সকল মেনু

আইনত রিজাল ব্যাংক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য: আইনমন্ত্রী

1f1fb807ef2e202279e96a4f9eb8c794-583e6c92c5c13হটনিউজ২৪বিডি.কম : নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে হদিস না মেলা ৬৬ মিলিয়ন ডলার রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি)-কেই পরিশোধ করতে হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ। রিজাল ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানালেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আরসিবিসি যে এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে খু্ব করে সংশ্লিষ্ট সে ব্যাপারটি স্পষ্ট। আর তাই, আরসিবিসিকে ৬৬ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের জন্য আহ্বান জানান তিনি। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) ফিলিপাইনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের এক প্রেস ব্রিফিং-এ আনিসুল হক এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে সিএনএন ফিলিপাইন। একইদিন আরসিবিসির এক বিবৃতিতে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছিল।

হ্যাকারদের একটি গ্রুপ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি করার চেষ্টা করে। তবে পুরোপুরি সফল না হলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয় তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোড ব্যবহার করেই এই অর্থ চুরি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম এবং সুইফট কোড কন্ট্রোলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৩০টি পেমেন্ট অ্যাডভাইজ পাঠায় ফিলিপাইনের স্থানীয় ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের জন্য। এর মধ্যে ৪টি অ্যাডভাইজ অনার করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। যার মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার সফলভাবে পাচার করতে সক্ষম হয় হ্যাকাররা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আরসিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, ৫০০ ডলার করে জমা দিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ২০১৫ সালের ১৫ মে কয়েকটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে আর কোনও লেনদেন হয়নি। ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ চুরি করে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে স্থানান্তর করে। অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংম হিসেবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পেরত পেয়েছে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার নিয়ে আলোচনা করতে বর্তমানে ফিলিপাইনে আছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার ম্যানিলায় এ দলটি একটি সংবাদ সম্মেলন করে।

ওই সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে আরসিবিসির যে বেশ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা তাদের দায় স্বীকার করেছে। সেখানে ৬৬ মিলিয়ন ডলার আছে এবং আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে এসেছি।’

আনিসুল হক আরও বলেন, ‘আমি আশা করি আরসিবিসি পুরো দায় নেবে। ওই অর্থগুলো আরসিবিসির মাধ্যমেই এসেছে। পরে ওই অর্থের কি হয়েছে না হয়েছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’

সিনেট শুনানির সময় রিজাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জো তানের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেন আনিসুল হক। তিনি বলেন, সিনেট শুনানিতে লরেঞ্জো তান বলেছিলেন, রিজাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যাংক ওই অর্থ পরিশোধ করবে। আর সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হলেও আরসিবিসিকে অর্থ পরিশোধ করা উচিত।

একইদিন রিজাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির জন্য বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। মঙ্গলবার ব্যাংকটির আইনজীবী থিয়া দায়েপ এ অভিযোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন (আরসিবিসি,রিজাল ব্যাংক) কোনও ক্ষতিপূরণ দেবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি।

রিজাল ব্যাংকের আইনজীবী রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িতদের সামনে আনতে স্বচ্ছভাবে তদন্ত ও প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান।

থিয়া দায়েপ বলেন, ‘চুরির ঘটনার জন্য আরসিবিসি দায়ী নয়। আমাদের বিরুদ্ধে তাদের কোনও মামলাও নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলাই এর জন্য দায়ী।’

ফিলিপাইনের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়, ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরসিবিসি ব্যাংকের কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে। এ খবরের প্রেক্ষিতে রিজাল ব্যাংকের আইনজীবী এক বিবৃতিতে ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার বিষয়টি জানান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সুভঙ্কর সাহা রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিউ ইয়র্ক ফেডের পক্ষ রিজাল ব্যাংকে অর্থ আটকে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু রিজাল ব্যাংক তাতে সাড়া দেয়নি। তাছাড়া,নগদে এ অর্থ উত্তোলনও ছিলো অস্বাভাবিক। অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ। তাই পুরো ব্যাপারটাই প্রশ্নবিদ্ধ।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top