সকল মেনু

শেষ দিনেও ট্রেনের টিকিট অনেকে পাননি

22082012123709pmAfter_Eidul10Nov2011মো:লিপু মুন্সী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজটোয়েন্টিফোরবিডি.কম,ঢাকা: ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট বিক্রির শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার। মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৮ আগস্টের আপ অগ্রিম ট্রেনের টিকিট। শেষ সুযোগটাকে কাজে লাগানোর জন্য কমলাপুর রেল স্টেশনে সাধারণ যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ৭ আগস্ট থেকে পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় তাই ভিড়ও বেড়ে যায় এদিন।

কমলাপুর থেকে এর আগে অনেকে কয়েকবার হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন টিকিট না পেয়ে। শেষ সুযোগটাকে ষোল আনা কাজে লাগানোর জন্য তারা সোমবার বিকেলে ‍গিয়ে লাইনে দাঁড়ান। কিন্ত অনেকেরই শেষ আশা টুকুও নিভে গেছে দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট না পেয়ে।

তাই টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে কমলাপুর ছাড়েন। অপেক্ষার প্রহর যাদের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর শুধু তারাই পেয়েছেন ট্রেনের টিকিট নামক সোনার হরিণ। তবে এদের মধ্যেও অনেকে পছন্দের টিকিট পাননি। কাউন্টার মাস্টার যা দিয়েছে তাই খুশি মনে গ্রহণ করে কমলাপুর ছেড়েছেন।

প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে ৫ নম্বর কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করেছেন চট্রগ্রামগামী যাত্রী ফরহাদ মির্জা। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সোমবার ইফতার সেরেছেন কমলাপুর স্টেশনেই। শেষ দিনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পাবেন-এমন আশা ছিল তার।
komola-pur
মঙ্গলবার সাড়ে এগারটায় মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়- ‘কমলাপুর ৫ নাম্বার কাউন্টারে অপেক্ষমান যাত্রীদের জানানো যাইতেছে যে, ঢাকা-চট্রগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’

এই ঘোষণা শোনার পর পর টিকিটি পাবার আশা ছেদ পড়ে ফরহাদ মির্জার। সঙ্গে সঙ্গে কমলাপুরে ১৬ ঘণ্টা অপেক্ষার ফল শূন্যতে পরিণত হয়।

এসময় ফরহাদ মির্জা হটনিউজকে বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) থেকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট পেলাম না, এর চেয়ে আর কি কষ্ট হতে পারে। আমার মনে হয় টিকিট এমনভাবে বিক্রি হচ্ছে যা আর চোখে দেখতি পাচ্ছি না।’

কিছুক্ষণ পর মাইকে আরও একটি ঘোষণা আসে, ‘সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেসের সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’

ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িযে থাকার পরও টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন সিলেটের যাত্রীরা।

এসি বা প্রথম শ্রেণির টিকিট কাটতে এসে অনেকে পেয়েছেন সাধারণ শ্রেণির টিকিট। পোশাক শ্রমিক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। তিনি যাবেন ঈশ্বরদী। সোমবার বিকেল ৫টা থেকে ১৩ নম্বর কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছেন। উদ্দেশ্য একটাই চিত্রা ট্রেনের একটি টিকিট। ৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিট পেয়ে তিনি যে মহাখুশি তার মুখের অবয়বই তা বলে দেয়।

এসময় তিনি হটনিউজকে বলেন, ‘৭ তারিখ থেকে গার্মেন্ট বন্ধ। এর পর ব্যক্তিগত কিছু কাজ শেষ করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেব। টিকিট পেয়ে আমার খুব খুশি লাগছে।’

পোশাক শ্রমিক মাসুমা আক্তার। কিশোরগঞ্জের অগ্রিম একটি টিকিট পাওয়ার জন্য এর আগে কমলাপুর থেকে হতাশ হয়ে গেছেন। রাত ৪টা থেকে প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। এমন সময় মাইকে ঘোষণা আসে ঢাকা-কিশোরগামী এগারসিন্ধুর প্রভাতির সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে।
komola-pur
মাসুমা ক্ষোভের সঙ্গে হটনিউজকে বলেন, ‘আশা ছিল শেষ দিন টিকিট পাব। ৭ তারিখে গার্মেন্টে কাজ করে ৮ তারিখে গ্রামের বাড়ি যাব। সেই জন্যে রাত ৪টা থেকে কাউন্টারের সামনে। কিন্ত কাউন্টার থেকে হঠাৎ বলে দেয়া হল যে টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’

মাসুমার মতো শেষ দিনে অনেকেই হতাশ হয়ে কমলাপুর ছেড়েছেন। বেলা ১২টা বাজার আগেই চট্রগ্রাম ও সিলেট রুটের অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে যায়। উত্তরবঙ্গ ও খুলনা রুটের টিকিটও শেষ হয়ে যায়।

বেলা ১২টার সময় বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-রাজশাহীগামী ট্রেনের টিকিটের ১০ নম্বর কাউন্টার। মাইকে বার বার ঘোষণা আসে- ধূমকেতু এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস ও সিল্ক সিটি এক্সপ্রেসের সকল টিকিট শেষ হয়ে গেছে।

একইভাবে টিকিট না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ৯ নম্বর কাউন্টার। এই কাউন্টার থেকে ঢাকা-দিনাজপুর রুটের নীলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, পার্ব্বতীপুর ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছিল। কয়েক শতাধিক সাধারণ যাত্রী টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। তবে ঢাকা-রংপুরগামী ‍লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেসের কিছু শোভন শ্রেণির টিকিট তখনও বিক্রি হচ্ছিল।

এই কাউন্টারে দায়িত্বরত সুব্রত হালদার হটনিউজকে জানান, সব টিকিট শেষ হয়ে গেছে। তবে রংপুর এক্সপ্রেসের ৮৩টি ও ‍লালমনি এক্সপ্রেসের ১৩০ শোভন শ্রেণির টিকিট আছে। এসি, কেবিন ও শোভন চেয়ার শেষ হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার খায়রুল বশীর বলেন, ‘অধিকাংশ টিকিট শেষ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমরা প্রতিদিন ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি করে থাকি কিন্ত চাহিদা দ্বিগুণ। সীমিত চাহিদা দিয়ে সবার চাহিদা পুরণ করা সম্ভব নয়।’

কোটা প্রসঙ্গে তিনি জানান, রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মাত্র ৫ ভাগ বরাদ্দ। বাকি টিকিট আমরা সাধারণ যাত্রীদের জন্য বিক্রি করে থাকি। এর মধ্যে ৫ ভাগ কোটা ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ। এর চেয়ে কোটা কমানো তো সম্ভব নয়। ২৫ ভাগ টিকিট অনলাইন ও মোবাইলে দিয়ে থাকি, এটাও সাধারণ জনগণের জন্য।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন রুটে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। যাত্রীদের বাড়তি চাপ কমানোর জন্য ২০ ভাগ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়া নতুন ট্রেন হাওর এক্সপ্রেসের অগ্রিম টিকিট আমরা বিক্রি শুরু করেছি মঙ্গলবার থেকে। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা ঈদে কিছুটা সুবিধা পাবেন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top