সকল মেনু

বদলে যাচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জি

untitled-abnews24_46089হটনিউজ২৪বিডি.কম : পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে। একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসের মূল বাংলা তারিখে ফিরে যেতে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এই পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি। ২০১৭ সালের সরকারি বর্ষপঞ্জিতেই পরিবর্তিত বাংলা তারিখ দেখা যাবে বলে জানা গেছে। এতে জাতীয় দিবসগুলোর ইংরেজি তারিখ ঠিক রেখে মূল বাংলা তারিখ সংযোজন করা হবে। এর ফলে বাংলা বিভিন্ন মাসের দিনের সংখ্যায়ও পরিবর্তন আসবে।

ইংরেজি সালের বঙ্গাব্দের দিন-তারিখের হিসাবের সমস্যা দূর করার জন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ নেতৃত্বে একটি বঙ্গাব্দ সংস্কার কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি ৪ বছর পরপর চৈত্র মাস ৩০ দিনের পরিবর্তে ৩১ দিনে গণনা করার পরামর্শ দেয়। ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ বাংলা বর্ষপঞ্জির পরিবর্তন আনা হয়। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল মনসুর মুহম্মদ আবু মুসাকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে পরিবর্তন আনা হয়। সে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম ৫ মাস অর্থাৎ বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস ৩১ দিন করে এবং বাকি ৭ মাস অর্থাৎ আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা শুরু হয়।

গ্রেগরীয় বা ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অধিবর্ষে (লিপইয়ার) যে বাংলা মাসের ফাল্গুন মাসে পড়বে, সেটি ৩১ দিনে গণনা করা হচ্ছে। ওই বছর থেকে গত ২২ বছর ধরে বাংলা একাডেমির প্রণীত বাংলা বর্ষপঞ্জি চলমান।

পরিবর্তিত ওই বাংলা বর্ষপঞ্জিতে জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো মূল বাংলা তারিখের সঙ্গে সাম্যঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। যেমন ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বাংলা তারিখ ছিল ৮ ফাল্গুন ও ১ পৌষ। কিন্তু পরিবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে তা যথাক্রমে ৯ ফাল্গুন ও ২ পৌষ হিসেবে পালন করা হয়।

এসব বৈষম্য দূর করতে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি একটি সভায় বসে। পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. অজয় রায়ের সভাপতিত্বে ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক আলী আসগর এবং কমিটির সদস্য সচিব ও একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জি।

পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেগুলো হচ্ছে- বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম ৬ মাস বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ৩১ দিন গণনা করা হবে। এ ছাড়া কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে। শুধুমাত্র ফাল্গুন মাস ২৯ দিনে গণনা করা হবে। তবে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে (লিপইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনে গণনা করা হবে। সংশোধনের ফলে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ থেকে প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বাংলা তারিখ হবে ৮ ফাল্গুন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের বাংলা তারিখ ১২ চৈত্র, ৮ মে রবীন্দ্রজয়ন্তী ২৫ বৈশাখ, ২৫ মে নজরুলজয়ন্তী ১১ জ্যৈষ্ঠ এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের বাংলা তারিখ হবে ১ পৌষ। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের ২০১৬ সালের দ্বিতীয় সভায় পঞ্জিকা সংস্কার কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়, যা ১৪২২-১৪২৩ বঙ্গাব্দের ইংরেজি ও বাংলা সমন্বিত বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত করার কথা ছিল। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সেটি ইংরেজি ২০১৭ সাল এবং ১৪২৩-১৪২৪ বঙ্গাব্দের সমন্বিত বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত করা হচ্ছে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘বিভিন্ন জাতীয় দিবসের মূল বাংলা তারিখ অনুযায়ী আমরা পালন করি না, যা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। সেই বিতর্ক দূর করতেই একাডেমির পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি বাংলা বর্ষপঞ্জির সংশোধন এনেছে।

সংশোধিত বর্ষপঞ্জি ছাপানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরা বাংলা একাডেমির ফাইল হাতে পেয়েছি। দ্রুতই ছাপানো শুরু হবে। বছর শেষের আগেই সাধারণ জনগণের হাতে তা তুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top