়েছে তবে ৯০-এর দশকের পরে কাদা লাগতে শুরু করে সংগঠনটির গায়ে। কিছু গ্লানি ছাত্রলীগের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করতে থাকে। যার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত আছে। নব্বইয়ের দশকের পরে এসে ছাত্রলীগের নেতাদের ঘাড়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মারামারি-হানাহানি, দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এমনকি খুনের মামলার অভিযোগও উঠতে থাকে।  নব্বইয়ের শেষের দিক থেকে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে। এ ধরনের ঘটনায় সমালোচনায় ফেলেছে খোদ আওয়ামী লীগকে। ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে—এমন অভিযোগও বিভিন্ন সময়ে উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকের পরে এসে ছাত্রলীগের গায়ে কিছু কালিমা এসেছে। সামগ্রিকভাবে বিচার করলে নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ করে আগামী দিনে ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার সাচ্চা সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।’

ছাত্রলীগের ৭০ বছরে পা রাখার এ দিনটি উৎসবমুখর করতে এবার নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। এসব ছবিতে ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো তুলে ধরার চেষ্টা রয়েছে। আছে বই উৎসবের চিত্র, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়।

রোকেয়া হল সংলগ্ন দেয়ালে আঁকা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। অন্য ছবিগুলোতে আছে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান আর ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভঅপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবার দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ছাত্রলীগের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।’

বুধবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হবে ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কাটা হবে কেক, পরে সকাল ১০টার দিকে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে হবে রক্তদান কর্মসূচি। আর ৬ জানুয়ারি বিকালে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ ও পরে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে ছাত্রলীগ।

এছাড়া ৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কলাভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানিয়ে সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ আরও বলেন, ‘এ জন্য সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মীদের কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।’ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন সফল করতে মোট নয়টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। সেসব কমিটি প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ। এর ১৭ হাজার নেতাকর্মী কেবল মুক্তিযুদ্ধেই আত্মাহুতি দিয়েছেন। ছাত্রলীগ সবসময় অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনেও দাঁড়াবে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top