হটনিউজ২৪বিডি.কম : ভারত ও বাংলাদেশের দুটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হাত মিলিয়ে এই প্রথম শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির এক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবেই ১৬ই ডিসেম্বর থেকে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে দুদিনব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উৎসব – এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুষ্ঠিত হবে এর পাল্টা রবীন্দ্রভারতী উৎসব।
দুপক্ষের উদ্যোক্তারাই বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যখন কানেক্টিভিটি-র নানা নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে, তখন এই উদ্যোগ দুদেশের মধ্যে শিক্ষাগত বা সাংস্কৃতিক কানেক্টিভিটির পথকে প্রশস্ত করবে।
ভারতের বিভিন্ন নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পশ্চিমী দেশগুলোর নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বা বিনিময় কর্মসূচির কথা প্রায়শই শোনা যায় – যার আওতায় দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্ররা পরস্পরের কাছে যান, কিংবা অনেক ক্ষেত্রে গবেষণাও হয় যৌথভাবে।
কিন্তু ঘরের পাশে বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই ধরনের উদ্যোগ এতদিন নেওয়া হয়নি।
তবে এবারে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সেই অভাব পূর্ণ করছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে তারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে আগামিকাল থেকে পুরোদস্তুর একটা উৎসবেরই আয়োজন করতে চলেছেন।
রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলছিলেন, “প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও যদি আমরা চিন্তার আদানপ্রদানের অনুরূপ উদ্যোগ নিই, তাহলে আমার ধারণা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি ঘটবে। ১৬ ডিসেম্বরে আমাদের জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উৎসবের মধ্যে দিয়ে আমরা সেই প্রক্রিয়ারই সূচনা করছি।”
সঙ্গীত-নৃত্য-শিল্পকলা চর্চার জন্য রবীন্দ্রভারতীর বহুদিনের সুনাম, ফলে এবারের উৎসবে সেই শাখাগুলোও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান জোড়াসাঁকোতে যে উৎসব শুরু হচ্ছে, তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করবেন ওই প্রতিষ্ঠানে নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ার ও বাংলাদেশের সুপরিচিত সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “এটা প্রথমবার হচ্ছে যে দুদেশের দুটো নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে মিলে অ্যাকাডেমিক ও কালচারাল ইন্টারঅ্যাকশনের পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে। আর উৎসবের দিনটাও খুব সুন্দর নির্বাচন করা হয়েছে – গোটা বাংলাদেশ যখন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করবে, আমরা তখন কলকাতায় আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরব।”
“এটা সত্যি যে আমাদের দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের জায়গাটা এখনও তৈরি হয়নি। আমাদের ছেলেমেয়েরা ভারতে শিখতে আসে, কিন্তু পারফর্ম করতে আসে না। ফলে আমাদের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে যদি একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম শুরু হয়, আমার বিশ্বাস তা দারুণ উপযোগী হবে এবং দুদেশের সম্পর্ক উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখবে,” বলছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
তার এই কথার রেশ ধরে সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরীও বলছেন, বিদ্যুৎ সংযোগ, অবাধ যান-চলাচল, আন্তর্জাতিক ট্রেন-বাস-জাহাজ পরিষেবার মতো কানেক্টিভিটি-র নানা প্রকল্পকে সম্প্রতি ঢাকা ও দিল্লি খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে – এবং এই পটভূমিতে দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বা শিক্ষাগত কানেক্টিভিটির গুরুত্বও মোটেই কম নয়।
রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের কথায়, “কানেক্টিভিটি বলতেই আমরা যাতায়াত, যোগাযোগ বা ট্রানজিটের মতো ইস্যুর কথা ভাবি। তবে সে ক্ষেত্রেও কিন্তু দুদেশের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে একটা মানসিক বা রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা কাজ করে – যা অতিক্রম করার জন্য এই ধরনের সাংস্কৃতিক বা শিক্ষাগত বিনিময় খুবই কাজে আসতে পারে।”
কলকাতার বুকে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উৎসব সেই লক্ষ্যেই এক অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন।
পরস্পরকে আরও নিবিড়ভাবে চেনাজানার সেই বৃত্তটা সম্পূর্ণ হবে আগামী বছরের গোড়ায় – যখন বাংলাদেশে ভাষা দিবসের মাস ফেব্রুয়ারি কিংবা স্বাধীনতার মাস মার্চেই ঢাকা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আয়োজিত হবে রবীন্দ্রভারতী উৎসব।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।