সকল মেনু

বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল : গর্ভাচেভ

3875309b12aae698d8477a90c4f35cf5-5850d3e55fea5আন্তর্জাতিক ॥ হটনিউজ২৪বিডি.কম : রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৫ প্রজাতন্ত্রের পরাশক্তি ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক-এর পতনকে ‘অপরাধ’ এবং ‘অভ্যুত্থান’ আখ্যা দিয়েছেন ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ। দাবি করেছেন, তার অজান্তে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটানো হয়েছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে পরিচিত এই জোট ১৯৯১ সালে ভেঙ্গে পড়ার সময় গর্ভাচেভ ছিলেন অবিভক্ত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট। গুরুত্বপূর্ণ সেই অধ্যায় সম্পর্কে মস্কোতে বিবিসির সংবাদদাতা স্টিভেন রোজেনবার্গের সাথে কথা বলেন তিনি।

স্নায়ুযুদ্ধ শেষ করার জন্য সে সময় পশ্চিমাদের বাহবা কুড়িয়েছিলেন গর্ভাচেভ। তাকে দেওয়া হয়েছিল নোবেল শান্তি পুরস্কার। তবে বিবিসি প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ২৫ বছর আগের সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ঘটনায় তাকে অনুশোচনায় ভুগতে দেখা যায়।

মার্কিন সাম্রাজ্যের বাজার-অর্থনীতিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে সংরক্ষণশীল অর্থনীতিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল সোভিয়েত উইনিয়ন। পরাশক্তি হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল জুড়ে তারা স্নায়ুযুদ্ধ লড়ে গেছে মার্কিন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। তবে ১৯৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবর শুরু হয় নাটকীয় এক ঘোষণার মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত হয়: ‘শুভ সন্ধ্যা। শুনছেন সংবাদ। উইএসএস আর-এর অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে।’

এর কিছুদিন আগে, রাশিয়া-বেলারুশ আর ইউক্রেনের নেতৃত্ব সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত করে স্বাধীন রাষ্ট্রের কমলওয়েলথ গড়ে তোলার ব্যাপারে বৈঠক করে। পরে তখন পর্যন্ত জোটে থাকা বাকি আট প্রজাতন্ত্রও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্ত করার পক্ষে একমত হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গর্ভাচেভ সোভিয়েত ঐক্য ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। তবে জোটের অন্যসব প্রজাতন্ত্র একত্রিত হয়ে রাশিয়ার বিরোধিতা করেছিল।

ইতিহাসে চোখ ফেরালে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের আগস্টে গর্ভাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেন রুশ হার্ডলাইনাররা। গর্ভাচেভের সংস্কার কর্মসূচির বিপরীতে তারা রুশ সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে ছিলেন। সংস্কার-পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়নে ফেরার লক্ষ্যে আগস্টে তারা গর্ভাচেভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায়। এরপর থেকে কার্যত অচল হয়ে পড়ে সোভিয়েত-ব্যবস্থা। ওই মাসেরই শেষের দিকে গর্ভাচেভ পদত্যাগ করেন।

বিবিসির প্রতিবেদককে গর্ভাচেভ বলেন, ‘আমাদের অজান্তেই একটি বিশ্বাসঘাতকতা সম্পন্ন হয়েছিল। একেবারেই আমার অজান্তে।’ গর্ভাচেভ বিবিসির প্রতিবেদককে বলেন, ‘কেবলমাত্র একটি সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে তারা একটা পুরো বাড়ি পুড়িয়েছিল।’ কেবল ক্ষমতার জন্য। তাদের পক্ষে গণতান্ত্রিক পন্থায় তাদের পক্ষে ক্ষমতা অর্জন করাটা সম্ভব ছিল না। আর সে কারণেই তারা অপরাধ সংঘটিত করে। এটা স্পষ্টতই ছিল একটা অভ্যুত্থান’।

রাশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রধর একটি দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিপজ্জনক রক্তপাত এড়াতে ২৫ বছর আগে তিনি ক্ষমতা ছেড়েছিলেন। গর্ভাচেভ গার্ডিয়ানের প্রতিবেদককে বলেন, “সেটি ছিল অভ্যুত্থান… বিশ্বাসঘাতকতা… অপরাধ। দেশকে গৃহযুদ্ধের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমাদের মত একটি পারমানবিক অস্ত্রধারী দেশে ক্ষমতার লড়াই, বিভেদ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে আপনি তা কল্পনাও করতে পারবেন না…” গর্ভাচেভ বলেন, ‘কেবলমাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য আমি সেটা হতে দিতে চাইনি। তাই পদত্যাগের ঘটনাটিকে আমি আমার বিজয় হিসেবেই দেখি।’

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ঐক্য ভেঙে যায়। শেষ হয় সুদীর্ঘদিনের স্নায়ুযুদ্ধ। আর এরই বিপরীতে প্রতিষ্ঠিত হয় মার্কিন সাম্রাজ্যের একাধিপত্বের দিন।
সূত্র: বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউজ উইক, রয়টার্স

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top