সকল মেনু

রামনাবাদপাড়ে হাহাকার

kalapara-01 (29-07-13) 02মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া, ৩০ জুলাই:পানিবন্দী তিন হাজার কৃষক পরিবারে আশ্রয় হারানোর শঙ্কা তিন বেলা খাবার জোটাতে পারছে না শত শত পরিবার অন্যত্র চলে যাচ্ছে বহু পরিবার

জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত প্রভাবে সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ায় রামনাবাদপাড়ের তিন হাজার পরিবারে আশ্রয় হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এছাড়া অন্তত দুই হাজার একর জমি অনাবাদী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আশ্রয়হীন হওয়ার পাশাপাশি এসব পরিবারে এখন খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে নিরাপদ পানির তীব্র সঙ্কট। এদের নিরাপদে বসবাস ও জমি চাষাবাদ করতে জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে রক্ষা করত বেড়িবাঁধ। কিন্তু ওই অবলম্বন তাদের এখন নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। রামনাবাদ নদীগর্ভে অন্তত তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে এখন ভাসছে সেখানকার ১২ গ্রাম। কাঁচা মাটির ভিটিতে নির্মিত ঘরগুলো পানিতে ডুবে থাকার কারণে এখন ধসে পড়ছে। ফলে বাড়িঘর হারানোর শঙ্কা জেগেছে এসব মানুষের মধ্যে। ইতোপুর্বে পুর্ণিমা-অমাস্যায় জলোচ্ছ্বাস হতো। কিন্তু এখন প্রতি জোয়ারেই ভাসছে রামনাবাদ পাড়ের এসব মানুষ। এদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। হাইলা কামলার কাজ নেই। মাছ ধরতে পারছে না। জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ রয়েছে অন্তত পক্ষকাল। ঘরে যেসব পরিবারের ধানচাল রক্ষিত ছিল তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেন দিশাহারা হয়ে পড়েছে তিন হাজার কৃষক পরিবার। চরম দুরাবস্থায় পড়েছে এই অসহায় মানুষগুলো। জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে গত তিন দিনের টানা প্রবল বর্ষণে আরেকদফা বিপর্যয় নেমে এসেছে। মানুষ বাড়িঘর ডুবে গেলে উচু জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিবে তাও পারছে না। অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা চলছে নৌকার মাধ্যমে। কবে নাগাদ বেড়িবাঁধ মেরামত কিংবা বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে তা খোঁদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়াস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সফিউদ্দিন আমাদেরকে জানাতে পারেন নি। রামনাবাদ পাড়ের ইউপি সদস্য মজিবর রহমান প্যাদা জানান, শুধুমাত্র চারিপাড়া গ্রামের আড়াই ’শ পরিবার আশ্রয় হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে চলছে নানামুখি সমস্যা। খাবার ও ব্যবহারের পানি নেই। কাজকর্ম বন্ধ। একবেলা খাবার জোটলেও আরেকবেলা উপোস।

আনছার হাওলাদার জানালেন, ছয়জনের সংসারে এখন তিনবেলা খাবার জোটাতে পারছেন না। নিজেসহ উপার্জোনক্ষম সন্তানদের নিয়ে এখন বেকার হয়ে আছেন। একই অবস্থা স্বপন হাওলাদারের পাঁচ জনের সংসারে। গ্রামটির মন্নান হাওলাদার, ছালাম হাওলাদার, মোশাররফ সরদার, মন্টুসরদারের ভিটির উপরে ১০দিন ধরে হাটু সমান পানি। ঘরের ভিটি ধুয়ে ধসে পড়ছে। কয়দিন গেলে ঘর ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে বলে এরা জানালেন। এমনদশা অন্তত দেড় ’শ পরিবারের। ইতোমধ্যে গ্রামের জলিল সরদার তার স্ত্রী-সন্তান, হাঁস-মুরগি নিয়ে শ্বশুর বাড়ি চান্দুপাড়ায় চলে গেছেন। করিম হাওলাদার চলে গেছেন বালিয়াতলী ইউনিয়নের বালিয়াতলী গ্রামে জামাইয়ের বাড়ি। মোটকথা মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। এভাবে চারিপাড়া, নেওয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, গাজীরখাল, মুন্সীপাড়া, ছোট পাঁচনং, বড়পাঁচ নং, কলাউপাড়া, ধঞ্জুপাড়া, পশুরবুনিয়া গ্রামের হাজার হাজার পরিবারে এখন বসতবাড়ি হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদের এক তৃতীয়াংশ স্থায়ীভাবে আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় চরমভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মোট কথা লালুয়ার ১২ টি গ্রামে জনজীবনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিন হাজার পরিবারে মানবেতর জীবন-যাপন চলছে। এসব মানুষকে এখন ত্রাণ সহায়তা দেয়া জরুরি প্রয়োজন। এব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top