সকল মেনু

গাইবান্ধার সাঁওতালরা এখনও ৭০০ একর জমির মালিক!

d1bc96397b552fad60a194ab5fbe401e-584906293e0cbহটনিউজ২৪বিডি.কম : সাঁওতালদের দাবি আর রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা প্রমাণ করে গাইবান্ধার সাঁওতালরা এখনও ৭০০ একর জমির মালিক। কারণ, আখ চাষের জন্য সাঁওতালদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও শর্ত ভঙ্গ করে ওই জমি লিজ দেওয়া হয় এবং আখ চাষ না করে তাতে অন্য ফসল চাষ করা হয়। পরবর্তীতে লিজ বাতিল করলেও আখ চাষ করেনি চিনিকল। এই জমির পরিমাণ ৫০০ থেকে ৭০০ একর।

গত ২৮ নভেম্বর গাইবান্ধার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দাখিল করা ২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে শিল্প সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে এসব তথ্য রয়েছে।

গত ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের শর্ত সাপেক্ষে অধিগ্রহণ করা জমিতে পুলিশ, চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দেন গাইবান্ধার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সামাদ।

সাঁওতালদের দাবি, ১৯৬২ সালে পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের অধিগ্রহণ করার শর্ত অনুযায়ী এই জমি তারা এখন ফেরত পাবেন। শুধু ৭০০ একরই নয়, শর্তভঙ্গ করে আখ চাষ ছাড়া অন্য ফসল করা সব জমির মালিকও তারা।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণ করে স্কুল, অফিস, বাসাবাড়ি, গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে সুগার মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। অথচ পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছিল আখ চাষের জন্য। সেই জমির আবাদযোগ্য অংশ লিজ দিয়ে অন্য ফসল করা হয়েছে। লিজ বাতিল করেও আখ চাষ করা হয়নি। তাই ভূমিহীন মানুষগুলো তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে মাথা গোজার চেষ্টাতো করবেই।’

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৬২ সালের পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের অধিগ্রহণ করা এক হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমি ফেরত চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ওয়ারিশরা। এই প্রেক্ষাপটে ২০১৫ সালের ২১ জুন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ব্যাখ্যা চান রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে। এরপর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)কে।

রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ব্যাখ্যায় জানান, অধিগ্রহণ করা এক হাজার ৮৪২ দশমিক ৩০ একর জমির মধ্যে ফলজ বাগান, বনজ গাছের বাগান, রাস্তা, পুকুর, স্কুল, অফিস, বাসাবাড়ি, গ্যারেজ ইত্যাদি বাদে এক হাজার ৫০২ একর জমি আবাদযোগ্য। চক্রাকারে মোট জমির অর্ধেকে আখ চাষ এবং বাকি অর্ধেকে অন্য ফসল করার কৃষিনীতি বলবত আছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৫০০ থেকে ৭০০ একর জমিতে আখ চাষের পরিকল্পনা আছে।

যদিও ওই জমিতে ২০১৬ সালেও আখ রোপন করতে পানেনি চিনিকল।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৪ সালে চিনিকল লে-অফ ঘোষণা করে সরকার। ২০০৬ সালে আবার চালু করা হয় মিলটি। লোকসান পুশিয়ে নিতে ৮০ শতাংশ জমিতে আখ চাষের শর্ত দিয়ে লিজ দেওয়া হয় ৭০০ থেকে ৮০০ একর জমি।

২০১৫ সালের ২১ জুন জেলা প্রশাসককে দেওয়া গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব -এর গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৮ মে রংপুর চিনিকলের জমিতে কেন আখ ছাড়া ধান, তামাক ও রবি শস্য আবাদ করা হচ্ছে মর্মে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার ব্যাখায় বলেন, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্টে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবাদযোগ্য এক হাজার ৫০২ একর জমিতে আখ এবং অন্যান্য ফসল করার জন্য লিজ দেওয়া হয়। লিজের পর আখ এবং অন্যান্য ফসল আবাদ করা হয়।

২০১৫ সালের ২৪ জুন শিল্প সচিবকে পাঠানো গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের পত্রের আলোকে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘অধিগ্রহণ করা জমি কোনোভাবে লিজ দেওয়া যাবে না, সাঁওতালদের ফেরত দিতে হবে’ এই দাবিতে গাইবন্ধা জেলা সদর এবং বাগদা খামার এলাকায় মিছিল-মিটিং ও মানববন্ধন করে আসছেন সাঁওতালরা। এর আশু সমাধান হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। জমিতে তারা (সাঁওতালরা) ঘরবাড়ি তৈরি করছে, তাও জানানো হয় শিল্প সচিবকে।

এরপর গত ৬ নভেম্বর ভূমি দখল নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। চিনিকলের পক্ষ থেকে বলা হয়, আখ রোপনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। ততদিনে সাঁওতালরা ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করে ওই জমির একটি অংশে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top