সকল মেনু

দাশিয়ারছড়ায় ভিজিডি কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ

de4b71b277877869b650cba5437521d6-5790919b053f6হটনিউজ২৪বিডি.কম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অন্তর্ভুক্ত সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় গত মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) ভারনাবল গ্রুপ ডেভলপমেন্ট (ভিজিডি)কার্ড বিতরণের উদ্বোধন করেন নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। উদ্বোধনের মাত্র তিনদিনের মধ্যে কার্ড বিতরণে নানা অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠেছে। কর্মসূচির আওতায় দ্বিগুণেরও বেশি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হলেও অনিয়ম ও চাঁদাবাজির কারণে এর সুবিধা পায়নি অনেক দুস্থ নারীরা। ধনী-গরীব বিবেচনা না করেই একই পরিবারের একাধিক নারীকে কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

শুধু তাই নয়, দাশিয়ারছড়ার নীলকমল নদীর ওপর কাঠের সাঁকো তৈরির নাম করে ভিজিডি কার্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে এ কর্মসূচির সফলতা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দাশিয়ারছড়ার আয়তন ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর। বিগত ২০১৫ সালের জুলাই মাসে দুদেশের সর্বশেষ যৌথ হেড কাউন্টিং অনুযায়ী পরিবার সংখ্যা ১ হাজার ৩৬৪টি। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন ৯৩১টি পরিবার। এরপরও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় এই বিলুপ্ত ছিটমহলের ২ হাজার ৯৫০টি পরিবারের দুস্থ নারীদের জন্য কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থ্যাৎ বিলুপ্ত ছিটমহলটির মোট পরিবারের দ্বিগুণেরও বেশি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬৯টি পরিবারের নারীদের কার্ড দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে একই পরিবারের একাধিক সদস্য কার্ড পেলেও অনেক দুস্থ নারীরা কার্ড পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন।

কার্ড বঞ্চিত দাশিয়ারছড়ার বানিয়াটারী গ্রামের সায়মা বেগম, আমিনা খাতুন, রাবেয়া খাতুন, আলেয়া বেওয়া এবং খরিয়াটারী গ্রামের জাবেদা বেওয়াসহ অনেক নারীরা জানান, অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় কোনও রকমে তাদের সংসার চলে। তারপরও তাদের ভিজিডি কার্ড দেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বটতলা এলাকার অধিবাসী শহিদুলের স্ত্রী জ্যোৎস্না এবং তার শাশুড়ি রহিমা বেগম একই বাড়িতে বাস করলেও দুজনই ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন।

এদিকে দাশিয়ারছড়ার পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলা নীলকমল নদীর ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ভিজিডি কার্ডধারী প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বালাটারী গ্রামের সুমিনা বেগম, বানিয়াটারী গ্রামের কলিমা খাতুন, ছকিলা বেওয়া ও হাবিবপুর গ্রামের আছমা খাতুন জানান, তারা ভিজিডি কার্ড পেয়েছেন কিন্তু কার্ড দেওয়ার সময় কাঠের সাঁকো তৈরির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে।

চাঁদা আদায়কারী বালাটারী গ্রামের আব্দুল হাকিম জানান, কাঠের সাঁকো নির্মাণের জন্য ভিজিডি কার্ডধারী প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০টাকা করে এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে।

দাশিয়ারছড়ার আলতাফ হোসেন, আব্দুল খালেক ও আনিছুর রহমানসহ মোট ১২ জন মিলে এই চাঁদা তুলেছেন। এরমধ্যে বিদ্যমান বাঁশের সাঁকোটি মেরামতে ৮ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। চাঁদা তোলার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও এবং তার স্ত্রী উপজেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতোর জানেন বলে জানিয়েছেন চাঁদা আদায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কোনও কমিটিতে নেই এমন ব্যক্তিদের দিয়ে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এই তালিকা দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা নারী বিষয়ক কর্মকর্তাকে একাধিবার অনুরোধ করা সত্বেও তারা কোনও উদ্যোগ নেননি। এছাড়া ৫০ টাকা করে চাঁদা তোলার বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান।
সদ্যবিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং দাশিয়ারছড়ার অধিবাসী গোলাম মোস্তফা জানান, কাঠের সাঁকো তৈরির জন্য চাঁদা তোলার বিষয়টি সত্য, তবে এর সঙ্গে ভিজিডি কার্ড বিতরণের কোনও সম্পর্ক নেই।

ফুলবাড়ী উপজেলা নারী ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো দাবি করেছেন, যেহেতু তালিকা তৈরির সময় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন ছিল-সেহেতু উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপজেলা নারী ও শিশু বিষযক দফতহরের ক্রেডিট সুপারভাইজার, ট্রেইনার, এলসিবিসিইয়ের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ও উপজেলা পরিষদ লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ানের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে যে চাঁদা তোলা হয়েছে তার সঙ্গে তাদের কর্মসূচির কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও জানান, বিধি অনুযায়ী সবাই কার্ড পাবেন। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। হেড কাউন্টিংয়ের সময়কার অনেক একান্নবর্তী পরিবার এখন ভেঙে যাওয়ায় পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া বিলুপ্ত এই ছিটমহলের অধিবাসীরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে কাঠের সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য যে চাঁদা তোলা হয়েছে তার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কোনও সম্পর্ক নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top