সকল মেনু

সুপ্রীমকোর্টে বাতিল ,নাটোরে না মঞ্জুর

মোঃ মাহফুজ আলম মুনী, নাটোর থেকে :নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্থায়ী জামিন সুপ্রীম কোর্ট বাতিল করায় এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে নাটোরের চীফ জুডিশয়াল আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করায় আটক হওয়ার প্রায় আট মাসেও জামিন না হওয়ায় নাটোরে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সোমবার বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হকের ফুল বেঞ্চ দুলুকে দেয়া হাইকোর্টের স্থায়ী জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ মতো ৩০ জুলাই নাটোরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ধার্য্য তারিখ থাকায় নতুনভাবে জামিন আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক মোঃ লিয়াকত আলী মোল্লা জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে আগামী ১৯ আগষ্ট মামলার নতুন তারিখ ধার্য্য করেন। জামিন না হওয়ায় তার পরিবার ও দলের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। নাটোর আদালতে দুলুর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন শওকত, অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার টগর, অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদের ও অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম দুলু সহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। এর আগে উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পর হঠাৎ করে তা স্থগীত হওয়ার খবরে দুলুর মা হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। দুলুর স্ত্রী ও নাটোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি অভিযোগ করেছেন, দুলুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে মামলা দিয়ে তাকে আটক রাখা হয়েছে। হাইকোর্ট বার বার তাকে জামিন দিলেও সরকার তা স্থগীত করে দেওয়ায় তিনি মুক্ত হতে পারছেন না। তারা বলেন, বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচন থেকে দুলুকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এসব হয়রানী করছে। মঙ্গলবার হাজিরার সময় হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থক দুলুকে এক নজর দেখার জন্য আদালত চত্বরে ভীড় জমায়। ভীড় ঠেকাতে পুলিশকে এ সময় রীতিমত হিমসিম খেতে দেখা যায়। আদালত থেকে দুলুকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার পর পরই শহরের বড়গাছা মোড় থেকে জেলা যুবদল সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম আফতাব ও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রবিউর রহমান টিটনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে স্টেশন রেলগেট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় লোকজন ও দুলুর পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর শনিবার রাতে জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার অফিস থেকে টি টুয়েনটি ক্রিকেট খেলায় শেষ মুহুর্তে বাংলাদেশ জিতে যাওয়া দেখে রাত পৌনে এগারোটার দিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের বড় ছেলে সোহেল সরকারের নেতৃত্বে এক সাথে প্রায় পঁচিশ থেকে তিরিশটি মোটর সাইকেলে ৬০ থেকে ৭০ জন যুবক কোন ধরনের শ্লোগান ছাড়াই নাটোর ষ্টেশনের দিকে রওনা হয়। ওই মোটর সাইকেল বহরটি স্টেশন বাজার ঘুরে এসে রাত এগারোটার দিকে দুলুর বাড়িতে হামলা চালায়। দু’পক্ষের গুলি বিনিময়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মোঃ ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন এবং শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক পলাশ চন্দ্র কর্মকার গুলিবিদ্ধ হন। রাতেই পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ যুবদল কর্মী শামীম এবং দুলুর বাড়ীর কেয়ারটেকার আহামুদুল্লাহ ও আসলাম আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটক হওয়ার আগের মুহুর্তে দুলু জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে একটি সাদা হাইএস মাইক্রোবাস ও ২৫ থেকে ৩০টি মোটর সাইকেলে করে আসা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। সেই মূহুর্তে তিনি বাড়ীর তিন তলায় থাকার কারণে গুলিবিদ্ধ হননি। ঘটনার রাতে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা প্রশমিত করতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং বিএনপির কয়েকজনকে ধরার কথা পুলিশ কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানালেও রাত প্রায় একটার দিকে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের চাপে পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ যুবদল কর্মী শামীম এবং দুলুর বাড়ীর কেয়ারটেকার আহামুদুল্লাহ ও আসলাম আলীকে আটক করে নিয়ে যায়। এঘটনায় আজ পর্যন্ত পুলিশ যুবলীগ বা ছাত্রলীগের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও আটক করা হয়নি। এদিকে শহর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক পলাশ চন্দ্র কর্মকার গুলিবিদ্ধ হলে রোববার রাতে তাকে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে ওই রাতেই তাকে সুচিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনদিন পর ১১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ছয়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পলাশ মারা যায়। পলাশ গুলিবিদ্ধ হওয়ার এ ঘটনায় পরদিন ৯ ডিসেম্বর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের খুব ঘণিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও নাটোর জেলা শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মূর্তজা বাবলু বাদী হয়ে দুলু এবং রাতে আটক চারজনসহ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের মোট ১৬ নেতাকর্মীকে আসামী করে নাটোর থানায় মামলা করেন। পরে ১১ ডিসেম্বর পলাশ মারা যাওয়ায় থানায় দায়ের করা আগের মামলাটি হত্যা মামলায় পরিণত করা হয়। যুবলীগ নেতা পলাশ চন্দ্র কর্মকার হত্যার পর পলাশের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অথবা যুবলীগের কেউ বাদী না হয়ে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মূর্তজা বাবলু বাদী হওয়ার বিষয়টি সে সময় জনমনে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দেয়। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর রাত ১টার দিকে দুলু আটক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুলু নাটোর কারাগারে আটক রয়েছেন। মাঝে গত ১৭ জানুয়ারী ভোররাতে তাকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। কয়েকদিন পর নাটোরের আদালতে দুলুকে হাজির করা হলে আদালত জেল সুপারকে কোর্টে ডেকে এনে অসুস্থ্য দুলুকে আদালতের অনুমতি ছাড়া আর অন্য কোন জেলে না পাঠানোর নির্দেশ দেন। নাটোর জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী দুলুকে দিনাজপুর জেলা কারাগার থেকে নাটোর জেলা কারাগারে আনার পর থেকে নাটোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রফিকুল ইসলামসহ চিকিৎসকদের একটি মেডিক্যাল টিম নিয়মিতভাবে দুলুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। নাটোরের আদালত জামিন না দিয়ে বার বারই দুলুকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দুলুকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। চলতি বছরের ২ জানুয়ারী নাটোর জেলা দায়রা জজ আদালত দুলুর জামিন আবেদন খারিজ করলে দুলু হাই কোর্টে রিট করেন। হাই কোর্ট কেন দুলুকে নিয়মিত জামিন দেয়া হবে না তার কারণ জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি ১৩ মে রুল জরি করে তিন মাসের অস্থায়ী জামিন দেন। এই রুলের শুনানী শেষে দুলুকে ১৬ জুন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্থায়ী জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন। রুহুল কুদ্দুস দুলুর পক্ষে শুনানী করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অ্যাভোকেট আহসানুল করিম এবং সরকার পক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নী জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির। হাইকোর্টের স্থায়ী জামিনের আদেশও সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ আগামী ১৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে। মামলা জটের কারণে ১৮ জুলাইয়ের শুনানী ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী শেষে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হকের ফুল বেঞ্চ দুলুর দেয়া হাইকোর্টের স্থায়ী জামিন বাতিল করে নিম্ন আদালতে আবেদন করতে নির্দেশ দেন। দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জনপ্রিয় উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবুকে সকাল ১১টায় প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে বনপাড়া বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কে এম জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। মামলার প্রধান আসামীসহ প্রায় সকলে এ ঘটনার জন্য জেল না খেটেই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে সংবর্ধনা নিয়েছে আর মিথ্যা সাজানো মামলায় দুলুকে প্রায় আট মাস ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top