সকল মেনু

হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় না হিজড়াদের!

09852f404aeaed598fd06a25406bf3a5-583102488f23cহটনিউজ২৪বিডি.কম : ‘সরকার আমাদের তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এই স্বীকৃতিই কি সব কিছু? আর কিছুই কি দরকার নেই? কেবল স্বীকৃতি দিলেই হবে না, লেখাপড়া, বাসস্থান, চিকিৎসা, চাকরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।’ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হিজড়া ববি। ৫০ বছর বয়স্ক ববি বলেন, ‘হাসপাতালে গেলে আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। ডাক্তার, নার্স ও দারোয়ান সবাই ভিন্নচোখে তাকায়। লাঠি হাতে তাড়া করে। রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়।’

পুরনো ঢাকার শ্যামপুরের বরইতলা এলাকায় অবস্থিত হিজড়াদের ডেরায় (বাসস্থান) কথা হয় ববি, লারা,পাতাসহ কয়েকজন হিজড়ার সঙ্গে। তারা জানালেন, সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও হাসপাতালেই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয় না। ‍যদিও গত বছরের ২৯ এপ্রিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এক অনুষ্ঠানে হিজড়াদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ওই অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘একজন হিজড়াও আর বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নেবে। হিজড়ারা এ সমাজেরই অংশ। এদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্বও রাষ্ট্রেরই।’

ববি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সবার মতো আমরা চিকিৎসা পাই না। হাতে পায়ে ধইরা ডাক্তারদের দেখাইতে হয়।’

উদাহরণ দিয়ে ববি বলেন, ‘সম্প্রতি কিডনিতে পাথর হওয়ায় মেরিল (১৭) নামের এক হিজড়াকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতলে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তাকে রাখা হয়নি। এরপর ওই হিজড়াকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে, ডাক্তারদের হাতে পায়ে ধরে অপারেশন করানো হয়।’

আরেক লারা (২৫) বলেন, ‘সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে যায় আমার। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে, আমাকে নানাভাবে কটূক্তি করা হয়। সবাই বলে এখানে হিজড়াদের চিকিৎসা করা হয় না। পরে সেখান থেকে বাধ্য হয়েই ফেরত আসি।’

সরকারি হাসপাতালে ভাঙা হাতের চিকিৎসা করাতে পারেননি লারা
সরকারি হাসপাতালে ভাঙা হাতের চিকিৎসা করাতে পারেননি লারা
তিনি আরও বলেন, ‘আমিতো একজন মানুষ। হাসপাতালগুলোতে যদি একজন পাগলের চিকিৎসা হতে পারে, একজন অপরাধীর চিকিৎসা হতে পারে, তাহলে আমাদের কেন ফিরিয়ে দেওয়া হবে? মাটি ফুঁড়ে নয়, একজন মায়ের গর্ভ থেকেই আমাদের জন্ম হয়েছে। তাহলে এই রাষ্ট্রে কেন আমাদের অধিকার থাকবে না?’

হিজড়াদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। সংস্থাটির প্রোগ্রাম ম্যানেজার উম্মে ফারহানা জারিফ কান্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে সেনসেটাইজেশন বা অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম হওয়া খুব জরুরি। একজন চিকিৎসকের ধর্ম মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শুধুমাত্র জেন্ডার আইডেন্টিটির কারণে এসব মানুষগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তারা সেবা পাওয়ার বেলায় সুবিধাবঞ্চিতদের দলে পড়ে যাচ্ছেন। একটি লাইনে যদি একজন হিজড়া থাকেন, তাহলে তাকে দেখা হবে সবার শেষে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। আর সরাসরি কিভাবে অ্যাডভোকেসি লেভেলে কাজ করা যায়, সেবিষয়েও আমরা পরিকল্পনা করছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিষয়টি স্বীকার করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি অন রেকর্ডে আপনাকে বলবো, আমাদের কাছে কোনও রোগীর জেন্ডার আইডেন্টিটি কোনও বিষয় নয়।আমার কাছে তিনি একজন রোগী। কিন্তু অফ রেকর্ডে এবং খুবই সত্যি কথা হলো, আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। আমরাই তাদের রোগী বিবেচনা করি না। পালস দেখি না। প্রেসার মাপি না। কারণ, আমাদের মাঝেও একটা অচ্ছুত ভাব থাকেই।’

হিজড়াদের হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক খাজা আব্দুল গফুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ এ অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ, আমাদের কাছে রোগী মানে রোগীই। সে যে-ই হোক। চিকিৎসা সবার জন্যই।’

ডিএমসির কর্মচারীরা হিজড়াদের চিকিৎসা দেন না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনতো হওয়ার কথা না। আমাদের কাছে ধনী-গরীব, হিজড়া এগুলো বিবেচ্য নয়। এটি হাসপাতাল এবং এখানে সবার জন্যই চিকিৎসার দ্বার খোলা। তারপরও তারা যদি এ অভিযোগ করে, তবে বিষয়টি নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবো।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সরকার হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ট্রাফিক ‍পুলিশ পদে তাদের চাকরি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বর্তমানে দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নিয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। ২০১৩ সালে সমাজসেবা অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সারা দেশে হিজড়ার সংখ্যা ৯ হাজার ২৮৫ জন। যদিও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, এ সংখ্যা দেড় লাখের কাছাকাছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top