সকল মেনু

সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে প্রথম আগুন দিয়েছিল পুলিশ!

1aa093181eda5d212af114d22124efe5-584e52822f6c0হটনিউজ২৪বিডি.কম : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে ৬ নভেম্বর আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন। সাঁওতালদের ছোড়া তীরে আহত হন ৯ পুলিশ। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতালদের বসতি উচ্ছেদ করে। এ সময় তাদের বসত-ঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরাই এসব বসতিতে আগুন দিয়েছিল বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন সাঁওতালরা। সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এ ধরনের একটি ভিডিও এসেছে। এতে পুলিশ সদস্যদেরেএসব বাড়িঘরে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হটনিউজ২৪বিডির কাছে আসা ৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের ভিডিও’র প্রথমে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা রাস্তা ধরে সাঁওতালদের বসতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ২০ সেকেন্ড পর দেখা যায় সাঁওতালদের বাড়ির সামনে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ছেন। পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেখা গেছে।

এ ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সেখানে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা সাঁওতালদের ঘরে লাথি মারতে থাকে। এসময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য সাঁওতালদের কুঁড়েঘরের খড় হাত দিয়ে টেনে ছিড়তে থাকেন। ভিডিও’র ৩৫ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্য একটি কুঁড়েঘরের খড়ে লাইটার জ্বেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু, লাইটার দিয়ে আগুন লাগাতে পুরোপুর সফল না হওয়ায় তাকে সাহায্য করতে গোলাপী টি-শার্ট পরা আরেক ব্যক্তি এগিয়ে যান এবং দেশলাই জ্বালিয়ে সাঁওতালদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। এরপরই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে ঘরে। পরে সিভিল পোশাক পরা একজন গিয়ে আগুনটি ভালোভাবে ধরেছে কিনা তার তদারকি করেন। এরপর মুহূর্তে পুরোঘরটিতে আগুন লেগে যায়। নৃশংস পুলিশ সদস্যরা এরপর সেখান থেকে আগুন নিয়ে সাঁওতালদের অন্যান্য ঘরেও আগুন লাগিয়ে দেন। ভিডিও ফুটেজের ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, আগুন লাগানো ঘরগুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছেন পুলিশ সদস্যরা। ১ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, অনেকগুলো ঘর আগুনে পুড়ছে, গবাদি পশুগুলো চিৎকার করে ছুটছে।

ভিডিওতে ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, সাঁওতালদের বসতিতে আগুন লাগলেও তা নেভানোর চেষ্টা করছেন না কোনও পুলিশ সদস্য। তাদের সামনেই ঘরগুলো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৩ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, আগুনের দাউদাউ করে পুড়ছে অনেকগুলো ঘর।

সাঁওতালদের উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত সরকার প্রশ্ন করা হলে তিনি হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘গোবিগঞ্জের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। সেদিন থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, র‌্যাব সবাই ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। আগুন নেভোনোর জন্য দমকল বাহিনীকে খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আসার আগেই সব পুড়ে যায়।’

পুলিশ সদস্যরা আগুন দিয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সুব্রত সরকার বলেন, ‘পুলিশ আগুন দিয়েছে- এর কোনও সত্যতা পাওয়া যায়নি।’

এ প্রসঙ্গে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন হটনিউজ২৪বিডিকে বলেন, ‘পুলিশ এ ঘটনার জন্য দায়ী। সাঁওতালদের পক্ষ থেকে মামলা হলেও পুলিশ কাউকেই আটক করেনি। বরং এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। নিরীহ লোকজনকে ধরছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই।’

সংঘর্ষের ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কল্যাণ চক্রবর্তী বাদী হয়ে ৬ নভেম্বরের রাতেই ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে সাড়ে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ চারজন সাঁওতালকে গ্রেফতার করেছে। তারা জামিনে এখন মুক্ত আছেন।

অপরদিকে, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদ ঘটনায় ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমু নামে এক আদিবাসী বাদী হয়ে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা করেন। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সাঁওতালদের দাবি, তারা স্বপন নামে কাউকে চেনে না।

এছাড়া ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ থোমাস হেমরম বাদী হয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এটি এখনও তদন্তাধীন আছে।

এই ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দেন গাইবান্ধার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদ। ২৮ নভেম্বর গাইবান্ধার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাখিল করা ২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শিল্প সচিবকে দেওয়া একটি চিঠি। এতে বলা হয়, সাঁওতালদের দাবি আর রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা প্রমাণ করে গাইবান্ধার সাঁওতালরা এখনও ৭০০ একর জমির মালিক। কারণ, আখ চাষের জন্য সাঁওতালদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও শর্ত ভঙ্গ করে ওই জমি লিজ দেওয়া হয় এবং আখ চাষ না করে তাতে অন্য ফসল চাষ করা হয়।

হামলার পর থেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে শত শত সাঁওতাল পরিবার। ওই পরিবারগুলোর কেউ কেউ খামারের পাশে সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর গির্জার সামনের মাঠে কলাগাছের পাতা দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট কুটুরি বানিয়ে, আবার কেউ কেউ ত্রাণে পাওয়া তাঁবু টানিয়ে কোনও রকমে ঠাঁই নিয়ে আছেন। অনেকে থাকছেন পরিত্যক্ত স্কুলঘরে খড় বিছিয়ে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রকম ঘটনায় যারা যুক্ত ছিলেন তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top