সকল মেনু

কলকাতায় এফবিআই, জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় গুলশান হামলা?

b2ff9bb83cd35d393d6cb693ba2dfcfd-57ac6567b28cfহটনিউজ২৪বিডি.কম : কোনও জঙ্গি হামলা হয়নি। কোনও ভয়ঙ্কর বোমা বিস্ফোরণও হয়নি। তবু ডিসেম্বরে শীতের এক বিকেলে হঠাৎ করেই কলকাতায় এফবিআই!

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এর (এফবিআই) সাত-সাত জন অফিসার গত বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন। তারপর সেখান থেকে সোজা সল্টলেকে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ’র পশ্চিমবঙ্গ শাখা অফিসে যান তারা। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি সন্দেহে ধরা পড়া বীরভূম জেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসাকে। তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বৃহস্পতিবার ঘণ্টা তিনেক ও শুক্রবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা কথা বলেন।

এ বছরের ৪ জুলাই বর্ধমান স্টেশন থেকে মুসাকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। পরে এনিয়ে তদন্তে নামে এনআইএ। মুসার সঙ্গে আগস্ট মাসেই কথা বলে যান ঢাকা থেকে আসা বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটি দল। ঢাকার গোয়েন্দারাও মুসার সঙ্গে কথা বলেন এনআইএ হেফাজতে।
এর আগে কলকাতায় দু’বার এফবিআইয়ের পদার্পণ ঘটেছিল। প্রথম বার ১৯৯৫-এর ডিসেম্বরে। যখন পুরুলিয়া জেলায় রাতের অন্ধকারে একটি বিমান থেকে অনেকগুলো একে ফর্টি সেভেন রাইফেল ও রকেট লঞ্চার আর প্রচুর পরিমাণে কার্তুজ ফেলা হয়েছিল। তার পর ২০০১-এর জানুয়ারিতে, কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলার প্রধান চক্রী আফতাব আনসারি দুবাইয়ে ধরা পড়ার পর।

কিন্তু সেই তুলনায় বীরভূম জেলার লাভপুর এলাকার যুবক মুসা তো আপাত দৃষ্টিতে নগণ্য। সে কোথাও জঙ্গি হামলা চালায়নি, মানুষ হত্যাও করেনি। শুধু সে সবের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যার বা যাদের ইন্ধনে মুসা ওই পরিকল্পনায় শামিল হয়েছিল, তাদের খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান, তাদের সঙ্গে মুসার যোগাযোগের মাধ্যম এবং মানুষ হত্যার ষড়যন্ত্রকে ছাপিয়ে এক বৃহত্তর পরিকল্পনার মধ্যেই এফবিআইয়ের এত জন অফিসারের কলকাতায় আগমনের সূত্র নিহিত আছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশের অভিমত।

ব্যাপারটা কী রকম?
গোয়েন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, আইএসের ভাবধারায় মুসাকে দীক্ষিত করার পিছনে আছে বাংলাদেশের এক নাগরিক, যাকে মুসা চিনত আবু সুলেমান নামে। এই আবু সুলেমান আবার গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত। তার আসল নাম রিপন অথবা খালিদ। বাংলাদেশে নব্য জেএমবি-র অন্যতম চাঁই ওই যুবক আইএসের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিমত। এখনও তাকে ধরা যায়নি।

ভারতীয় গোয়েন্দারা জানান, মুসাকে আবু সুলেমান নির্দেশ দিয়েছিল, তাদের চূড়া‌ন্ত লক্ষ্য, সাদা চামড়ার মার্কিন নাগরিকদের হত্যা করা। যেখানেই মার্কিন নাগরিকদের হাতের সামনে পাওয়া যাবে, সেখানে তাদের গলা কেটে হত্যা করতে হবে। মুসার প্রতি সুলেমানের নির্দেশ ছিল, যেখানে মার্কিনিরা নিজেদের নিরাপদ ভাববে, নিশ্চিন্ত হয়ে হাঁটাচলা করবে, ঠিক সেই জায়গাতেই তাদের শেষ করে দিতে হবে। এই সুলেমান আইএসের এক জন বড় পাণ্ডা বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি জানাচ্ছে, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস এখন ক্রমশ কোণঠাসা, একটার পর একটা এলাকা তাদের হাতছাড়া হচ্ছে। এই অবস্থায় বিশ্ব জুড়ে মার্কিন নাগরিকদের উপর হামলা চালানো আইএসের যুদ্ধের অন্যতম কৌশল। পশ্চিমবঙ্গের মুসা ওই কৌশলের অন্যতম সহযোগী। রাজ্যে মুসা ছাড়া আর কাউকে বা কাদের এই ষড়যন্ত্রে শামিল করা হয়েছে, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ই মেলের মাধ্যমে আবু সুলেমান বাংলাদেশের আর কাউকে এই দায়িত্ব দিয়েছে কি না, মুসা নিজে এই বার্তা ছড়িয়েছে কি না, সে সবই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের কাছে জরুরি বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের অভিমত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top