সকল মেনু

ট্রাম্প-প্রশাসনে স্ত্রী-নিপীড়কদের হিড়িক!

bbb263062ba3da54b90092752cab87cf-584bfb11e3380আন্তর্জাতিক ॥ হটনিউজ২৪বিডি.কম : ধারাবাহিক যৌননিপীড়নের অভিযোগ আর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত যৌন মন্তব্য সত্ত্বেও নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার আগে নিজের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার থেকে আর কেউ নারীদের বেশি সম্মান করেন না’। তবে কথা আর কাজের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট করে বৃহস্পতিবার তিনি নিজ প্রশাসনে আবারও শ্রমিকস্বার্থবিরোধী ব্যবসায়ী অ্যান্ড্রু পুজডারকে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন, যিনি নারী নিপীড়নে অভিযুক্ত। ট্রাম্প প্রশাসনে নিয়োগপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা এবং মুখ্য কৌশলপ্রণয়নকারী স্টিভ ব্যাননও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। স্ত্রী-নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে স্বয়ং ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও। সবমিলে ট্রাম্প প্রশাসনে যেন স্ত্রী-নির্যাতকদের হিড়িক।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্ত্রিসভায় বৃহস্পতিবার যুক্ত হয় আরেক বিতর্কিত নাম। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি বৃদ্ধির বিরোধিতায় সরব ব্যবসায়ী অ্যান্ড্রু পুজডারকে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন ট্রাম্প। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সি কে ই রেস্টুরেন্টস-এর প্রধান নির্বাহী পুজডার প্রায়ই দাবি করে থাকেন যে ন্যুনতম মজুরির হার বেশি হলে তা কাজের ক্ষেত্র কমাবে, চাকরি নষ্ট করবে। ৪০ লাখেরও বেশি মার্কিন শ্রমিকের ওভারটাইম-এর টাকা বাড়ানোর লক্ষ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আরোপ করা একটি নতুন নিয়মেরও সমালোচনা করেন তিনি। ফাস্টফুড কর্মীদের মজুরি দ্বিগুণ করে ন্যুনতম ১৫ ডলার নির্ধারণ করার জন্য দেশব্যাপী যে ক্যাম্পেইন চলছে তাও প্রত্যাখ্যান করেছেন অ্যান্ড্রু পুজডার। শনিবার হাফিংটন পোস্টের এক খবরে বলা হয়েছে, এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নিপীড়ন করার অভিযোগও রয়েছে।

হাফিংটন পোস্টের খবর অনুযায়ী, মার্কিন সাপ্তাহিক পত্রিকা রিভারফ্রন্ট টাইমস-এ প্রথমবারের মতো পুজডারের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে নিপীড়নের অভিযোগ তোলা হয়। রিভারফ্রন্ট টাইমস-এ প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ৮০’র দশকে তিনি স্ত্রীকে নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। দুই দফায় পুলিশি হস্তক্ষেপ হয়েছিলো সেই ঘটনায়।

১৯৮৯ সালে পুজডারের সঙ্গে তার স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর বিষয়টি জনসম্মুখে আসে। ওই বছরের ২৬ জুলাই রিভারফ্রন্ট পত্রিকা এ নিয়ে প্রচ্ছদ-প্রতিবেদন তৈরী করে। প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, স্ত্রী হেনিংয়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের নথিতে পুজডারের বিরুদ্ধে শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। হেনিং অভিযোগ করেন, পুজডার তাকে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন এবং পুলিশকে ফোন করতে গেলে টেলিফোন ছিনিয়ে নিয়েছেন। পুজডার অবশ্য তার স্ত্রীর তোলা এইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। তিনি তখন রিভারফ্রন্টকে বলেছিলেন, ‘কোনও ধরনের শারীরিক নিপীড়নে আমি জড়িত নই।’

পরে অবশ্য পুজডার একরকম স্বীকার করেন যে নিজেই নিজেকে আঘাত করতে যাওয়ায় স্ত্রীর কাধে আঘাত করে তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। পুজডারের কাছে পাঠানো সাম্প্রতিক এক ইমেইলে নিপীড়নের অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন তার স্ত্রী। রিভারফ্রন্ট টাইমস এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করার কিছু সময়ের মধ্যে এক মুখপাত্রের মাধ্যমে সেই ইমেইলের অনুলিপি রিভারফ্রন্ট অফিসে পাঠান পুজডার।

৩০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখ দিয়ে লেখা সেই ইমেইলে দেখা যায়, পুজডার এবং তার সাবেক স্ত্রী হেনিং (যিনি আবারও বিয়ে করেছেন) তাদের সন্তান নিয়ে একত্রে সময় কাটিয়েছেন এবং হেনিং পুজডারকে অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দিয়েছেন। তবে ৮৯ এ হেনিং-এর আইনজীবী নিপীড়নের মেডিকেল প্রমাণ হাজিরে সক্ষম বলে জানিয়েছিলেন।

একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা এবং মুখ্য কৌশলপ্রণয়নকারী স্টিভ ব্যাননের বিরুদ্ধে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এক পুলিশ প্রতিবেদনের সূত্রে ব্যননের স্ত্রীকে নিপীড়নের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে। সেই পুলিশ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের বর্ষবরণের দিনে নাই্নওয়ানওয়ান নম্বরে (জরুরি আইনি সহায়তায় ব্যবহৃত মার্কিন টেলিফোন নম্বর) ফোন করে সহায়তা চান। পুলিশ ব্যাননের বাড়িতে হাজির হলে তার স্ত্রী ম্যারি লুইস অভিযোগ করেন, ব্যাননের কাছে বাজার করার টাকা চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে স্ত্রীর ঘাড় ও কব্জিতে আঘাত করেন তিনি। পুলিশকে ফোন করতে গেলে তা কেড়ে নেয় ছুঁড়ে ফেলে দেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক খবর অনুযায়ী, পুলিশ ম্যারি লুইসের শরীরে সেই ক্ষতচিহ্ন আবিষ্কার করে এবং ছবিও তুলে রাখে। ব্যাননের স্ত্রী লুইস অভিযোগ করেন, আদালতে গেলে তাকেই দোষী সাব্যস্ত করার ব্যবস্থা করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন ব্যানন।

কেবল পুজডার কিংবা ব্যাননই নন, খোদ নবনির্বাচিত প্রেুসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও রয়েছে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ। প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্পকে নিপীড়ন করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ট্রাম্প পরে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। চেক বংশোদ্ভূত ইভানা ও ট্রাম্প ১৯৭৭ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।বিবাহবিচ্ছেদের কাগজে ইভানা ট্রাম্প তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে অবশ্য ইভানা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন।

১৯৯২ সালে ট্রাম্প ও ইভানার বিচ্ছেদের সময় এই জঘন্য অভিযোগ উঠে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চ্যানেল-৪-এর একটি তথ্যচিত্রের বরাত দিয়ে সে সময় সান পত্রিকার খবরে বলা হয়, ধর্ষণের বিষয়টি প্রকাশ হয় ১৯৮৯ সালে। ট্রাম্পের আত্মজীবনীকার হ্যারি হার্ট চ্যানেল-৪ কে এই চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন।

হারি হার্ট ট্রাম্পের আত্মজীবনিতে উল্লেখ করেন, এক রাতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প ঘরে এসে ইভানার চুল ধরে টানাটানি শুরু করেন। এদিনের পরই ইভানা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে। ইভানা তার জবানবন্দিতে শপথ করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প আমাকে ধর্ষণ করেছে।’ হ্যারি আরও বলেন, এ ঘটনায় ইভানা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। সেখানে তিনি সারারাত কাঁদেন। ইভানার বরাত দিয়ে হ্যারি বলেন, পরদিন সকালে ইভানা তার ঘরে এসে ট্রাম্পকে বসে থাকতে দেখেন। একটু পরই ট্রাম্প ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

ট্রাম্প এই দাবি অস্বীকার করেছেন বারবার। তিন সন্তানের মা ইভানা (৬৬) ১৯৯৩ সালে অবশ্য দাবি করেন, তিনি ব্যাপকার্থে ওই ঘটনাকে ধর্ষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করেছেন, আক্ষরিক অর্থে নয়। আর গত বছর ট্রাম্পের আইনজীবী বলেছিলেন, ট্রাম্প কাউকে ধর্ষণ করেননি। কেউ তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে না বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্পের আইনজীবী। তিনি আরও দাবি করেন, ইভানা আবেগ-প্রবণ হয়ে এটাকে ধর্ষণ বলেছেন। তবে সাবেক সংবাদ উপস্থাপিকা সেলিনা স্কট দাবি করে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ডকুমেন্টরি তৈরির পর ইভানার পেছনে ছায়ার মতো লেগে থাকতেন। তার মতে, ইভানাকে মানসিকভাবে আঘাত করার জন্যই এমনটা করতেন। শুধু তাই নয়, ইভানাকে অপমান করে ১৩টি চিঠিও দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top